মহানগর ডেস্ক: শান্ত নর্মদা নদীর ওপর দিয়ে এলোচুলে হেঁটে যাচ্ছেন এক বয়স্ক মহিলা (An Elderly Woman Walking On River)! মধ্যপ্রদেশের জবলপুরে সোশ্যাল মিডিয়ায় মহিলার নদীর ওপর দিয়ে হাঁটার ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পরপরই বিদ্যুৎগতিতে তা ছড়িয়ে যায়। অলৌকিক দৃশ্য চাক্ষুষ করতে নর্মদা নদীর তীরে ভিড় ভেঙে পড়ে । কাতারে কাতারে মানুষ জড়ো হন স্বর্গ থেকে নেমে আসা “অলৌকিক দেবী”কে চোখের দেখা দেখতে।
স্থানীয়রা বলাবলি করতে থাকেন ওই অলৌকিক মহিলা মা নর্মদা নদী থেকে আবির্ভূত হয়েছেন । ভিডিওয় ক্যাপশন দেওয়া হয় জবলপুরের তিলওয়ারা ঘাটে নর্মদা নদীতে হেঁটে যাচ্ছেন। ব্যস, ওই টুকুই! বাকিটা তীরে জড়ো হওয়া মানুষজন নিজেরাই ব্যাখ্যা করে নেন। উপকথার মতো ভিডিওটি আশপাশের মানুষজনদের মধ্যে এমন প্রভাব ফেলে যে ভিড় একসময় নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। সবাই মা নর্মদা রূপী অলৌকিক মহিলার আশীর্বাদের আশায় হুড়োহুড়ি শুরু করে দেন।
দেবী নর্মদার বন্দনায় ড্রাম বাজিয়ে ওই অলৌকিক মহিলাকে ঘিরে কর্ডন করা হয়, কারণ ভিড় কিছুতেই বাধা মানছিল না। ভিড়,হইচই, মাতামাতির খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে এসে পৌঁছয়। তারা ওই মহিলাকে জেরা করতে শুরু করে। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে সেই অলৌকিক মহিলা নদীর ওপর দিয়ে হাঁটা বা তিনি কোনও দেবীর অবতার নন বলে সাফ জানিয়ে দেন। বয়স্ক মহিলার নাম জ্যোতি রঘুবংশী।
পুলিশকে জানান তিনি নর্মদাপুরমের বাসিন্দা। দশ মাস আগে তিনি বাড়ি ছেড়ে বেরিয়েছিলেন। জানতে পেরে পুলিশ দ্রুত তাঁর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁকে তাদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করে। নর্মদা নদীর ওপর দিয়ে হাঁটার রহস্য অবশ্য জানা যায়। জ্যোতি নামে ওই মহিলা জানান নর্মদা নদীর জলের স্তর একেক জায়গায় একেক রকম। কোনও কোনও জায়গায় একেবারে নীচু।
খোঁজ নিয়ে জানা যায় তিলওয়ারা ঘাটে ভিডিওটি তোলা হয়েছিল বলে দাবি ঠিক নয়। নদীর এমন একটি জায়গায় ভিডিওটি তোলা হয়েছিল,যেখানে জলের স্তর অস্বাভাবিক কম। সেখানে নদীর নীচে মাটির ওপর দিয়ে স্বচ্ছন্দভাবেই তিনি হেঁটেছিলেন। কিন্তু সেসব তোয়াক্কা না করে গুজব চারদিকে বিদ্যুৎগতিতে ছড়িয়ে গিয়ে ব্যাপারটিকে অলৌকিক কাহিনির রূপ দেয় বলে জানিয়েছে পুলিশ। জ্যোতি জানান তিনি দশ মাস আগে পরিক্রমায় বেরিয়েছিলেন। নর্মদা নদী তাঁর সেই পরিক্রমারই একটি অঙ্গ ছিল।
তিনি নর্মদার তীর ধরেই পরিক্রমা করেছিলেন। যেখানে জল একেবারেই নীচু. সেখান দিয়ে তিনি হেঁটেছিলেন। নদীর জল গভীর যেখানে ছিল, সেখানে যাননি। সেখানে একটু আধটু সাঁতার কেটেছিলেন। পরিক্রমা করার সময় বহু মানুষের সঙ্গে তাঁর দেখা হয়। কারো অসুখ থাকলে তাঁদের এদেশে তৈরি ওষুধ দেন। পুলিশ অবশ্য ওই মহিলাকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়। তাঁর পরিবারও তাঁকে গত দশ মাস ধরে খুঁজে বেড়াচ্ছিল।
.