মহানগর ডেস্কঃ চুঁচুড়া সারথি নাট্যদলের আপোষহীন ৩৮ বছর। চলতি সপ্তাহের শুক্রবার চুঁচুড়া রবীন্দ্রভবনে সেই অনুষ্ঠান পালিত হল সাড়ম্বরে। ২৫ নভেম্বর থেকে ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত, চারদিনব্যাপী চলবে এই নাট্যমিলন উৎসব।
শুক্রবার বিকেল পাঁচটায় এই অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন প্রখ্যাত অভিনেত্রী শ্রীমতি ছন্দা চট্টোপাধ্যায়। উদ্বোধন অনুষ্ঠানের পরেই তাঁর কাজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেওয়া দর্শকাসনে বসে উপভোগ করেন সকলেই। গোটা অনুষ্ঠানটা আলাপচারিতার সূত্রে গাঁথা হয়েছে সাংবাদিক অভীক চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে ছন্দা চট্টোপাধ্যায়ের প্রশ্নোত্তর পর্বের মাধ্যমে। অভিনেত্রী ছন্দা চট্টোপাধ্যায় ভাগ করে নেন কখনও বিজন ভট্টাচার্য আবার কখনও উৎপল দত্তর সঙ্গে তাঁর কাজের অভিজ্ঞতা। সঙ্গে দর্শকদের অনুরোধে কয়েক কলি গানও শোনান অভিনেত্রী।
এই আলাপচারিতা অনুষ্ঠানের পরেই সারথির আমন্ত্রণে অভিনীত হয় প্রাচ্য প্রযোজিত ‘দায় আমাদেরও’ নাটকটি। নাটকের নির্দেশনায় বিপ্লব বন্দ্যোপাধ্যায়। মূল অভিনয়ে সুপ্রিয় দত্ত, বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী, বুদ্ধদেব দাস এবং দেবশংকর হালদার। নাটকটির সূত্রে অ্যাবি ম্যান রচিত ‘জাজমেন্ট এট নুরেমবার্গ’।
ঐতিহাসিক সত্যকে বাস্তবের মাটিতে আছড়ে ফেলে এই নাটক বর্তমান সময়কেই বাস্তবোচিত করে তোলে। গণতান্ত্রিক কাঠামোর আড়ালে একনায়কতন্ত্রের যে মাথা উঁচু করার প্রবণতা তা চিরকালীন। এই নাটকে বারবার দেখানোর চেষ্টা রাষ্ট্রের যে ঔদ্ধত্য সেটা একদিনের তৈরি নয়। দীর্ঘ দিনের আপোষ বা বিপদে পড়ে রাষ্ট্রের শরণাপন্ন হওয়া সবকিছুই আসলে তিল তিল করে রাষ্ট্রকে প্রতিস্পর্ধী করে তোলে। রাষ্ট্রের এই স্পর্ধার জন্য হাতিয়ার করা হয় বিচার ব্যবস্থাকে। যে বিচার ব্যবস্থা রাষ্ট্রের দাসানুদাস। কাজেই বিচারক রাষ্ট্রের হাতের পুতুল মাত্র। এই রাষ্ট্রই বারবার ঘোষণা করে সত্যি হল রাষ্ট্রের শত্রু। তাই মিথ্যা, আপাত সত্য এগুলোকেই রাষ্ট্রে বারবার প্রচার করে যেতে হবে। যাতে ঠুলি পড়া নাগরিক মিথ্যেকেই চরম সত্যি বলে বারবার বিশ্বাস করতে বাধ্য হন।
তবে শুধু স্বৈরতন্ত্রই নয়। এই নাটক দেখিয়ে দেয় রাষ্ট্র কেমন করে প্রতিহিংসাকে জাগ্রত করে শ্রেনীবিভাগকেই মানুষের কাছে মূল প্রতিপন্ন করে তোলে। ঠিক হিটলারের আমলে যেভাবে ইহুদিদের প্রতি জার্মানদের বিষিয়ে দেওয়ার প্রবণতা তৈরি করা হয়েছিল। একটা গোটা জাতিকে আরেকটা জাতির বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেওয়ার মত প্রতিহিংসা তৈরি করে দেওয়া।
আর নাটকের সবশেষে রয়েছে, নাৎসিবাদকে ঘৃণা করার পরেও গোটা পৃথিবীর কোনও না কোনও সময়ে সেই নাৎসিবাদের জনক হিটলারের শরণাপন্ন হওয়ার দায়। সেই দায়ই বর্তমান সময়ের রাষ্ট্রের আগ্রাসী মনোভাবের কারণ। এ অস্বীকার করার উপায় নেই কোনও রাষ্ট্র নায়কেরই। তাই বর্তমান রাষ্ট্রের এই অবস্থার জন্য দায় শুধু শাসকের নয়, দায়টা সকলের। তাই এ নাটক আত্মসমীক্ষার। সেই সমীক্ষা থেকেই মন বলে ওঠে হ্যাঁ, ‘দায় আমাদেরও’।