Home National সংসদে ভোট-অন-অ্যাকাউন্ট পেশ করলেন নির্মলা, কর কাঠামো অপরিবর্তিত, এলো রাম মন্দির প্রসঙ্গ

সংসদে ভোট-অন-অ্যাকাউন্ট পেশ করলেন নির্মলা, কর কাঠামো অপরিবর্তিত, এলো রাম মন্দির প্রসঙ্গ

by Mahanagar Desk
47 views

মহানগর ডেস্ক:  সংসদে দেশের অর্থমন্রী ভোট-অন-অ্যাকাউন্ট পেশ করলেন। এটা পূর্ণাঙ্গ বাজেট নয়। তবে মোটামুটি বলা যায় ভোটের কথা মাথায় রেখেই গত ৫ বছরে সরকার কি উন্নয়নমূলক কাজ করেছে তার প্রচার এই ভোট-অন-অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে করলেন অর্থমন্ত্রী নির্মকা সীতারামন। এটা এক কথায় ভোটের প্রচার বললেও অত্যুক্তি হবে না।

তবে ফিসক্যাল ডেফিজিট ৫% বেশি। তারফলে মুদ্রাস্ফীতি কি করে নিয়ন্ত্রিত হবে তার দিশা নেই কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর এই ভোট-অন-অ্যাকাউন্টে। তবে দেশের গত ৫ বছরের কর কাঠামোয় আর্থিক বৈষম্য বেড়েছে সেটা স্পষ্ট। এক শ্রেণির অর্থাৎ উচ্চবিত্তের হাতে টাকা এসেছে, সেটা শুধুই ওপর মহলে। সেই করের টাকায় সরকার সামাজিক সুরক্ষার কাজ করছে গরিব মানুষের জন্য। তবে তাতে সাধারণ মানুষের অনুদানের উপর নির্ভরশীলতা বেড়েছে, কর্মসংস্থানের বিষয়ে কোনও দিশা কিন্তু অর্থমন্ত্রীর ভোট-অন-অ্যাকান্টে নেই। এটাকে স্থায়ী উন্নয়ন বলা যায় না। স্থায়ী উন্নয়ন তখনই হয় যখন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়, এমনটাই বলছেন বিরোধীরা। ভোট-অন-অ্যাকাউন্টে নির্মলা সীতারামন আয়কর কাঠামো অপরিবর্তিত রেখেছেন এটা একদিকে ভালো। তবে নির্বাচনের আগে এটা সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার একটা ছবি হিসাবে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

২০২৪-এর লেকসভা নির্বাচনের আগে নরেন্দ্র মোদী সরকারের এটাই শেষ অন্তর্বর্তীকালীন বাজেট পেশ। তবে এই বাজেট পূর্ণাঙ্গ নয়, অন্তর্বর্তী বাজেট বা ভোট-অন-অ্যাকাউন্ট। তবে অর্থমন্ত্রী সবটাই ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাফল্য, রাম মন্দির প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে হয়েছে, জুলাই মাসে নতুন সরকারে এসে তিনি নতুন বাজেট পেশ করবেন বলে মন্তব্য করেছেন। অট্থমন্ত্রী একদিকে বলেছেন, দেশের জিডিপি বেড়েছে, কর্মসংস্থান বেড়েছে। পাশাপাশি তিনিই আবার বলেছেন, ৮০ কোটি দেশবাসীকে বিনা পয়সায় রেশন দেওয়া হচ্ছে এবং হবে। এই দুটো বক্তব্য স্ববিরোধী।

