Home Health রান্নাঘরে যেই বাদাম ব্যবহার করছেন তার উপকারিতা-অপকারিতা সম্পর্কে জানেন?

রান্নাঘরে যেই বাদাম ব্যবহার করছেন তার উপকারিতা-অপকারিতা সম্পর্কে জানেন?

ছোট থেকে বড়, বছরের সব দোকানেই বাদাম কিনতে পাওয়া যায়।

by Mahanagar Desk
29 views

মহানগর ডেস্কঃ বিশেষজ্ঞদের মতে, বাদাম স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী খাবার। বাদাম নানা পুষ্টি গুন সম্পন্ন হওয়ার পাশাপাশি এতে বিভিন্ন উপকারী উপাদান আছে যা স্বাস্থ্যের নানা ঘাটতি পূরণ করতে সাহায্য করে। ওজন কমানো থেকে শুরু বৃদ্ধি ঘটাতে, স্মৃতিশক্তি উন্নত করতে, প্রোটিনের ঘাটতি পূরণ করতে এবং নানা অসুখ প্রতিরোধ করতে বাদামের উপকারিতার জুড়ি মেলা ভার। উচ্চ পুষ্টিগুণ সম্পন্ন এবং স্বাস্থ্য উপকারিতা হিসেবে বাদাম বিশ্বের অন্যতম প্রিয় খাবার । এই বাদামে স্বাস্থ্যকর চর্বি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন এবং খনিজ রয়েছে যা সামগ্রিক সুস্থতার প্রচার করে। যদিও বেশিরভাগ মানুষ জানেন যে বাদাম স্বাস্থ্যের জন্য ভাল। খিদে পেলে বা খেতে ইচ্ছে করছে কিছু বা আড্ডার সময় বাদাম একটি পরিচিত খাবার বা স্ন্যাকস। ছোট থেকে বড়, বছরের সব দোকানেই বাদাম কিনতে পাওয়া যায়। আমরা যে বাদাম বেশিরভার সময় খেয়ে থাকি তা হচ্ছে চীনা বাদাম। কিন্তু এই বাদাম ছাড়াও আরোও নানান ধরনের বাদাম রয়েছে।

সারাবিশ্বে দেখতে গেলে নানা ধরনের বাদাম রয়েছে। প্রকৃতির জলবায়ু – আবহাওয়া তারতম্যের কারণে বিভিন্ন জায়গায়, অর্থাৎ একেক অঞ্চলে একেক রকমের বাদাম দেখতে পাওয়া যায় বা সেখানে উৎপন্ন হয়। জলবায়ু- আবহাওয়ার তারতম্যের জন্য সারাবিশ্বে মোটামুটি ১২ রকমের বাদাম উৎপন্ন হয়। সেগুলির মধ্যে সব কটি বাদামি মোটামুটি সবাই চেনেন। তার মধ্যে যেগুলো সহজলভ্য এবং বেশি ব্যবহার করা হয় সেগুলি হলো চিনাবাদাম, কাজুবাদাম, কাঠবাদাম, পেস্তাবাদাম, হ্যাজেল নাট, ব্রাজিলিয়ান বাদাম, আখরোট। প্রতিদিন যেই যেই বাদাম ব্যবহার করেন তার মধ্যে কোন বাদামের কি কি উপকারিতা ও অপকারিতা রয়েছে জানতে দেখে নিন-

চিনাবাদামের উপকারিতা-
চিনাবাদামে শতকরা ৮০ ভাগ অসম্পৃক্ত ফ্যাট মজুত থাকে যা হৃদযন্ত্রের ক্ষেত্রে খুবই উপকারী ভূমিকা পালন করে। বায়োটিন স্কোরোসিস, ডায়াবেটিস ও মস্তিষ্কের সুস্থতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। প্রত্যেকদিন চিনাবাদাম খেলে হৃদরোগের ঝুঁকির পরিমাণ কম থাকে। চিনাবাদামে পর্যাপ্ত অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে, যা ক্যান্সারের মতো রোগ প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে। এমনকি এই বাদামের নিয়মিত ভক্ষণে পিত্তথলিতে পাথর হওয়া প্রতিরোধ করা যায়।

চিনাবাদামের অপকারিতা – যদি অতিরিক্ত মাত্রায় চিনাবাদাম খাওয়া হয় তাহলে ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে। চিনাবাদামে প্রচুর পরিমাণে সোডিয়াম থাকে যা রক্তচাপ প্রচুর পরিমাণে বাড়িয়ে দেয়। চিনাবাদামে প্রচুর পরিমাণে ফসফরাস থাকে, যা শরীরে অন্যান্য জলীয় উপাদান শোষণে বাধা দেয়। আবার যাদের খুব এলার্জির ধাত রয়েছে তাদের চিনাবাদাম খাওয়ার পর হয়ত এলার্জির সমস্যা হতে পারে।

