মহানগর ডেস্ক: ম্যাচ শুরু হওয়ার আগে বরুসিয়া মনশেনগ্লাডবাখের অতি বড় সমর্থকও এমন কিছুর আশা করেননি। শুধু তারাই নয়, ফুটবল–বিশ্বের কেউই এমন কিছুর কথা কল্পনা করতে পারেনি। কীভাবেই-বা ভাববে? মঙ্গলবারের আগে পর্যন্ত ১৫ ম্যাচে ৬০ গোল করা দল বায়ার্ন এ মরসুমে বার্সেলোনা, আরবি লাইপজিগ বা বেয়ার লেভারকুসেনকে রীতিমতো নাকানি-চোবানি খাইয়েছে। এদিন জার্মান কাপে যা হয়েছে, স্বাভাবিক ভাবেই সেটা একটু বিস্ময় জাগাতে বাধ্য। কারণ এমন ঘটনা বিগত ৪৩ বছরে দেখেননি বায়ার্ন সমর্থকরা।
জার্মান কাপের দ্বিতীয় রাউন্ডে গ্লাডবাখের মুখোমুখি হয়ে ৫-০ গোলে হেরেছে জার্মান পরাশক্তি বায়ার্ন মিউনিখ! হার নয়, বলা চলে বিধ্বস্ত হয়েছে। ১৯৭৮ সালের পর সব ধরনের প্রতিযোগিতাতেই কোনও প্রতিপক্ষের কাছে পাঁচ গোলের ব্যবধানে হারেনি বায়ার্ন মিউনিখ। গোল দিয়ে প্রতিপক্ষকে উড়িয়ে দেওয়ার জন্য বায়ার্নের সুনাম বহুদিন ধরেই। ২০২০ সালে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে মেসির বার্সেলোনাকে আট গোলের লজ্জা দিয়েছিল বায়ার্ন। এ বছর বুন্দেশলিগার কথাই ধরুন। হার্থা বার্লিনকে বায়ার্ন দিয়েছে পাঁচ গোল, লাইপজিগকে দিয়েছে চার গোল। এবার উঠে আসা বোখুমকে দিয়েছে সাত গোল। ফর্মে থাকা লেভারকুসেনকেও দিয়েছে পাঁচ গোল। এমন দল যখন জার্মান কাপে লিগের ১২তম দল বরুসিয়া মনশেনগ্লাডবাখের মুখোমুখি হচ্ছিল, সবাই ধরেই নিয়েছিল যে এই ম্যাচেও ৪-৫ গোল তো হবেই। হয়েছেও তা–ই, শুধু গোলগুলো হজম করেছে বায়ার্ন।
করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় মাঠে ছিলেন না বায়ার্ন মিউনিখের হেড কোচ জুলিয়ান নাগলসম্যান। ডাগআউটে ছিলেন সহকারী ডিনো টপমোলার। কোনও ঝুঁকি নেননি তিনি। পূর্ণশক্তির দলই মাঠে নামিয়েছিলেন। রবার্ট লেওয়ানডস্কি, থমাস মুলার, ম্যানুয়েল ন্যুয়ার, সার্জিও গ্ন্যাব্রি, জোশুয়া কিমিচ—কে ছিলেন না এই ম্যাচে! জার্মান কাপের প্রথম রাউন্ডেই গোল বন্যা দেখিয়েছিল বায়ার্ন। পঞ্চম স্তরের দল ব্রেমেরকে পেয়ে এক ডজন গোল দিয়েছিলেন চুপো-মোটিং, জামাল মুসিয়ালারা।
কিন্তু এদিন তারকাখচিত দলটি শুরুতেই চাপে পড়ে যায়। দুই মিনিটেই গ্লাডবাখ মিডফিল্ডার কুয়াদিও কোনের গোলে পিছিয়ে পড়ে বায়ার্ন। ধাতস্থ হওয়ার সুযোগ মেলেনি। ২১ মিনিটেই আরও দুই গোল খেয়ে বসেন বাভারিয়ানরা। জার্মান কাপে এর আগে এত দ্রুত বায়ার্নকে কেউ তিন গোল দিতে পারেনি। ম্যাচে ফিরতে অনেক চেষ্টা করেছে তারা, বিরতির পর চারজন বদলি খেলোয়াড়ও মাঠে নামিয়েছেন। কিন্তু কোনও লাভ তো হয়ইনি, উল্টো আরও দুই গোল হজম করে ৫-০ গোলে হেরে প্রতিপক্ষের মাঠ থেকে বিদায় নিয়েছে বায়ার্ন।
ম্যাচের ফল দেখে মিউনিখের ক্রীড়া পরিচালক হাসান সালিহামিদিচ কতটা ধাক্কা খেয়েছেন, সেটা বোঝা গিয়েছে তাঁর কথায়, ‘আমি হতবাক। আমরা কখনওই ম্যাচে ছিলাম না। খেলার প্রতিটি মুহূর্তেই ওরা আমাদের থেকে ভালো খেলেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই পরাজয় ব্যাখ্যাতীত। আমরা একটা দল হিসাবে ভালো খেলতে পারিনি। আমরা জানি যে গ্লাডবাখের বিরুদ্ধে তাদের মাঠে এসে খেলা কতটা কঠিন। খেলার শুরুতে এই নিয়ে আমরা আলোচনাও করেছিলাম। কিন্তু সত্যি কথা বলতে, এই হার ব্যাখ্যা করা কঠিন।’
প্রধান কোচ জুলিয়ান নাগলসম্যান মাঠে না থাকায় খেলার কোনও প্রভাব পড়েনি বলে দাবি করেন সালিহামিদিচ, ‘অবশ্যই আমরা আমাদের কোচকে ডাগআউটে চেয়েছিলাম। কিন্তু এই হারের পেছনে ডিনোর (সহকারী কোচ) কিছুই করার ছিল না। আমরা কোনও ভাবেই ওদের সঙ্গে পেরে উঠিনি। আমাদের সঙ্গে খারাপ যা যা হতে পারত, তার সবই হয়েছে আজ। এর সঙ্গে প্রধান কোচের থাকা না থাকার কোনও সম্পর্ক নেই।’
এই হারের মাধ্যমে জার্মান কাপের শেষ ষোলোতে ওঠার আগেই ছিটকে গেল বায়ার্ন। গতবারও জার্মান কাপের শেষ ষোলোতে উঠতে পারেনি জার্মান লিগের সবচেয়ে সফল এই ক্লাব। ১৯৯৪-৯৫ এবং ১৯৯৫-৯৬–এর পর এই প্রথম বায়ার্ন পরপর দুবার জার্মান কাপের শেষ ষোলোতে উঠতে ব্যর্থ হল। ১৯৭৮ সালের পর এই প্রথম বায়ার্ন মিউনিখ কোনও দলের কাছে ৫ গোলের ব্যবধানে হারল। সে বছর বুন্দেশলিগায় তারা ফরচুনা ডুসেলডর্ফের কাছে ৭-১ গোলে হেরেছিল। কোনও ম্যাচে বায়ার্ন সর্বশেষ পাঁচ গোল হজম করেছিল ২০১৯ সালে। ফ্রাঙ্কফুর্টের কাছে সেই ম্যাচে ৫-১ গোলে হেরে ছাঁটাই হয়েছিলেন কোচ নিকো কোভাচ।