মহানগর ডেস্ক: বড়মা। এক নামেই তার পরিচিতি যথেষ্ট। সবার চোখে ভেসে ওঠে নৈহাটি স্টেশন থেকে পশ্চিমদিকে ঋষি অরবিন্দ রোড ধরে গঙ্গা লাগোয়া মন্দির। সেখানেই রক্ষকালী রূপে পূজিত হন বড়মা। এবছর তার শতবর্ষ ছুঁইছুঁই পুজো। আর যুগ যুগ ধরে সেই পুজোতে ভক্তরা আসেন তাদের মনোবাঞ্ছা পূরণের আবদার নিয়ে। আর ভক্তদের দাবি বড়মা কখনোই তাদের শুন্য হতে ফেরৎ পাঠাননি। কিন্তু এই অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন, বড়মা আবির্ভাবের পিছনে রয়েছে এক বিরাট ইতিহাস।
কথিত আছে নৈহাটির তৎকালিন বাসিন্দা ভবেশ চক্রবর্তী একসময় তাঁর বন্ধুদের নিয়ে নবদ্বীপে বেড়াতে যান। সেখানে ভাঙা রাসের মেলা দেখতে গিয়ে এক বিরাট আকার প্রতিমা চোখে পড়ে যায় তার। সেই দেখে তিনি মনে মনে ঠিক করে নেন বাড়িতেই অনুরূপ একখানি প্রতিমা স্থাপন করবেন। এরপরই বাড়ি ফিরে ঋষি অরবিন্দ রোডের পাশেই রক্ষাকালীর এক বৃহৎ প্রতিমা বানিয়ে পুজো করা শুরু করেন তিনি। এলাকার প্রবীণদের দাবি, এই প্রতিমার উচ্চতা প্রায় ১৪ ফুট। কিন্তু অনেকের দাবি তাদের বড়মা বাইশ ফুটের প্রতিমা। যার নির্মাণকাজ আজও রীতি মেনে শুরু হয় কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর সময় থেকে। তবে শুরুতে এই কালীর নাম ভবেশ বাবুর নাম অনুসারে ভবেশ কালী বলেই পরিচিত ছিল। কিন্তু কালক্রমে তার অলৌকিক ক্ষমতার কারণে ভক্তদের কাছে বড়মা নামে পরিচিতি পায়। তবে, প্রতিমার ভোগ রান্নার দায় আজও চক্রবর্তী বাড়ির মানুষের উপর নিয়োজিত। আর সেবকরাই এই পুজোর খরচ বহন করেন। প্রতিবছর শ্যামাপুজোর দিন ভক্তদের দেওয়া গয়নায় সেজে ওঠেন বড়মা। এলাকাবাসী শ্রদ্ধার সঙ্গে বড়মাকে বিসর্জন দেওয়ার পরই স্থানীয় অন্যান্য প্রতিমার ভাসান হয়। ১৯৭০ সাল পর্যন্ত এলাকার যুবকরাই বড়মাকে কাঁধে করে বিসর্জন দিতেন কিন্তু, দেবীর উচ্চতা ক্রমশ বাড়তে থাকায় এখন সেই রীতি বদলেছে।
তবে এই বড়মাকে বছরের বাকি দিনগুলোতে নৈহাটির বড়মা মন্দিরে সকাল ৮ টা থেকে দুপুর ২ টো এবং রাত ৮ টা থেকে ১১ টা পর্যন্ত পুজো চলে। সপ্তাহের বিশেষ দিনে চলে ভোগ বিতরণ।
প্রতিবছর এরাজ্য তো বটেই, ভিনরাজ্য এমনকী ভিনদেশ থেকেও কালীপুজোয় বড়মার পুজোয় যোগ দিতে আসেন অসংখ্য ভক্ত। বড়মার পুজো ছাড়াও নৈহাটিতে বেশ কয়েকটি কালীপুজো হয়। কিন্ত, সবকিছু ছাপিয়ে দর্শকদের কৌতূহল থাকে এই বড়মার পুজোকে ঘিরেই।