কাজুবাদামের উপকারিতা –
এই বাদাম ফাইবারের একটি বড়ো উৎস। কাজুবাদাম যদি প্রত্যেকদিন খাওয়া যায়, তাহলে হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে। জিয়া জ্যানথিন নামে এক ধরনের শক্তিশালী পিগমেন্ট থাকে কাজুবাদামে, যা চোখকে বিভিন্ন সংক্রমণ থেকে দূরে থাকতে সাহায্য করে। কাজুবাদামে উচ্চমাত্রায় কপার থাকে, যার ফলে রক্তের মধ্যে দূষিত কণিকা দূর করে, তার পরিবর্তে রক্তে লৌহের পরিমাণ বাড়ায়। তার জন্য রক্তে বিভিন্ন রোগ হওয়ার মতো সমস্যা অনেকাংশে কমে যায়। এছাড়া কাজুবাদামে সেলেনিয়াম, জিঙ্ক, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম এবং ফসফরাস থাকে প্রচুর পরিমাণে। সেলেনিয়াম ত্বকের ক্ষেত্রে খুবই উপকারী। এছাড়া সেলেনিয়াম ক্যান্সারের মতো রোগ প্রতিরোধ কোরতে সহায়তা করে। কাজুবাদাম ওজন কমাতে সহায়তা করে। নিয়মিত কাজুবাদাম খেলে চুল উজ্জ্বল ও ঘন হয়।

কাজুবাদামের অপকারিতা –
গুনাগুনের পাশাপাশি কিছু অপকারিতাও রয়েছে । কাজুবাদাম যদি অতিরিক্ত খাওয়া হয়, তার ফলে ওজনের পরিমাণ অতিরিক্ত বেড়ে যায়৷ যাদের এলার্জির সমস্যা রয়েছে তাদের কাজুবাদাম খেলে সমস্যা হতে পারে। এছাড়া কাঁচা কাজুবাদামের মধ্যে থেকে এক ধরনের বিষাক্ত তরল পদার্থ নিঃসৃত হয় যা আঙ্গুল লাগলে, বা দেহের কোনো অংশে লাগলে সেখানে ঘা হয়ে যায়, এই কারণেই বাজারে খোলযুক্ত কাঁচা কাজুবাদাম বিক্রি হয়না।

কাঠবাদামের উপকারিতা –

কাঠবাদাম হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়। মস্তিষ্কের সুস্থতা বজায় রাখতে এবং স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে কাঠবাদাম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কাঠবাদামে ভিটামিন -ই ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে, যা ত্বক সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করে, ওজন বৃদ্ধি ও অতিরিক্ত খাওয়ার অভ্যাসও প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে।পুষ্টি সমৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। পাকস্থলির পরিপাক ক্রিয়া ঠিক রাখতে সহায়তা করে।

কাঠবাদামের অপকারিতা –
অতিরিক্ত কাঠবাদাম খাওয়ার ফলে হজমের সমস্যা হয়। অতিরিক্ত কাঠবাদাম খাওয়ার ফলে ওজন বৃদ্ধি পায়। অতিরিক্ত এই বাদাম খেলে শরীরে রক্তচাপের ওষুধ ও অ্যান্টিবায়োটিক কোনো ওষুধ কাজ করতে পারেনা মাঝেমধ্যে । গর্ভবর্তী মহিলাদের খেয়ারেও অতিরিক্ত মাত্রায় কাঠবাদাম খেলে বাচ্চার সমস্যা হতে পারে।

পেস্তাবাদামের উপকারিতা –
অন্যান্য বাদামের তুলনায় পেস্তাবাদামে ক্যালোরি কম থাকে। এই বাদামে প্রোটিন ফাইবারের পাশাপাশি, এতে সর্বোচ্চ পরিমাণে অ্যামিনো অ্যাসিডও থাকে। যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পেস্তাবাদাম ওজন কমাতে সাহায্য করে। রক্তে চিনির মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। পেস্তাবাদাম খাওয়ার ফলে রক্তের কোলেস্টেরল মাত্রা কমে যায়৷ ফলে রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকে।

পেস্তাবাদামের অপকারিতা –
অতিরিক্ত পেস্তাবাদাম খাওয়ার দরুন শরীরের ওজন বৃদ্ধি পায়, রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়। অতিরিক্ত ভক্ষণের ফলে হজমের সমস্যা হতে পারে। যারা কিডনির সমস্যায় ভুগছেন তাদের পেস্তাবাদাম খাওয়া একদমই অনুচিত। অতিরিক্ত পেস্তাবাদাম খেলে কিডনিতে পাথর সৃষ্টি হতে পারে। এমনকি যার এলার্জি আছে, পেস্তাবাদাম খেলে এলার্জির সমস্যা আরও বাড়তে পারে।

