মহানগর ডেস্ক: বছরের পর বছর ধরে গড়ে ওঠা সংসার, সম্পর্ক নাকি একটা শব্দের তিন উচ্চারণ শেষ করে দেবে। মুসলিম সমাজ ব্যবস্থায় প্রচলিত এমন এক অমানবিক, অযৌক্তিক তাৎক্ষণিক তিন তালাক প্রথাকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করার দাবি জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন কর্ণাটকের এক মহিলা চিকিৎসক সৈয়দা আমব্রিন। এবার সেই আবেদনের ভিত্তিতেই কেন্দ্রের কাছে মতামত জানতে চিঠি পাঠাল শীর্ষ আদালত। আবেদনকারী কর্ণাটকের ওই চিকিৎসক গত সপ্তাহে সুপ্রিম কোর্টে একটি পিটিশন দাখিলের মধ্যে দিয়ে আবেদন জানান, তালাক-ই-কিনায়া এবং তালাক-ই-বাইন অযৌক্তিক ও স্বেচ্ছাচারী, যা সমতা, বৈষম্যহীন জীবন এবং ধর্ম পালনের স্বাধীনতার মৌলিক অধিকার খর্ব করে।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের জানুয়ারিতে আমব্রিনের স্বামী এক কাজীর লেখা চিঠির মাধ্যমে তাঁকে তালাক দেন। আমব্রিনের দাবি, সেই চিঠিতে তাঁর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ অস্পষ্ট ছিল। এমনকি নিজেদের এই বৈবাহিক সম্পর্ককে ‘হারাম’ বলে আখ্যা দেন তাঁর স্বামী। এরপরই আবেদনকারী জানান, স্বামীর চিঠিতে উল্লেখ করা ছিল, ‘এই মুহূর্ত থেকে এই সম্পর্ক থেকে আমি তোমাকে মুক্তি দিলাম।’ এরপরই আমব্রিন তাঁর পিটিশন দাখিল করে দাবি করেন, সরকারের উচিত বিবাহবিচ্ছেদ সংক্রান্ত ধর্ম এবং লিঙ্গ নিরপেক্ষতা আইন জারি করা। এরপরই সোমবার মামলার প্রেক্ষিতেই সুপ্রিম কোর্ট এর বিচারপতি এসএ নাজির এবং জেবি পারদিওয়ালার একটি বেঞ্চ এ বিষয়ে সরকারের মতামত জানতে আইন ও বিচার মন্ত্রক, সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রক এবং অন্যান্য মন্ত্রককে নোটিশ জারি করেছে।
উল্লেখ্য, ভারতীয় সংবিধান মুসলিম ব্যক্তিগত আইন বিবাহকে একটি চুক্তি হিসাবে বিবেচনা করে। যার আওতায় রয়েছে গুটিকয়েক বৈধ বিবাহবিচ্ছেদ পদ্ধতি। এমনকি এখানে পুরুষদের মৌখিকভাবে তিন তালাক বিষয়টি অনুমোদিত। তবে ২০১৭ সালে শীর্ষ আদালত মুসলিম সমাজের মহিলাদের অধিকারের কথা ভেবে তিন তালাক প্রথাকে বেআইনি বলে ঘোষণা করেছিল। তিন তালাক প্রথাকে ‘অসাংবিধানিক’ আখ্যাও দিয়ে আদালতের তরফে বলা হয়, ভারতীয় সংবিধানের ১৪ নং অনুচ্ছেদকে লঙ্ঘন করে এই তিন তালাক। এবার সুপ্রিমকোর্টে তালাক-ই-কিনায়া এবং তালাক-ই-বাইন প্রথাকেও চ্যালেঞ্জ জানিয়েই মামলা দায়ের করেছেন অসংবিধানিক সেই তালাক প্রাপ্ত কর্ণাটকের মহিলা চিকিৎসক সৈয়দা আমব্রিন।