বর্তমানে গণমাধ্যমের তাড়নজাত ধ্বনির বাহুল্য ও বিদেশি এবং হিন্দি শব্দের অহেতুক ব্যবহার দেখা যাচ্ছে। এটি যে ভাষাদূষণ, ভাষা বিকৃতি এবং ভাষার জগাখিচুড়ি প্রয়োগ তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বিকৃত ও অশুদ্ধ উচ্চারণের কারণে তরুণরা ভাষার বিষয়ে বিভ্রান্ত হচ্ছে। এটি শুধু বাংলা নয়, অন্য যে ভাষার শব্দ যোগ করে অভিনব মিশ্রণ তৈরি করা হচ্ছে সে ভাষারও অমর্যাদা করা হচ্ছে। আবার বর্তমান তরুণ প্রজন্ম এসব পছন্দ করছে। কারণ তারা যুগের স্রোতে ভেসে আসা যে কোনো বিচার-বিবেচনা ছাড়াই, দ্রুত রপ্ত করে সেটার প্রয়োগ করাকে আধুনিকতা ভাবে। তাই এই গণমাধ্যমগুলোর প্রচার করা বিকৃত শব্দগুচ্ছ ব্যবহারের মাধ্যমে তারা নিজেদের তথাকথিত স্মার্ট এবং আধুনিক ভাবতে শুরু করেছে। এতে আমাদের ভাষা হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। পৃথিবীর অনেক ভাষা আজ বিলুপ্ত কিংবা বিলুপ্তির পথে। জাতিসংঘের মতে, ‘প্রতি দুই সপ্তাহে পৃথিবী থেকে একটি করে ভাষা হারিয়ে যাচ্ছে।’
বর্তমান প্রজন্মের বাংলা ভাষা সম্বন্ধে জ্ঞান নেই।দোষ অবশ্যই তাদের অভিভাবকদের কারণ তারা ছদ্ম গর্ববোধে বলেন,যে তাদের সন্তানদের বাংলাটা ঠিক আসেনা, আবার কেউ কেউ বলেন বাংলা শিখে কি হবে ইত্যাদি।আসলে তারা ভুলে যান কিংবা জানেন না যে বাংলা ভাষা হচ্ছে সর্বোৎকৃষ্ট বৈজ্ঞানিক ভাষা,যার বর্ণমালার রন্ধ্রে রন্ধ্রে সেই ছোঁয়া আছে। যাক্ এইসব অভিভাবকদের দৌলতে সেইসব সন্তানরা বাংলা বলতে শুরু করে সে এক অভিনব বাংলার উপস্থাপন। সম্প্রতি একটি মেয়ে তার বাবার সাথে আমার পরিচয় করাচ্ছে,”ইনি আমার বাবা হচ্ছেন”।প্রত্যুত্তরে বলি,আগে হোক তারপর বলো।বাংলায় এক ধরনের শব্দ প্রচলন হয়েছে “কেন কি”,বলার অপেক্ষা রাখেনা হিন্দির কিউ কি শব্দের সংস্করণ। এরকম বহু উদাহরণ দেওয়া যায়। কিন্তু তথাকথিত শিক্ষিত সমাজের মুখে কালি লিপ্ত করেছেন সালকিয়া বাঁধাঘাটের বাপি দাস।পেশায় রিক্সাচালক। কিন্তু বাংলা ভাষা দরদী। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর যেহেতু বাঁধাঘাট পেরিয়ে কলকাতা যাত্রা করেছিলেন,সেই স্মৃতিতে সেখানে ওঁনার মূর্তি আছে।বাপি দাস প্রতিদিন নিজ উদ্যোগে পন্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মূর্তি পরিষ্কার করেন এবং মালা দেন।
এরা তথাকথিত সমাজের এমন শ্রেণীতে রয়েছেন যেখানে উচ্চবিত্ত ও উচ্চশিক্ষিত লোকেরা অবজ্ঞা করে,ছোট করে এমনকি “তুই” বলে সম্বোধন করে। হায় রে শিক্ষিত! ধিক্ এমন শিক্ষার।
কলমে : সৌরভ সিংহ
সাংবাদিক (সম্পাদক, হাওড়া প্রেস ক্লাব) ও সাহিত্যিক