Home Politics ভোটের মুখে আরও দরাজ বাজেট মমতার, খরচের হিসাব থাকলেও নেই আয়ের দিশা

ভোটের মুখে আরও দরাজ বাজেট মমতার, খরচের হিসাব থাকলেও নেই আয়ের দিশা

by Mahanagar Desk
72 views

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কি ভোটে পরাজয়ের ভয়ে ভীত? না কি তিনি এই মুহূর্তে রাজ্যের সব রাজনৈতিক নেতানেত্রীর চাইতে বেশি বিচক্ষণ? দ্বিতীয় কারণটিই সম্ভবত ঠিক। আর তাই ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষের রাজ্য বাজেট অনেকটাই জনমুখী। তুনি জানেন বাংলার মানুষ কি চায়, কিসে সন্তুষ্ট! বাজেটে সেই প্রতিশ্রুতিই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেখেছেন। এই বাজেটে ভোটে হেরে যাওয়ার আতঙ্কের প্রতিফলনের চাইতে ভোটে জেতার কৌশল অনেক বেশি আছে। তবে এই খরচ বহন করার টাকা কোথা থপকে আসবে সেই দিশা বাজেটে নেই, এমনটাই বলছেন অর্থনীতিবিদরা।

এই বাজেট সম্পর্কে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, “মমতা ভয় পেয়েছেন তাই এমন বাজেট। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই বাজেটে আয়ের কোনও দিশা নেই। রাজস্বের কী পরিস্থিতি, তাও উল্লেখ করা হয়নি বাজেটে। এটা স্রেফ ভোটের বৈতরণী পার হওয়ার কৌশলী বাজেট।”

অন্যদিকে এই বাজেটকে “ঐতিহাসিক পদক্ষেপ”, বলে বাজেটের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। তিনি তাঁর এক্স হ্যান্ডেলে লেখেন, “জনমুখী উন্নয়নের বাজেট, বিশেষভাবে লক্ষ্মীর ভান্ডার দ্বিগুণ করার মত ঐতিহাসিক পদক্ষেপের জন্য সরকারকে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ ও অভিনন্দন।”

এবার আসা যাক কি আছে এই ২০২৪-২৫ এর রাজ্য বাজেটে সেই প্রসঙ্গে:-

রাজ্যের অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য তাঁর বাজেটে বলেন, সংস্কৃতির উন্নয়নে মাইনরিটিস কালচারাল ডেভলপমেন্ট সেন্টার গঠিত হবে। যেখানে মুসলিম, শিখ, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, জৈন এবং পারসি-এই ৬ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বজায় রাখাই লক্ষ্য হবে। ফলে এই সব সম্প্রদায়ের প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। এই খাতে বরাদ্দ ২০ কোটি।

রাজ্যের চুক্তিভিত্তিক গ্রুপ ডি ও গ্রুপ সি কর্মচারীদের মাসিক পারিশ্রমিক যথাক্রমে ৩ হাজার ও সাড়ে ৩ হাজার টাকা করে বাড়বে বলে বাজেটে ঘোষণা করা হয়েছে। এর ফলে ৪০ হাজার কর্মী উপকৃত হবে। এই খাতে ২৮৮ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। সরকারের আওতায় থাকা আইটি কর্মীদের পারিশ্রমিক ক্যাটাগরি অনুযায়ী বাড়ানো হয়েছে।

যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির লক্ষ্যে দক্ষিণ ২৪ পরগনায় মুড়িগঙ্গা নদীর উপর ১২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে গঙ্গাসাগর সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত ঘোষিত হয়েছে রাজ্য বাজেটে। এর জন্য চলতি বাজেটে ২০০ কোটি বরাদ্দ করা হয়েছে। আগামী তিন বছরে এই সেতু নির্মাণ করবে রাজ্য সরকার।

অর্থমন্ত্রী বলেন,  যে সমস্ত পরিযায়ী শ্রমিক ‘কর্মসাথী পরিযায়ী শ্রমিক’ পোর্টালে নথিভুক্ত, তাঁদের স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের আওতায় আনা হচ্ছে। এই খাতে ১৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ ধার্য হয়েছে। এর ফলে উপকৃত হবে ২৮ লক্ষের বেশি পরিযায়ী শ্রমিক।

দ্বাদশের বদলে একাদশ শ্রেণি থেকে ‘তরুণের স্বপ্নে’র প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে পড়ুয়াদের। এর ফলে মাধ্যমিকের পরই পড়ুয়াদের হাতে ‘ট্যাবলেট’ তুলে দেবে সরকার, সরকারি স্কুলের পড়ুয়ারা এই সুবিধা পাবে।

রাজ্য সরকার কারিগর ও তাঁতিদের জন্য বিশেষ প্রকল্প ঘোষণা করেছে। এর ফলে ১৮ থেকে ৬০ বছরের নথিভুক্ত কারিগর বা তাঁতিদের দুর্ঘটনায় মৃত্যু হলে সেই পরিবারের নির্ভরশীল সদস্যরা এককালীন ২ লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্য পাবেন।