নির্মলা সীতারামন এদিন সংসদে বলেন, “ভারতীয় অর্থনীতি গত ১০ বছরে একটা বড় পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে। সবকা সাথ সবকা বিকাশ আমাদের লক্ষ্য। ব্যবসা সৃষ্টি হয়েছে। মানুষ আমাদের বেশি করে ভোট দিয়েছে। আমরা চাই একটা সুস্থ, সফল ভারত গড়তে, যাতে দেশের সব অংশের মানুষ উপকৃত হন। আমরা আমাদের চেষ্টায় মহামারি মোকাবিলা করতে পেরেছি। দেশের তরুণ প্রজন্মের আশা-আকাঙ্খা বেড়েছে। আমরা যে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণন করেছি তা সবার জন্য। তাই রান্নার গ্যাস, বাড়ি, পানীয় জল দিতে পেরেছি। ৮০ কোটি মানুষকে রেশন দিতে পেরেছি। আমরা যেহেতু সব স্তরের মানুষের উন্নয়ন করছি তাই সার্বিক উন্নয়নের দিকে দেশকে এগিয়ে নিতে পেরেছি। সামাজিক ন্যায় আমাদের কাছে শুধুই রাজনৈতিক স্লোগান নয়, এটাকে বাস্তবায়নের কাজ করছি। আমাদের সরকার সেই লক্ষ্যে চলছে। সামাজিক ঝড় যতোই হোক আমরা সবার কাছে উন্নয়ন পৌঁছে দিতে পেরেছি।”

তিনি আরও বলেছেন, “প্রধানমন্ত্রীর লক্ষ্য যুব সমাজ, মহিলা, কৃষক ও গরিব মানুষ। আমরা গরিব মানুষের আর্থিক স্থিতি বাড়াতে চাই। আমরা বিশ্বাস করি গরিব মানুষ যখন আর্থিক ভাবে স্বচ্ছল হয় তখনই উন্নয়ন সম্ভব বলে আমরা মনে করি। ৭.২ লক্ষ কোটি টাকা জনধন অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে সঞ্চয় হয়েছে। এর ফলে ৭৮ লক্ষ গ্রাহক ঋণ পেয়েছেন। যারা এখনও উন্নয়নের বাইরে তাদের জন্য পিএম বিশ্বকর্মা যোজনা শুরু হয়েছে। ট্রান্স জেন্ডারদেরও উন্নয়নে আমা হয়েছে। ভারত এখন শুধু নিজেদের জন্য উন্নয়ন করছে তা নয়। আগের থেকে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে, ব্যবহৃত হবে নতুন প্রযুক্তি। জাতীয় শিক্ষানীতি যুবকদের ক্ষমতায়নে সহায়তা করবে,তারা কাজের উপযুক্ত হবে। ৩ হাজার আইটিআই, ৭টি আইআইটি করেছি। যুবকরা স্টার্টআপের মাধ্যমে নতুন স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে।”

অর্থমন্ত্রী বলেছেন, 

“আমাদের দেশে এশিয়ান গেমস হওয়ার ফলে সম্মান বেড়েছে। ৮০ জনের বেশি গ্র্যান্ড মাস্টার আছে। নারীদের ক্ষমতায়ন আমাদের লক্ষ্য,তাই ৩০ লক্ষ মুদ্রা যোজনার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কর্মক্ষেত্রে মেয়েদের অংশগ্রহণ বেড়েছে।
গ্রামে পিএম আবাস যোজনায় বহু মানুষকে বাড়ি দিয়েছি, এর অনেকটাই মহিলা মালিক, তাতে তাদের সম্মান বেড়েছে।
জিডিপি বলতে বোঝাচ্ছি গভর্নমেন্ট, ডেভেলপমেন্ট এবং পারফরম্যান্স। এখন মানুষ আগের থেকে বেশি রোজগার করছে। প্রকৃত আয় ৫০% বেড়েছে। মোদী সরকারের লক্ষ্য সমস্ত মানুষকে নিয়ে উন্নয়ন করা। সমস্ত স্তরের মানুষ অর্থনৈতিক বৃদ্ধিতে সামিল হয়েছেন। আমরা অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করছি। অসংগঠিত ক্ষেত্রের সংখ্যা কমেছে। পৃথিবীর পুজি দেশে আসছে। মুদ্রাস্ফীতি, মূল্যবৃদ্ধি ভালোভাবে মোকাবিলা করতে পেরেছি। কোভিড পরবর্তী নতুন পৃথিবীতে আমরা জিব২০-র নেতৃত্ব দিয়েছি। সারা বিশ্বে তখন চড়া সুদ, কম বিনিয়োগ ছিল। এই সময় ভারত সারা বিশ্বকে রাস্তা দেখাতে পেরেছে। ইউরোপের সঙ্গে ভারতের অর্থনৈতিক করিডোর নতুন রাস্তা দেখাবে।”

