Home National বিরোধীরা সংখ্যালঘু, “এক দেশ, এক নির্বাচন”-এর পক্ষেই সুপারিশ কোবিন্দ কমিটির

বিরোধীরা সংখ্যালঘু, “এক দেশ, এক নির্বাচন”-এর পক্ষেই সুপারিশ কোবিন্দ কমিটির

by Mahanagar Desk
61 views

মহানগর ডেস্ক : “এক দেশ, এক নির্বাচন”-এর পুপারিশ করল প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের নেতৃত্বে গঠিত উচ্চ পর্যায়ের কমিটি। কমিটির এই সুপারিশ শোনামাত্র বিরোধী দলগুলি আগের মতোই একই ভাবে আপত্তি তুলে বলেছে, লোকসভা নির্বাচনের সঙ্গে সমস্ত রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন করানো অসাংবিধানিক।

তবে রামনাথ কোবিন্দ কমিটির বক্তব্য, মোট ৩২টি রাজনৈতিক দল লোকসভা ভোট ও রাজ্যগুলির বিধানসভা ভোট একসঙ্গে করা অর্থাৎ “এক দেশ, এক নির্বাচন”-এর পক্ষে সায় দিয়েছে। এর মধ্যে ২৬টি দলই বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ-র শরিক। মোট ১৫টি রাজনৈতিক দল “এক দেশ, এক নির্বাচন”-এর বিরুদ্ধে মত দিয়েছে। এই ১৫টি দলের মধ্যে ১০টি দল বিরোধীদের জোট ইন্ডিয়া-র শরিক। ” এক দেশ, এক নির্বাচন” নিয়ে কংগ্রেস অভিযোগ কটাক্ষ করে বলেছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী “এক দেশ, শূন্য নির্বাচন” চাইছেন। কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র জয়রাম রমেশের অভিযোগ, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর লক্ষ্য খুবই স্পষ্ট। উনি লোকসভায় দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা চাইছেন। সেই কারণেই তিনি ৪০০ আসনের লক্ষ্য স্থির করেছেন। তবে ঝোলা থেকে বেড়াল বেরিয়ে পড়েছে। বিজেপি আসলে বাবাসাহেব অম্বেডকরের সংবিধান পুরোপুরি ধ্বংস করে দিতে চাইছে। তার একটাই লক্ষ্য, দেশে আর কোনও নির্বাচন হবে না।’’

“এক দেশ, এক নির্বাচন” নিয়ে প্রথম থেকেই বিরোধীদের আপত্তি ছিল। বিরোধীরা বারবার অভিযোগ করেছে, “এক দেশ, এক নির্বাচন” অসাংবিধানিক বলে। লোকসভার সঙ্গে বিধানসভা ভোট করাতে গিয়ে বিধানসভা মেয়াদ ফুরনোর আগেই তা ভেঙে দেওয়া জনমতের বিরুদ্ধে চাপ সৃষ্টি করা। রামনাথ কোবিন্দ কমিটির যুক্তি, সংখ্যাগরিষ্ঠতার অভাব, রাজনৈতিক অস্থিরতার মতো নানা কারণেই আগে অনেকবার লোকসভা বা বিধানসভা নির্দিষ্ট মেয়াদের আগে ভেঙে দেওয়া হয়েছে। সংবিধানের ৮৩ ও ১৭২-তম অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, লোকসভা বা বিধানসভার মেয়াদ পাঁচ বছর হতে হবে। তার বেশি হতে পারবে না। সংবিধানের কোথাও বলা নেই পাঁচ বছরের কম মেয়াদ লোকসভা বা বিধানসভার হতে পারবে না। একসঙ্গে লোকসভা ও বিধানসভার নির্বাচন মানুষের মৌলিক অধিকারে হস্তক্ষেপ করছে না। সংবিধানের ১৪, ১৯ ও ২১-তম অনুচ্ছেদেও হস্তক্ষেপ করছে না।

প্রথম থেকেই “এক দেশ, এক নির্বাচন”, নিয়ে বিরোধীদের দাবি ছিল, “এক দেশ, এক নির্বাচন”, গণতান্ত্রের পরিপন্থী। তবে বিরোধীদের এই অভিযোজ খারিজ করে কোবিন্দ কমিটি বলেছে, এই ব্যবস্থায় অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে বাধা সৃষ্টি করছে না।
বিরোধীদের অভিযোগ ছিল, লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচন একসঙ্গে করা যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো, রাজ্যের অধিকারে আঘাত নামিয়ে আনার সামিল। কোবিন্দ কমিটি যুক্তি, সংবিধানের ৩২৭ ও ৩২৮-তম অনুচ্ছেদে সংসদ ও রাজ্যকে নির্বাচন সংক্রান্ত ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, একসঙ্গে লোকসভা, বিধানসভার ভোট হলে সেই অধিকারে কোনও ভাবেই হাত পড়বে না। যখন থেকে রামনাথ কোবিন্দকে মাথায় বসিয়ে ” একদেশ, এক নির্বাচন” সংক্রান্ত কমিটি হয়েছে, তখন থেকেই কংগ্রেস, তৃণমূল, সিপিএম, ডিএমকে-র মতো প্রধান বিরোধী দলগুলি লোকসভা নির্বাচনের সঙ্গে সমস্ত রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন আয়োজনের বিরুদ্ধে ছিল মত প্রকাশ করে এসেছে।

সরকারি পরিসংখ্যান থেকে জানা যাচ্ছে, যে ২৬টি এনডিএ-র শরিক দল “এক দেশ, এক নির্বাচন” চেয়েছে, তারা ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে মিলিত ভাবে ৪৮.৩ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। “ইন্ডিয়া” জোটের যে ১০টি দল এক দেশ, এক নির্বাচনর বিরোধিতা করেছে, তারা মিলিত ভাবে গত ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে ৩৫.৯ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। রামনাথ কোবিন্দ কমিটিতে সুপ্রিম কোর্টের চার জন প্রাক্তন প্রধান বিচারপতির মত নেওয়া হয়েছে। প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র, রঞ্জন গগৈ, শরদ অরবিন্দ বোবদে, উদয় উমেশ ললিত—চার জনই “এক দেশ, এক নির্বাচন”-এর পক্ষে দাঁড়িয়েছেন। হাই কোর্টের মোট ১২ জন অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতিও তাঁদের মত জানিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে মাত্র তিন জন বিরোধীতা করেছেন। এই তিনজনের একজন দিল্লি হাই কোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি এ পি শাহ, একজন কলকাতা হাই কোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি গিরিশচন্দ্র গুপ্ত ও আর একজন মাদ্রাজ হাই কোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে বিরোধীদের সংখ্যার চাইতে ” এক দেশ, এক নির্বাচন”-এর সমর্থক অনেক বেশি, তাই বিরোধীতা ধোপে টিকছে না। তাহলে কি নরেন্দ্র মোদী এবং আরএসএস-এর স্লোগান অনুযায়ী দেশ কি এক দেশ, এক নিশান, এক প্রধান” হওয়ার দিকেই এগোচ্ছে?

You may also like

Mahanagar bengali news

Copyright (C) Mahanagar24X7 2024 All Rights Reserved