মহানগর ডেস্ক: এ এক অদ্ভুত জঙ্গল। পৃথিবীর বুকে অস্তিত্বরত সমস্ত অদ্ভুত কিংবা বিষাক্ত গাছগাছালিও প্রাণীর অস্তিত্ব সেখানেই মেলে। তিন বছরের পরিকল্পনা, পাঁচটি অভিযান এবং ঘন জঙ্গলের মধ্য দিয়ে টানা দুই সপ্তাহ হেঁটে অবশেষে সেই জঙ্গলেই এবার দেখা মিলল দৈত্যাকার পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু গাছের। ২৯০ ফুট উচ্চতার এই গাছের বয়স প্রায় ৬০০ বছর। এমনই সব বিচিত্র জিনিসে ভরা ভয়ানক রহস্যভেদি জঙ্গল আমাজন। সেখানেই এবার উদ্ধার হয়েছে পুরোনো রাক্ষুসে চেহারার এই গাছ।
গবেষকদের মতে, উত্তর ব্রাজিলের ইরাতাপুরু রিভার নেচার রিজার্ভের ছাউনির কাছে অবস্থিত দৈত্যাকার এই গাছটি এখনো পর্যন্ত শনাক্ত হওয়া আমাজন জঙ্গলের সর্ববৃহৎ গাছ। এটি অ্যাঞ্জেলিম ভারমেলো প্রজাতির। যার বৈজ্ঞানিক নাম ডিনিজিয়া এক্সেলসা। এর কাণ্ডের পরিধি ৯.৯ মিটার।
২০১৯ সালে একটা থ্রিডি ম্যাপিং প্রকল্পের অংশ হিসাবে তোলা স্যাটেলাইট ছবিতে প্রথমবার ধরা পড়ে এই দৈত্যাকার গাছটির। তারপরই একদল গবেষক সেই গাছের কাছে পৌঁছানোর অভিযান শুরু করে। কিন্তু আমাজনের বিপদসংকুল গভীর অরণ্য ভেদ করে লক্ষ্যে পৌঁছানো মুখের কথা নয়। যেভাবেই যান না কেন, বিষাক্ত পোকামাকড়, মাকড়সা, সাপেদের উপদ্রব লেগেই রয়েছে। কোথাও থাকতে পারে আবার মানুষ খেকো গাছ। তার উপর অবিরাম ঝড়ে পড়া বৃষ্টিতো আছেই। সাবধানতার লক্ষ্যভ্রষ্ট হলেই মৃত্যু অবধারিত। এরই মধ্যেই সেই দুর্ভেদ্য জঙ্গলকে ভেদ করতে একবার, দুবার নয়, ব্যর্থ হয় পরপর চারটে অভিযান। অনেক সময় বিষাক্ত পোকামাকড় এবং মাকড়সার আক্রমণে অসুস্থও হয়ে পড়েন বেশ কয়েকজন বিজ্ঞানী। কিন্তু হাল ছাড়ার পাত্র নন তাঁরা। টানা তিন বছরের চেষ্টার শেষে সাফল্য আসে পঞ্চম অভিযানে।
কেমন ছিল সেই রহস্যবিধি দুর্বৃত্ত অভিযানের অভিজ্ঞতা? বললেন এই দলের অন্যতম সদস্য আমাপা ফেডারেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট ইঞ্জিনিয়ার দিয়েগো আর্মান্দো সিলভা। তিনি জানান, জঙ্গল ঘেরা ২৫০ কিলোমিটার নদীপথ নৌকায় পার হয়েই শুরু ২০ কিলোমিটার হাঁটা। তারপরই পৃথিবীর দীর্ঘতম গাছটির কাছে পৌঁছনো সম্ভব হয়। অভিযানের এই সাফল্যে কার্যত খুশি উদ্ভিদবিজ্ঞানীরা। তিনি আরও জানান, ‘এই গাছকে ছুঁতে পারাটা তাঁর জীবনের সেরা অভিজ্ঞতা। গাছটি অন্তত ৪০০-৬০০ বছরের প্রাচীন বলে ধরা হচ্ছে। সেখানকার মাটি, পাতা ও অন্যান্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। মনে করা হচ্ছে এই গাছের রন্ধে রন্ধ্রে প্রাচীন পৃথিবীর অজানা কাহিনি লুকিয়ে আছে। এই খোঁজেই শুরু হবে আবার নতুন গবেষণা।