“বিকশিত ভারত মানে স্বচ্ছল ভারত। আমরা চাই সব ক্ষেত্র তার কাঙ্খিত বৃদ্ধিতে পৌঁছক, এটা ২০৪৭ এর মধ্যে সম্ভব হবে। সব ভারতবাসী যেন তাদের আশাআকাঙ্খা মেটাতে পারে। ভারতের সামনে বিপুল সভাবনা। লক্ষ্য উৎপাদন, কর্মসংস্থান বাড়িয়ে নতুন বিনিয়োগ আনা। রিফর্ম, ট্রান্সফর্ম নীতি নিয়ে সব রাজ্যকে সঙ্গে নিয়ে এগোতে চাই, লক্ষ্য দেশের আর্থিক বৃদ্ধি। কম সম্পদ ব্যবহার করে আর্থিক বৃদ্ধির কথা ভাবছি। তার জন্য ভাবনা চিন্তা চলছে। ভারতের পূর্বাঞ্চলকে বৃদ্ধির আওতায় আনতে পূর্বাঞ্চলে নজর দিচ্ছি। পিএম আবাস যোজনায় ৩ কোটি বাড়ি তৈরি করেছি। আগামী ৫ বছরে আরও ২ কোটি হবে। চাইছি বাড়ির ছাদে সৌর শক্তি উৎপাদনের ব্যবস্থা। যারা ভাড়া বাড়ি বা বস্তিতে থাকেন তাদের জন্য বাড়ি তৈরির উদ্যোগ নিয়েছি। অযোধ্যার রাম মন্দির প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে তৈরি হয়েছে। আমদের সরকার আরও মেডিক্যাল কলেজ তৈরি করতে চায়। সারভাইক্যাল ক্যানসার রোধে ৬ থেকে ১৪ বছরের শিশুদের নজরে রাখা হয়েছে।”

“আয়ুস্মান ভারত প্রকল্প সমস্ত আশা কর্মীদের কাছে পৌঁছে দোওয়া হবে। কৃষি ক্ষেত্রে পিএম কৃষি যোজনা ১০ লক্ষ কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি ফসল ওঠার পর যাতে কৃষকদের ক্ষতি কমানো যায়, সরকারি ও বেসরকারি সহায়তায় যাতে কৃষকদের ক্ষতি হ্রাস করা যায় সেই চেষ্টা করছি। ১১.৮ কোটি কৃষককে সরাসরি আর্থিক সুবিধা দিচ্ছে সরকার।
আত্মনির্ভর ভারতের আওতায় কৃষি ক্ষেত্রকে আনছি। দুগ্ধজাত পণ্য যারা তৈরি করে তাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমাদের দেশে দুধ উৎপাদন সবচেয়ে বেশি তবে উৎপাদনশীলতা বজায় রাখার চেষ্টা করছি। মাছের উৎপাদনশীলতা বেড়েছে, আরও বাড়াবার উদ্যোগ নিয়েছি।”

