মহানগর ডেস্ক: অনেকেই বলেন,বয়েসটা একটা সংখ্যামাত্র (Age Is Number Only)। বয়েস বাড়লে মানুষের গতি থেকে সবকিছুতেই ঢিমেতালে একটা ব্যাপার এসে যায়। অনেকে বয়েসকে তোয়াক্কা না করে যুবকদের মতো সমানে চালিয়ে যান লড়াই। বাসে ট্রামে ট্রেনে আর সব কমবয়েসিদের সঙ্গে সমানে পাল্লা দিয়ে থাকেন। আবার অনেককেই গ্রাস করে অকাল বার্ধক্য। তারা যেন অল্প বয়েসেই বুড়ো হয়ে যান। অন্যদিকে বয়েসকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দাপিয়ে কাজ করেন। যেমন দক্ষিণের তামিলনাডুর এক একশো আট বছরের এক মহিলা (One Hundred And Eight Years Old)। এই বয়সে বেঁচে কেউ যদি বেঁচেও থাকে, তার পরিণতি কী হয়, সে সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই জানা আছে।
কিন্তু তামিলনাডুর একশো আট বছরের কমলকন্নি (Tamil nadu) যেন এক ভাবনা ওলটপালট করে দেওয়া এক উদাহরণ। একশো বছর পেরিয়েও তিনি সবাইকে চমকে দিয়েছেন। তামিলনাডুর থেনি জেলায় তাঁর জন্ম ১৯১৫ সালে। অল্প বয়েস থেকেই সীমান্তবর্তী কেরলে এলাচের খেতে কাজ করা শুরু করেছিলেন। তখন কতই বা বয়েস। আর এখন তাঁর বয়েস একশো আট। কিন্তু এসবে এমন এক কাজ করেছেন তিনি, যা জেনে সবারই চমকে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়েছে।
ন্যাশনাল স্ট্যাটিসটিকাল অফিসের মতে, ভারতে সব থেকে শিক্ষিত রাজ্য হল কেরল। এই রাজ্যে শিক্ষিতের হার ৯৬.২ শতাংশ। এই রাজ্যে সরকার এডুকেশন ফর অল অ্যান্ড অলওয়েজ শিরোনামে একটি শিক্ষা সংক্রান্ত উদ্যোগ নিয়েছে। এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য প্রবীণ নাগরিকদের শিক্ষা,জ্ঞান দেওয়ার ব্যবস্থা করা। সম্পূর্ণ শাস্ত্র লিটেরাসি প্রোগ্রামের অধীনে প্রবীণ,বয়স্করা যাতে নিজেদের নাম সই করতে পারে, তার ব্যবস্থা করা হয়। অনেকটা তামিলনাডুর মাস লিটেরাসি মুভমেন্টের মতো।
১০৮ বছরের কমলকন্নি তামিলনাডুর থেনি থেকে কেরলে জীবিকার খোঁজে এসে সেখানে এলাচের খেতে কাজ শুরু করেছিলেন। তখন তাঁর বয়েস ছিল খুবই কম। সংসার বাঁচাতে তাঁর আর পড়াশোনাটা দ্বিতীয় স্ট্যান্ডার্ডের বেশি হয়নি। আর একশো আট বছর বয়েসে এসে কেরলের এই প্রকল্পের অধীনে তিনি পড়াশোনা করতে শুরু করেন। তাঁর এই বয়েসে পড়াশোনার ওপর অদম্য আগ্রহ দেখে সবাই যেমন বিস্মিত, তেমনই শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। কেননা এই বয়েসে এমন কাজ অসম্ভবই বটে। কেরল সরকারের এই প্রকল্পে তিনি যে একটি উদাহরণ তা মানছেন সবাই। এই বয়েসে পড়াশোনার প্রতি তাঁর নিবেদিত প্রাণ দেখে অনেকেরই মুখে কথা সরছে না।
একশো উত্তীর্ণ কমলকন্নি তামিল ও মালয়ালম ভাষায় লিখতে পারেন। লিটারেসি প্রোজেক্টের পরীক্ষায় তিনি ৯৭ শতাংশ নম্বর পেয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। বয়েসের তোয়াক্কা না করে তিনি যে এই প্রকল্পে যুক্ত হয়েছেন, সে কারণে কেরলের অসংখ্য সংগঠক তাঁর প্রতি রীতিমতো কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। আগামী মাসে তাঁর নাতিনাতনিরা কমলকন্নির একশো ন বছর পালন করবে। এমন বিরল উদাহরণে আমাদের সবারই গর্বিত হওয়ার কথা।