মহানগর ডেস্ক : প্রার্থী হওয়ার পর প্রথমে দলীয় বিক্ষোভ, গতকাল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ফোন, বুধবার অবশেষে সন্দেশখালিতে নিজের বাড়িতে এসে পৌঁছলেন, এদিনই তিনি প্রথম প্রচারে নামলেন বসিরহাটের বিজেপি প্রার্থী এবং শেখ শাহজাহানের অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী মুখ রেখা পাত্র। স্থানীয় পাত্র পাড়ার বাসিন্দা রেখা জীবনে প্রথমবার প্রার্থী হলেন লোকসভা কেন্দ্রে, এটাই তাঁর জীবনে প্রথম প্রার্থী হওয়া। রেখা পাত্র প্রচারে বেরিয়ে স্পষ্ট বললেন, “আমি সন্দেশখালির অত্যাচারিত মানুষের কথা সংসদে তুলে ধরব যদি তাতে সেই মানুষগুলো সম্মান, সম্ভ্রম, মর্যাদা ফিরে পান, এলাকা সন্ত্রাসমুক্ত হয়। এই কথা রেখা পাত্র বলছেন কারণ তৃণমূলের নেতা তথা সন্দেশখালির বাঘ শেখ শাহজাহান সন্দেশখালির বিস্তীর্ণ অঞ্চলের মানুষের উপর, মহিলার উপর সব রকমের অত্যাচার চালিয়েছে, আমি ভোটে জিতলে এই মানুষগুলোর পাশে দাঁড়াব। আমি আজ রাজ্য পুলিশকে পাশে পাইনি কিন্তু এতো মানুষ আমার সঙ্গে, পাশে আছে। আমার শক্তি আমার সঙ্গে আছে। ২০১১ থেকে এখানকার মানুষ ভোট দিতে পারেননি, এবার ভোট দেবেন। আমি সন্দেশখালিকে সন্ত্রাসমুক্ত করব। আমি একা নয়, সন্দেশখালির সব অত্যাচারিত মহিলারাই এবার বসিরহাটের প্রার্থী।”
জীবনের প্রথম নির্বাচনী প্রচারে বার হয়ে বুধবার উন্নয়নের প্রশ্নে রেখা পাত্র বলেন, “রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে কাজ উন্নয়ন করতে পারেননি, নরেন্দ্র মোদীর সেই উন্নয়নের ঘাটতি পূরণ করেছেন। কাজেই মানুষ বিজেপিকে এবার ফের ক্ষমতায় আনবে।” জীনবের প্রথম প্রার্থী সোজা লোকসভা নির্বাচনে, প্রথম প্রচারে নেমে বেশ দৃঢ় ভাবেই কথা বলছিলেন রেখা পাত্র। বোঝাই যাচ্ছিল না তিনি জীবনে প্রথম রাজনীতির ময়দানে এবং প্রথমবারই রাজনীতিতে হাতেখড়ি হয়ে সরাসরি লোকসভার প্রার্থী হিসাবে তিনি প্রচারে নেমেছেন, এতোটাই পরিণত ভঙ্গিতে রেখা পাত্র বক্তব্য রাখছিলেন, যে বক্তব্যের প্রতিছত্রে সন্দেশখালির অত্যাচারের কাহিনী ফুটে উঠছিল।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মঙ্গলবার ফোন করে রেখা পাত্রকে “শক্তিস্বরূপা” বলে সম্বোধন করে তাঁর সঙ্গে কথা বলেন। প্রচারে শঙ্খ বাজিয়ে, উলুধ্বনি দিয়ে রেখাকে সন্দেশখালিতে স্বাগত জানান স্থানীয় গ্রামবাসীদের একটি বড় অংশ। ধামাখালির কাছে একটি কালীমন্দিরে রেখা প্রথমে পুজো দেন। তার পর কথা বলেন গ্রামবাসীদের সঙ্গে।
তবে এই ভাবে যখন বিজেপি প্রার্থী রেখা পাত্র প্রচারে নেমে বক্তব্য রাখছেন, তখন কিন্তু হাত গুটিয়ে বসে নেই তৃণমূল। সন্দেশখালির “বাঘ” শেখ শাহজাহান এখন জেলবন্দি। বুধবার শেখ শাহজাহানের গ্রাম সরবেড়িয়ায় হাজি নুরুলের সমর্থনে মিছিল করে তৃণমূল। তৃণমূলের এই মিছিলে ভালো জনসমাগম হয়েছিল।