রাজ্যের শিক্ষিত যুবক-যুবতীদের কর্মসংস্থানের জন্য বিভিন্ন সরকার এবং সরকার পোষিত সংস্থাগুলোতে সমস্ত শূন্যপদ পূরণের লক্ষ্যে ৫ লক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হবে।

বাংলার আবাস যোজনার টাকার জন্য আরও এক মাস অপেক্ষা করবে রাজ্য সরকার। তার পরও কেন্দ্রীয় সরকার টাকা না দিলেও রাজ্য সরকার এই বিষয়টি বিবেচনা করবে বলে বাজেট ঘোষণায় অর্থমন্ত্রী জানান।

রাজ্য এই বাজেটে মৎস্যজীবীদের জন্য নতুন প্রকল্প- ‘সমুদ্র সাথী’ ঘোষণা করেছে। প্রতি বছর এপ্রিল-মে মাসে তিন জেলার সরকার নথিভুক্ত মৎস্যজীবীরা মাসিক ৫ হাজার টাকা করে পাবেন। এই খাতে ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এই দুমাস সমুদ্রে যেতে এবং মাছ ধরা নিষেধ থাকে তাই এই আর্থিক সাহায্য।

ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পদ্যোগীদের জন্য ব্যাঙ্ক ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি করল।

বাজেটে “পশ্চিমবঙ্গ ভবিষ্যৎ ক্রেডিট কার্ড” চালু হচ্ছে বলে ঘোষণা করেন অর্থমন্ত্রী। এই খাতে বার্ষিক ২৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে রাজ্য। ১৮-৫০ বছরের ২ লক্ষ যুবক-যুবতী স্বনিযুক্তিমূলক কাজের জন্য এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির জন্য সর্বাধিক ৫ লক্ষ টাকা আর্থিক ঋণ ব্যাঙ্ক থেকে নিতে পারবে। ৪ শতাংশ সুদে ১০০ শতাংশ নিশ্চিত ঋণ পাওয়া যাবে বলে অর্থমন্ত্রী বাজেট পেশ করার সময় জানান।

রাজ্যে নতুন করে ৬টি ইকোনমিক করিডোর রাজ্য তৈরি করবে বলে বাজেটে ঘোষণা করেন চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য।

কেন্দ্রের ১০০ দিনের প্রকল্পের পালটা রাজ্যের ৫০ দিনের কাজের প্রকল্প ঘোষণা করেন অর্থমন্ত্রী, এই প্রকল্পের নাম দেওয়া হয়েছে “কর্মশ্রী”। মে মাস থেকে “কর্মশ্রী” রাজ্যে কার্যকর হবে।

সিভিক ভলান্টিয়ার্স, ভিলেজ পুলিশ ও গ্রিন পুলিশদের ভাতা ১০০০ টাকা বাড়ানো হয়েছে বাজেটে। সিভিক পুলিশ, গ্রিন পুলিশ, যারা চুক্তিভিত্তিক কর্মী তাদের এককালীন অবসরকালীন সুবিধা ৩ লক্ষ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫ লক্ষ টাকা করার কথা ঘোষণা করা হল।

মে মাস থেকে রাজ্য সরকারি কর্মীদের ৪ শতাংশ ডিএ বা মহার্ঘ ভাতা বাড়ানো হয়েছে বাজেটে। কেন্দ্রের সঙ্গে এই মুহূর্তে রাজ্যের ডিএ-র ফারাক কমে দাঁড়াল ৩২ শতাংশ। মুখ্যমন্ত্রী আগেই আরও ৪ শতাংশ বৃদ্ধির ঘোষণা করেছিলেন। তা ইতিমধ্যে কার্যকর হয়েছে।

১০০ দিনের শ্রমিকের বকেয়া মেটাতে রাজ্য বাজেটে ৩ হাজার ৭০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। জব কার্ড আছে এমন শ্রমিকরা পাবেন এই টাকা।

লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের মাসিক বরাদ্দও বাড়াল রাজ্য সরকার। মাসিক ৫০০ টাকা থেকে বেড়ে ১ হাজার টাকা হল। তফসিলি জাতি ও তফসিলি উপজাতি এবং অনগ্রসর শ্রেণির মহিলাদের জন্য বরাদ্দ বেড়ে হল ১২০০ টাকা। সরকারের মাসিক খরচ বাড়ল ১২ হাজার কোটি টাকা।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন বলেন, “১ মাস অপেক্ষা করুন, ১১ লক্ষ বাড়ির টাকা আমরা ছাড়ব।” তবে অর্থনীতিবিদরা এই বাজেট দেখে বলেছেন, এই বাজেটে ব্যয়ের হিসেব দেওয়া আছে কিন্তু রাজকোষে আয়ের কোনও পথ এখানে দেখানো হয়নি। তাই প্রশ্ন সরকারটা চলবে কি করে?

You may also like

Mahanagar bengali news

Copyright (C) Mahanagar24X7 2024 All Rights Reserved