মহানগর ডেস্ক: পশ্চিমবঙ্গের রাজকোষে ঋণের সমস্যা নতুন কিছু নয়। ২০১১ সালে রাজ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় আসার পর থেকেই তাঁর জন্য একটি জরুরি তহবিল সব সময় নবান্ন তৈরি রাখছে। তার পরেও বাজার থেকে ঋণ করা টাকা সুদে-আসলে শোধ করতেই রাজ্যের কোষাগার শূন্য হয়ে যাচ্ছে। এ বার রাজ্যের আয়-ব্যয়ের হিসেব-নিকেশ পরীক্ষা করে নতুন অভিযোগ তুলেছে সিএজি। এই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, গত বিধানসভা ভোটের আগে ২০২০-২০ অর্থবর্ষে স্বাস্থ্যসাথী, কন্যাশ্রী, রূপশ্রীর মতো প্রকল্প চালাতে গিয়ে বাজেটের বাইরেও গিয়েও ঋণ নিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার।
সিএজি-র ওই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২০-২১ আর্থিক বছরে এই ধরনের প্রকল্পের জন্য রাজ্য সরকার নিজে ধার না করে বাজেটের হিসাব খাতের বাইরে গিয়ে ঋণ নিয়েছে বিভিন্ন সরকারি সংস্থার মাধ্যমে। এই ঋণের অঙ্ক প্রায় ৪৩১২ কোটি টাকা। দেখা যাচ্ছে, বাজেটের হিসেব-নিকেশে এই দেনার তথ্য উল্লেখ না থাকলেও, তার দায় গিয়ে পড়েছে সেই রাজ্যের কোষাগারেই, যেটা হওয়ার কথা ছিলই। সিএজি রিপোর্টে বলা ২০১৬-১৭ থেকে ২০২০-২১ এই পাঁচটি অর্থবর্ষে রাজ্যের আয়, ব্যয়, ঘাটতি, ঋণ ইত্যাদি হিসাব পরীক্ষা করে সিএজি এই রিপোর্ট প্রকাশ করেছে । সেই রিপোর্টে সিএজি লিখেছে, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের রাজকোষ ঘাটতি বা আয়-ব্যয়ের ফারাকের মোট টাকার পরিমাণ বাড়ছে। রাজ্যের জিডিপি বা জিএসডিপি-র তুলনাতেও ওই ঘাটতির হার অনেকটাই ঊর্ধ্বমুখী। সেই ঘাটতি মেটাতে প্রতি বছরই বিরাট পরিমাণ অর্থ রাজ্যের তৃণমূল সরকারকে বাজার থেকে ধার করতে হচ্ছে ঘাটতি মেটাতে। তবে এই ধারের টাকারও সিংহভাগ চলে যাচ্ছে পুরনো ধার সুদে-আসলে শোধ করার জন্য। এর ফলে পরিকাঠামো উন্নয়ন, যেমন সড়ক, সেতু-সহ নতুন পরিকাঠামো বা স্থায়ী সম্পদ তৈরির জন্য রাজ্যের হাতে বিশেষ টাকা আর অবশিষ্ট থাকছে না। সিএজি বলছে, এ ভাবে ধার করা টাকা দিয়েই পুরনো ঋণ শোধ করে বেশিদিন সরকার চলতে পারে না।
২০১৬-১৭ থেকে ২০২০-২১— এই পাঁচটি অর্থবর্ষে রাজ্যের আয়, ব্যয়, ঘাটতি, ঋণের হিসাব পরীক্ষা করে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে সিএজি। সেই রিপোর্টে সিএজি জানিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের রাজকোষ ঘাটতি বা আয়-ব্যয়ের ফারাক মোট অঙ্কের হিসেবে বাড়ছে। রাজ্যের জিডিপি বা জিএসডিপি-র তুলনাতেও ওই ঘাটতির হার ঊর্ধ্বমুখী। সেই ঘাটতি মেটাতে প্রতি বছরই বিরাট পরিমাণ অর্থ রাজ্যের তৃণমূল সরকারকে বাজার থেকে ধার করতে হচ্ছে। কিন্তু তারও সিংহভাগ চলে যাচ্ছে পুরনো ধার সুদে-আসলে শোধ করতে। ফলে সড়ক, সেতু-সহ নতুন পরিকাঠামো বা স্থায়ী সম্পদ তৈরির জন্য রাজ্যের হাতে বিশেষ টাকা বেঁচে থাকছে না। সিএজি বলছে, এ ভাবে ধার করা টাকা দিয়েই পুরনো ঋণ শোধ করা বেশিদিন চলতে পারে না। বাজেটের বাইরে ঋণ নিয়ে বিভিন্ন প্রকল্প চালানো নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে সিএজি। ২০২১-এর মার্চ পর্যন্ত রাজ্যের রাজকোষের পরিস্থিতি নিয়ে তাদের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০২০-২১ সালে রাজ্যের ছ’টি সরকারি সংস্থার মাধ্যমে রাজ্য সরকার ৪৩১২ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। এর মধ্যে স্বাস্থ্য দফতরের সংস্থা স্বাস্থ্যসাথী সমিতির মাধ্যমে ৭২০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছে। তা খরচ হয়েছে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে। পশ্চিমবঙ্গ মহিলা উন্নয়ন উদ্যোগের মাধ্যমে ১১২২ কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছে কন্যাশ্রী প্রকল্পের খাতে। একই ভাবে রূপশ্রী প্রকল্পের জন্য ৪৮৫ কোটি টাকা ধার নেওয়া হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ তফসিলি জাতি-জনজাতি-ওবিসি উন্নয়ন ও অর্থ নিগমের মাধ্যমে ৪৯১ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে তা ব্যয় করা হয়েছে তফসিলি বন্ধু, জয় জোহার পেনশন প্রকল্পে। চাষিদের জন্য বাংলা স্বাস্থ্য বিমা যোজনা, আদিবাসীদের জয় বাংলা প্রকল্প, লোকপ্রসার প্রকল্পের জন্যও একই ভাবে ধার করা হয়েছে।
সিএজি জানিয়েছে, ২০২০-২১ সালে যে ৪৩১২ কোটি টাকা ধার নেওয়া হয়েছিল, তার মধ্যে অনেকখানি শোধ করা হলেও ১০৮৫ কোটি টাকা এখনও বকেয়া। ফলে তা রাজ্য সরকারের ধার শোধের দায়ের খাতায় যোগ হয়েছে। সিএজির বক্তব্য, এ ভাবে ঋণ নেওয়া হলে, বাজেটে তার হিসাব দেখানো হয় না। ফলে বিধানসভার নজরদারিও থাকে না। বিরেধীরা প্রশ্ন তুলছে, তাহলে কি এই ফাঁক আছে বলেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন সিএজি রিপোর্ট মিথ্যা, সব ফেক!