“লাখপতি দিদি”তে ১ কোটি মহিলা স্বনির্ভর হয়েছেন। এরা অন্য মহিলাদের কাছে একটা বড় উদাহরণ। প্রযুক্তিগত প্রকল্প, নতুন প্রযুক্তি উৎপাদনশীলতা বাড়ায়, বিশ্ববাজারে আমাদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ায়। আমাদের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বলতেন জয় জওয়ান, জয় কিষান, হয় উন্নয়ন। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী তার সঙ্গে জয় অনুসন্ধান যোগ করেছেন। বিমান, রেল, পরিবহণ ক্ষেত্রে বিশেষ ভাবনা চিন্তা নিয়েছে কেন্দ্র। মেট্রোরেল দেশের গতিশীলতা বাড়িয়েছে। বিকশিত ভারতের কথা ভাবছি। যাতে লক্ষ্যে পৌঁছনো যায়। আমাদের এখানে দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি মোকাবিলায় রাজ্যগুলিকে সাহায্য করব। আমাদের সরকার মানুষের আশা-আকাঙ্খায় পৌঁছতে চায়। আমরা তরুণ ভারত তৈরির শপথ নেবো। ২০১৪-র আগে যে সব চ্যালেঞ্জ ছিল তা সঠিকভাবে মোকাবিলা করতে পেরেছি।
জুলাই মাসে যে বাজেট হবে তাতে আমাদের সরকার নতুন বাজেট পেশ করবে। রিভাইসড এস্টিমেট ৪০ লক্ষ কোটি টাকা ধরা হয়েছে। ৩০ লক্ষ কোটি টাকা বেশি খরচ হচ্ছে। ২০২৪-২৫ এর বাজেটে কর ২৪ লক্ষ কোটি টাকা। ৫.১% ফিসক্যাল ডেফিজিট জিডিপির।”
“এখন বেসরকারি বিনিয়োগ আগের থেকে বেড়েছে। আমি ভোট অন অ্যাকাউন্ট চাইছি ২০২৪-২৫ সালের জন্য। প্রত্যক্ষ কর অনেক বেড়েছে, এই টাকা দেশের উন্নয়নের কাজে লাগবে। কর দাতাদের অভিনন্দন। ৭ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয় কর ছাড়। কর্পোরেট কর কমানো হয়েছিল। গত ৫ বছরে আমরা কর দাতাদের পরিষেবা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আমরা 26 S চালু করেছি করদাতাদের সুবিধার কথা ভেবে। গড়ে ১০ দিনের মধ্যে আয়কর রিটার্ন দেখে দিচ্ছি। জিএসটি শিল্পের উপর দায় কমিয়েছে এবং ৯৪% ব্যবসায়ী মনে করছে নতুন জিএসটি প্রকল্পতে যাওয়া প্রয়োজন। জিএসটি সংগ্রহ দ্বিগুণ হওয়ায় রাজ্যগুলি লাভবান হয়েছে।”

“আমরা কর কমিয়েছি, তার ফলে জিনিসপত্রের দাম কমেছে, আমদানি কর কমানোর ফলেও জিনিসপত্রের দাম কমেছে।
আমাদের কর প্রস্তাবে আমরা কোনও পরিবর্তনের কথা বলছি না, যেহেতু এটা অন্তর্বর্তীকালীন বাজেট। সব প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর একই থাকছে। যে কর সংক্রান্ত মামলা ঝুলে আছে এবং যেগুলো সৎ করদাতাদের চিন্তার কারণ হচ্ছে, আমরা আয়কর দফতরে যে দাবি ছিল তাতে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত দাবি ৩১ মার্চের মধ্যে মঞ্জুর করছি। এর ফলে বহু করদাতা উপকৃত হচ্ছেন।
কেভিড সংক্রমণের সময় কাটিয়ে উঠেছি। এখন ভবিষ্যতের দিতে তাকাবো। ২০১৪ গে কোথায় ছিলাম, এখন কোথায় আছি তা নিয়ে শ্বেতপত্র তৈরি করেছি।”

You may also like

Mahanagar bengali news

Copyright (C) Mahanagar24X7 2024 All Rights Reserved