সন্দেশখালির আন্দোলনের “মুখ” হলেন এই রেখা পাত্র। তিনি যেদিন তাঁর গাঁয়ে ঢুকলেন, সে দিনই পাল্টা সরবেড়িয়া গ্রামে প্রার্থীর সমর্থনে মিছিল করল তৃণমূল। সব মিলিয়ে জমে উঠেছে বসিরহাট কেন্দ্রে ভোটের লড়াই। তৃণমূল এ বার তারকা অভিনেত্রী নুসরত জাহানকে সরিয়ে এই কেন্দ্রে হাজি নুরুলকে প্রার্থী করেছে। এই কেন্দ্রেরই একদা সাংসদ হাজির কাছে ভোটের লড়াই নতুন কিছু নয়, কিন্তু তাঁর লড়াই যে রেখার সঙ্গে তিনি এত দিন ছিলেন গৃহবধূ। কোলে বাচ্চা নিয়ে সন্দেশখালিতে আন্দোলনের মুখ হয়ে উঠেছিলেন রেখা। আর তার জেরেই বিজেপি তাঁকে বসিরহাটের প্রার্থী করে। নিজে রেখাকে ফোন করেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। বুধবার সকাল থেকে শুরু হল রেখার জীবনের সবচেয়ে কঠিন লড়াই। সকালে তিনি সন্দেশখালিতে পৌঁছতেই শঙ্খধ্বনি এবং উলুধ্বনি দিতে থাকেন গ্রামের মহিলাদের একটি অংশ। রেখার নাম ঘোষণা হওয়ার পরে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন স্থানীয় কয়েক জন মহিলা। বুধবার সকালে তাঁদেরই দেখা গেল রেখাকে স্বাগত জানানোর দলের একেবারে পুরোভাগে। রেখা বললেন, “এবার ৪০০ পার করতেই হবে। দল আমাকে যে দায়িত্ব দিয়েছে তা আমি পালন করব। আমায় আমার গ্রামের মানুষেরা যে সম্মান, ভালোবাসা দিয়েছেন তাতে আমি মুগ্ধ। আমি একা নয়, বসিরহাটের সব মা, বোনেরা প্রার্থী।”
সন্দেশখালির ফেরিঘাটে নেমে রেখা প্রথমে যান ধামাখালির কাছে একটি কালীমন্দিরে। সেখানে পুজো দেন। তার পর নেমে পড়েন জনসংযোগে। রেখাকে দেখে তাঁর পরিজনদের কেঁদো ফেলেন। প্রতিবেশীদের সঙ্গেও কথা বলেন রেখা। তার পর উঠে বসেন একটি টোটোয়। ভিড়ের চাপে টোটো আটকে যায়। রেখা যেখানেই গিয়েছেন, সঙ্গে সঙ্গে গিয়েছেন গ্রামের মহিলাদের একটি অংশ। তারা ফুলের পাপড়ি ছুড়ে স্বাগত জানিয়েছেন রেখাকে। এলাকার বিভিন্ন দেওয়াল ইতিমধ্যেই রেখার নামে রাঙিয়ে ফেলেছে বিজেপি। সন্দেশখালির গ্রামের মানুষ বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। প্রধানমন্ত্রীকে আমরা পাশে পেয়েছি। রেখা পাত্রর সঙ্গে আমরা প্রথম দিন থেকেই আন্দোলনে আছি। আগামী দিনেও থাকব। প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটাই আবেদন, তিনি যেন আমাদের হাত ছেড়ে না দেন। তিনি যেন আমাদের পাশে থাকেন, আমাদের হাত ধরেন।
অন্য দিকে, বুধবার সন্দেশখালির সরবেড়িয়া গ্রামে তৃণমূল নেতা জেলবন্দি শাহজাহানের বাড়ি। রেখা যে দিন গ্রামে ঢুকলেন, সে দিন তৃণমূল বড় মিছিল করে শাহজাহানের গ্রাম সরবেরিয়ায়। বুধবার সকালে সরবেড়িয়া বাজারে বসিরহাটের তৃণমূল প্রার্থী হাজি নুরুলের সমর্থনে বড় মিছিল হয়। প্রসঙ্গত, সন্দেশখালিকাণ্ড এবং শেখ শাহজাহানের গ্রেফতারির পর বুধবারই প্রথম সরবেড়িয়া অঞ্চলে মিছিল করল তৃণমূল নেতা-কর্মী-সমর্থকরা।