মহানগর ডেস্কঃ যদি জানা যায় কোনো সাংসদ বিধায়ক ঘুষ নিয়েছেন ভোটের জন্য, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে এই অভিযোগের ভিক্তিতে কঠোর আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে, কোনো সুরক্ষাকবচ দেওয়া হবেনা। বড় রায় দিল সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালতের রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বে ৭ বিচারপতিদের নিয়ে বেঞ্চ গঠিত হয়, তারপর সোমবার এই রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। ভোটের পূর্বে ‘ভোটের বদলে নোট মামলায়’ বলা হয়েছে কোনও সাংসদ বা কোনো বিধায়ক যদি ঘুষ নিয়েছেন বলে প্রমাণিত হয় বা যদি এমন অভিযোগ প্রকাশ্যে আসে তাহলে সেই ব্যক্তির বিরুদ্ধে সুরক্ষাকবচ ছাড়া যথাযথ আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ” সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে ১৯৯৮ সালে যেই রায় দেওয়া হয়েছিল, তা ভারতীয় সংবিধানের ১০৫ ও ১৯৪ ধারা অনুযায়ী ওই অনুচ্ছেদের বিরোধী। বিবেচনা করে এই কারণ অতীতের দেওয়া রায় সুপ্রিম কোর্ট বাতিল করে দিয়েছে । অর্থাৎ, সুপ্রিম কোর্টের সোমবারের রায়ে জানিয়েছে, সংসদ এর ব্যাক্তি হোক বা বিধানসভার উচ্চপদস্থ কোনো ব্যক্তি হোক, যদি জানা যায় দেশের আইনপ্রণেতারা কোনো রকম ঘুষের সাথে যুক্ত আছেন বা এমন অভিযোগ সামনে আসে, তাহলে সেই ব্যক্তির ক্ষেত্রে উপযুক্ত কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। কোনো ছাড় পাবেন না সে যত বড় পদেই নিযুক্ত থাকুন না কেন, যাঁদের নাম এমন কাজের সাথে যুক্ত থাকবে প্রত্যেকের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ করা হবে।
এদিন বেঞ্চে ডিওয়াই চন্দ্রচূড় নেতৃত্ব ছাড়াও সাত বিচারপতি বেঞ্চে ছিলেন। এনারা হলেন- পিএস নরসিংহ, মনোজ মিশ্র, এস বোপান্না, জেবি পার্দিওয়ালা, সঞ্জয় কুমার এবং এমএম সুন্দ্রেশ। এই মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় জানিয়েছেন, ‘‘আইনপ্রণেতাদের দুর্নীতি এবং ঘুষ ভারতের সংসদীয় গণতন্ত্রকে ভেঙে দিচ্ছে।’ এর পাশাপাশি তিনি আরও বলেন যে, ‘পিভি নরসিংহ রাও মামলার রায়ে এক অদ্ভুত পরিস্থিতি তৈরি হয়, যেখানে কোনও আইনপ্রণেতা যিনি ঘুষ নিয়ে ভোট দিয়েছেন, তাঁর বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা যায় না, পাশাপাশি যিনি ঘুষ না নিয়ে ভোট দিয়েছেন, তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা যায়।’ ৪ মার্চ সুপ্রিম কোর্টের তরফে বলা হয়, “সংবিধানের স্বাধীকার ঘুষকে মান্যতা দেয় না। ১৯৯৮ সালের ওই রায়, সংবিধানের ১০৫ ও ১৯৪ অনুচ্ছেদের পরিপন্থী। জনপ্রতিনিধিদের দুর্নীতি ও ঘুষ সাধারণ জনজীবন নষ্ট করতে পারে। আমরা সমস্ত দিক পর্যালোচনা করেই পুরনো সিদ্ধান্তকে বাতিল করছি।”
মূলত, এই মামলা ১৯৯৩ সালে নরসিংহ রাও সরকারের আমলে এক অভিযোগ কে কেন্দ্র করে। পিভি নরসিংহ রাও মামলার কথা বলতে গেলে ১৯৯৩ সালের রায় সংক্রান্ত বিষয়ে বলতে হবে। সেই বছরে জুলাইয়ে অনাস্থা প্রস্তাব আনা হয়েছিল তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে। খুব কম সময়ের মধ্যে নিজের দল একটুর জোরে বেচেঁ গিয়েছিলেন কংগ্রেস সরকার। ভোটের সংখ্যার ব্যবধান খুব একটা বেশি ছিলোনা, সেই বছর কোনো রকমে রক্ষা পায় কংগ্রেস সরকার। আর তারপরেই এই অভিযোগ প্রকাশ্যে আসতে শুরু করে যে “সরকার বাঁচাতে ভোট কেনা হয়েছে”। এর পর ১৯৯৮ সালে সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ বিচারপতি নিয়ে গঠিত সাংবিধানিক বেঞ্চ সাংসদ এবং বিধায়কদের অর্থ সম্পর্কে তার বদলে ভোট দেওয়া বা ভাষণ দেওয়ার বিষয়ে সুরক্ষাকবচ দিয়েছিল। ওই ১৯৯৮ সালে শীর্ষ আদালতের রায়ে জনপ্রতিনিধিদের বক্তব্য রাখা বা ভোট দেওয়ার জন্য ঘুষ নেওয়ার ক্ষেত্রে রক্ষাকবচ দেওয়া হয়েছিল।সেই রায়ের পর ২০১২ সালের একটি মামলায় ঝাড়খণ্ড হাইকোর্ট এই রায়কে গ্রহণ না করে, সুপ্রিম কোর্টে এই সংক্রান্ত বিষয়ে মামলা করেছিল। ২০২৩ সালের এই মামলার রায় সংরক্ষিত রেখেছিল শীর্ষ আদালত। আজ, ৪মার্চ সোমবার, সুপ্রিম কোর্ট আগের রায় থেকে সরে এসে নতুন রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। সেই সুরক্ষাকবচ দেওয়া যাবে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দেশের শীর্ষ আদালতের স্পষ্ট বার্তা, ভোটের বদলে নোট মামলায় কোন সাংসদ বা কোনো বিধায়ক ব্যাক্তি ঘুষ নিয়েছেন, যদি এমন অভিযোগ প্রকাশ্যে আসে তাঁর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ হবে, কোনও ভাবেই ঘুষকাণ্ডে ছাড় দেওয়া হবে না কোনো প্রভাবশালী ব্যক্তিকেই। যাদের নাম এই ঘুষ কাণ্ডে যুক্ত থাকবে, তাঁরা আর কোনো ভাবেই সুরক্ষাকবচের ছত্র ছায়ায় থাকতে আর পারবেন না, শাস্তি অনিবার্য ।
শীর্ষ আদালতের এই রায় ঘোষণা মাত্র, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সুপ্রিম কোর্টের রায়কে স্বাগত জানিয়ে এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন, “অসাধারণ রায় মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের। এই রায় স্বচ্ছ রাজনীতিকে নিশ্চিত করবে এবং বিচারব্যবস্থায় মানুষের আস্থা আরও দৃঢ় করবে।”