মহানগর ডেস্ক: আলোর উৎসবকে ঘিরে বাংলার প্রতিটি কোনায় উদযাপিত হয় কালীপুজো আর ঠিক সেই দিনই বাংলার প্রত্যন্ত গ্রামগুলিতে চলে লক্ষীর আরাধনা। আর এই লক্ষ্মীর আরাধনা ঘিরে যুগযুগ ধরে প্রচলিত রয়েছে কিছু সামাজিক প্রথা। কোন প্রশ্ন না রেখেই সেগুলো বেশ আড়ম্বরের সাথে পালন করে আসে গ্রামের মানুষজন। তেমনই একটি প্রথা দক্ষিণ ২৪ পরগনার উস্থি থানার অন্তর্গত বইচবেড়িয়া গ্রামের অলক্ষ্মী বিদায় অনুষ্ঠান। দীপাবলি অর্থাৎ কালীপুজোর সন্ধ্যায় মন্ত্র উচ্চারণের মাধ্যমে গৃহস্থের মঙ্গল কামনায় গৃহিণীরা অলক্ষিকে কোন পিটিয়ে বাড়ির বাইরে বের করে দিয়ে আসেন। আর বলতে থাকেন ঘরের লক্ষ্মী ঘরে আয় অলক্ষী বাইরে যা।
এদিন সকাল থেকেই এই গ্রামের প্রত্যেক বাড়িতেই চলে লক্ষ্মী আর অলক্ষী গড়ার কাজ। কেউ কেউ ঘামে মাখামাখি হয়ে চালের গুড়ি, কলা, আর প্রকৃতিক রঙ ব্যবহার (সিমপাতা, নীল অপরাজিতা, হলুদ গুঁড়ো ও সিঁদুর রঙ তরীতে ব্যবহৃত উপাদান) করে বানিয়ে ফেলেন লক্ষ্মী। আবার কেউ কেউ গোবর আর চুল দিয়ে লক্ষীর আদলে গড়ে তোলে অলক্ষী। তারপর সন্ধ্যায় চলে লক্ষ্মী পুজোর পর অলক্ষী বিদায়ের অনুষ্ঠান বলে জানালেন এই পাড়ার এক গৃহবধূ রুপালী সরদার।
অন্যদিকে, এই প্রথা পালনের কারণ স্বরূপ গ্রামের এক গৃহবধূ শৈবা সরদার জানান, ‘আমার বিয়ে হয়েছে আজ ৩০ বছর। শ্বশুরবাড়িতে এসেই শাশুড়িকে দেখেছি গৃহস্থের মঙ্গল কামনায় এই অলক্ষী বিদায় এবং লক্ষ্মীপূজো অনুষ্ঠান কালীপুজোর রাতে পালন করতে। ঠিক তেমনভাবেই আজও আমি এবং এ পাড়ার সমস্ত বাড়ির গৃহবধুরাই সন্ধ্যা হলেই চালের গুড়ি দিয়ে তৈরি লক্ষী, বাড়িতে কিংবা কোন মন্দিরে রেখে তারপরই গোবর দিয়ে তৈরি এই অলক্ষীকে কুলো পিটিয়ে বাড়ির বাইরে বিদায় করা হয়। ফিরে এসে ধুমধাম করে পূজিত হন লক্ষ্মী। এটি একটি সামাজিক প্রথা। আমরা মনে করি এতে বাড়ির মঙ্গল হয় তাই করে থাকি।’
এভাবেই বছরের পর বছর এই গ্রামে কালীপুজোর রাতে উদযাপিত হয় লক্ষ্মীপূজো এবং অলক্ষী বিদায় অনুষ্ঠান। আর গ্রামের গৃহবধুরা বেশ সারম্বরে যত্ন করে এই প্রথা মেনে আসছেন।