মহানগর ডেস্ক : একটানা ১৭ দিন ধরে আইসিইউর বেটির মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন ঐন্দ্রিলা শর্মা। যার আরোগ্য কামনায় ব্যস্ত গোটা টলিউড। এমনকি সমাজমাধ্যমে অনুরাগীদের প্রার্থনার ঢল। মারন রোগের মতোই আরো একবার যুদ্ধ জয় করে ফিরে আসবে ঐন্দ্রিলা বিশ্বাস সবার।
তবে এর মাঝেই অভিনেতা অনিন্দ্য পুলক বন্দ্যোপাধ্যায় একটি পোস্টে উসকে দিলেন হাজার প্রশ্ন। তিনি লেখেন,’ আমাদের একজন অভিনেত্রীকে সুস্থ করে ফেরত আনার জন্য ভগবানের কাছে প্রার্থনা চেয়ে অর্থের সাহায্যে জরুরী কিনা সেটা ভেবে দেখা দরকার’। এক বেসরকারি হাসপাতালে ভেন্টিলেশনে রয়েছেন তিনি। ২৪ ঘন্টা রয়েছেন চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে। চলছে এয়ার ম্যাট্রেস আইসিইউ পরিষেবা। কিন্তু সাধারণ মানুষ অনেকেই সে ব্যাপারে ওয়াকি বহাল নন।
সাধারণত আইসিউর খরচা হাসপাতাল ভেদে এক এক রকম হয়ে থাকে। তবে এই কথা ঠিক স্বাভাবিকের তুলনায় আইসিইউতে খরচা অনেকটা বেশি। মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে তা। যে কারণে যে রোগীকে আই সি ইউ তে রাখতে হয় তার বাড়ির লোকের মাথায় হাত পড়ে যায়।
আইসিইউ-তে যা যা পরিষেবা-সহ ঐন্দ্রিলার চিকিৎসা করা হচ্ছে, যে কোনও প্রথম সারির বেসরকারি হাসপাতালের খরচ দেখলে বোঝা যায়, প্রতি দিন প্রায় ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকার কাছাকাছি খরচ হতে পারে রোগীর। এ ছাড়াও রোগীর অবস্থা কতটা সঙ্কটজনক, তাঁকে কি ধরনের ওষুধ দেওয়া হচ্ছে, তাঁকে কী কী সাপোর্ট সিস্টেমে রাখা হচ্ছে— তার উপরে নির্ভর করে খরচ আরও বাড়ে। অঙ্কটা নেহাত কম নয়।
কোনও রোগীকে আইসিইউ-তে রাখা হলে অনেকেই বুঝতে পারেন না, কেন এত বেশি বিল হয়। সেই নিয়ে ক্ষোভও কম থাকে না রোগীর আত্মীয়দের মধ্যে। কী এমন বিশেষ পরিষেবা দেওয়া হয় আইসিইউ-তে?
চিকিৎসক সপ্তর্ষি বসু বললেন, ‘ক্রিটিক্যাল কেয়ারে রোগীর তৎক্ষণাৎ পরিস্থিতি কেমন, তা জানার জন্য প্রচুর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়, সেন্ট্রাল লাইন থাকে, গ্যাজেটর থাকে, বিভিন্ন ধরনের ওষুধ চলে, রোগীকে সাপোর্ট সিস্টেমে দেওয়ারও প্রয়োজন হতে পারে। কোনও রোগীর যাঁর স্ট্রোক হয়েছে, আগে দু’বার ক্যানসারের হয়েছে এবং এখন তাঁকে আইসিইউ-তে রাখা হয়েছে তাঁর প্রতি দিনের খরচ প্রায় ৫০ হাজারের উপরেই হবে। এর বেশিও হতে পারে।
যে কোনও রোগের সঙ্গে লড়াই করতে প্রোটিন আমাদের শরীরে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ইনটেন্সিভ কেয়ারে যে রোগীদের রাখা হয়, তাঁদের শরীরে প্রোটিনের প্রয়োজন মূলত বেরোতে থাকে শরীরে যতটা প্রোটিন স্টোর করা থাকে, তা থেকে। তাই এই রোগীদের প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন প্রয়োজন হয়। তাই হাই প্রোটিন ডায়েট দেওয়া হয়। কিন্তু সমস্যা হয় অন্য জায়গায়। আইসিইউ-তে থাকা বেশির ভাগ রোগীর শরীরে প্রতিরোধক্ষমতা অনেক কম থাকে। তাঁরা নানা ক্ষেত্রে ইমিউনো-কম্প্রোমাইজড হন। তাই সাধারণ রান্নাঘরে তৈরি খাবার খেলে শরীরে নানা রকম সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে। তাই বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ফর্মুলা ফুডের উপর থাকতে হয়। তাতে খরচ অনেকটাই বেড়ে যায়। আইসিইউ-র রোগীদের হাসপাতালে বিল অনেকটা বেশি হওয়ার অনেক রকম কারণ থাকতে পারে। কিন্তু তাঁর একটি বড় অংশ হল রোগীর ডায়েটের খরচ।
এছাড়া সব সময় রোগের উপর নজর রাখতে হয় তার কি কি ধরনের সাপোর্ট প্রয়োজন সেগুলির দিকে খেয়াল রাখতে হয়। সব মিলিয়ে ভেন্টিলেটরের খরচা অনেকখানি বেড়ে যায়।