মহানগর ডেস্ক: গুপ্তধনের লোভ দেখিয়ে একের পর এক খুন। সংখ্যাটা এগারো। এমনই এক সিরিয়াল কিলারকে গ্রেফতার করেছে হায়দ্রাবাদের পুলিশ। সিরিয়াল কিলারের নাম রামাতি সত্যনারায়ণম। হায়দ্রাবাদ থেকে ১৩০ কিলোমিটার দূরে নগরকুরনুলের বাসিন্দা ওই সিরিয়াল কিলার বিভিন্ন মানুষকে গুপ্তধন পাইয়ে দেওয়ার টোপ দিয়ে খুন করতো বলে জানিয়েছে পুলিশ। খুনির মোডাস অপরান্ডি ছিল গুপ্তধন পাইয়ে দেওয়ার নামে পুজো করার বিধান দিতো সে। সবার মনে বিশ্বাস আনার জন্য বলতো পুজো করার পরই গুপ্তধনের সন্ধান মিলবে। এজন্য শিকারদের কাছ থেকে টাকা নিতো বা তাদের জমি নিজের নামে রেজিস্ট্রি করতো। তারপর তাদের নির্জন জায়গায় নিয়ে গিয়ে অ্যাসিড ও বিষাক্ত তরল ঢেলে তাদের ভবলীলা সাঙ্গ করতো বলে জানিয়েছে পুলিশ। অ্যাসিড ও বিষাক্ত তরলে আংশিক সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়লে তাদের মাথা বোল্ডার দিয়ে থেঁতলে খুন করতো। ২০২০ সাল থেকেই ওই সিরিয়াল কিলার তার হত্যালীলা চালিয়ে আসছিল। পুলিশও তার টিকির খোঁজ পাচ্ছিল না। এক বিবৃতিতে পুলিশ জানিয়েছে এখনও পর্যন্ত রামাতি মহিলা-সহ ১১জনকে খুন করেছে।
তেলেঙ্গানা,অন্ধ্রপ্রদেশ,কর্ণাটকে তার কুকীর্তি প্রকাশ্যে আসে। নভেম্বরের ২৬ তারিখে এক মহিলা পুলিশে অভিযোগ জানানোর পরই তদন্তে নামে পুলিশ। মহিলাটি জানান তাঁর স্বামী নাগারকুরনুলে সত্যনারায়ণ নামে একজনের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে আর ফেরেননি। পাঁচদিন পরেও স্বামী ফিরে আসেননি। ওই মহিলা ও তাঁর পরিবারের লোকজন সত্যনারায়ণের কাছে স্বামীর খোঁজ নিতে গেলে সে কোনও উত্তর দিতে পারেনি। তারপরই থানায় অভিযোগ দায়ের করেন মহিলা। নাগারকুরনুলের পুলিশ অফিসার তদন্ত শুরু করার পর সত্যনারায়ণের আচার আচরণ তাঁর কাছে সন্দেহজনক লাগে।
পুলিশ জানিয়েছে অভিযুক্তের আসল ব্যবসা ছিল রিয়েল এস্টেটের। সে ভেষজ ওষুধেরও ব্যবসা করতো। অভিযুক্তের লুকনো গুপ্তধনের খোঁজ করার অভ্যেস ছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ। সত্যনারায়ণ তার রিয়েল এস্টেটের বন্ধুদের বলতো সে গুপ্তধন খুঁজে বের করে থাকে। মহিলার স্বামী বেঙ্কটেশ ও বন্ধুরা সত্যনারায়ণ সম্পর্কে জানার জানার পর তার কাছে গুপ্তধন খুঁজে বের করার কথা জানায়। প্রস্তাবে রাজি হয়ে অভিযুক্ত তাদের কাছ থেকে টাকা চায়।
শর্ত হিসেবে জানায় গুপ্তধন খোঁজার কাজ চলার সময় একমাত্র বেঙ্কটেশ তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবে। গুপ্তধন খোঁজার জন্য অভিযুক্ত তাকে জানায় তিনজন অন্তঃসত্ত্বা মহিলাকে এজন্য বলি দিতে হবে। এতে ভয় পেয়ে যান বেঙ্কটেশ। তিনি টাকা ফেরত চান। এরপর সত্যনারায়ণ তাঁকে কিছু বিষাক্ত ভেষজ দিয়ে জানায় এটি পবিত্র জল এবং বেঙ্কটেশকে পাহাড়ি এলাকায় নিয়ে পুজো করার অছিলা অ্যাসিড ঢেলে অজ্ঞান করে। তদন্ত চলাকালীন নানা বিশ্বাসযোগ্য সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে সিরিয়াল কিলারকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তদন্তের সময় সত্যনারায়ণ স্বীকার করে সে বেঙ্কটেশ ছাড়া আরও দশজনকে এ পদ্ধতিতে খুন করেছে।