হ্যাজেল বাদাম এর উপকারিতা-
এই বাদাম পুষ্টিতে সমৃদ্ধ থাকে তাই এই বাদাম খেলে পুষ্টির মান বজায় থাকে। এই বাদাম হার্টের জন্য খুবই স্বাস্থ্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে। দেহে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। হ্যাজেল বাদাম হজমের ক্ষেত্রেও সাহায্য করে। প্রতিদিন এই বাদাম খেলো ত্বক এবং চুল সুস্থসবল থাকবে। ত্বকে আসবে উজ্জ্বল ভাব চুল হবে মজবুত।
হ্যাজেল বাদাম এর অপকারিতা-
অতিরিক্ত মাত্রায় খেলে বদহজম হতে পারে। আজ যাদের এলার্জি রয়েছে তারা ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খাবেন।

আখরোট এর উপকারিতা-
হার্টের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে সাহায্য করে। ওমেগা৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকার ফলে, প্রতিদিন আখরোট খেলে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এমনকি রোজ যদি নিয়ম করে আখরোট খাওয়া হয় তাহলে স্মৃতিশক্তি বাড়ে। চুল ঘন মজবুত ও বৃদ্ধি পেতে সহায়তা করে।

আখরোট এর অপকারিতা –
এলার্জি আছে তার অ্যালার্জি হতে পারে। অতিরিক্ত ভক্ষনে,
লিভারের সমস্যা দেখা দিতে পারে । এমনকি কালো আখরোটে থাকা ফাইটেটস শরীরের আয়রন শুষে নিতে পারে, যার ফলে শরীরে আয়রনের ঘাটতি দেখা দেবে।

ব্রাজিল বাদামের উপকারিতা-
ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম এবং পটাসিয়ামের একটি দুর্দান্ত উত্স যা হৃদরোগের জন্য দুর্দান্ত। ব্রাজিল বাদামে উপস্থিত প্রচুর ফাইবার সহ এই খনিজগুলি হৃৎপিণ্ডকে সঠিকভাবে কাজ করতে সহায়তা করে। এটি শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল কমিয়ে কোলেস্টেরলের মাত্রাও নিয়ন্ত্রণ করে। সামগ্রিকভাবে, এটি হৃদরোগ এবং ব্যাধি এবং এমনকি স্ট্রোকের মতো পরিস্থিতি প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে। গবেষণায় দেখা গেছে যে ব্রাজিল বাদাম নিয়মিত সেবন মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারে। মস্তিষ্ককে আরও ভালভাবে কাজ করতে সহায়তা করে। নিয়মিত ব্রাজিল বাদাম খাওয়া নিশ্চিত করুন যে আপনার চুল শুধু ঝরে পড়া বন্ধ করে না বরং আগের চেয়ে সুন্দর ও ঘন হয়। ব্রাজিল বাদাম চুলের ফলিকল এবং শিকড়গুলিতে প্রচুর পুষ্টি সরবরাহ করে এবং সেলেনিয়ামের মাত্রা বাড়ায়।

ব্রাজিল বাদামের অপকারিতা-
অন্যান্য খাবারের মতো, যদি এই বাদমও অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণ করা হয়,তাহলে বিপরীত প্রভাব ফেলতে পারে।এই বাদামে যেই পরিমাণ পুষ্টি উপাদান এবং ক্যালোরি মজুত আছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে, দিনে ৩টির বেশি ব্রাজিল বাদাম খাওয়া উচিত না । এছাড়া যাদের এলার্জির ধাত রয়েছে তারা ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খাবেন।

কাঁচা বাদাম খাওয়ার উপকারিতা-

ভেজানো কাঁচা বাদাম খেলে সব বেশি উপকার পাওয়া যায়। বাদাম ভাজলে আগুনের তাপে উপকারী মনোআন্স্যাচুরেটেড এবং পলিআন্স্যাচুরেটেড ফ্যাট নষ্ট হয়ে যায়। তেলে ভাজা বাদাম খেলে রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে। কাঁচা বাদাম খাওয়ার আগে জল দিয়ে আগে ভালকরে পরিষ্কার করে নিতে হবে, কারণ, এতে ক্ষতিকর ব্যক্টেরিয়া এবং ফাঙ্গাস থাকতে পারে। যদি সারা রাত কাঁচা বাদাম ভিজিয়ে রাখা হয়, দিয়ে সকালে যদি তা খাওয়া যায় তাহলে ত্বকের উপকার হয় এবং পুষ্টিগুণ সম্পন্ন থাকে এতে।

You may also like

Mahanagar bengali news

Copyright (C) Mahanagar24X7 2024 All Rights Reserved