মহানগর ডেস্ক : ভবানীপুরের এক ব্যবসায়ী নিমতায় খুন হয়েছেন। খুন হওয়া এই ব্যবসায়ী ভাভিয়া লাখানি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিজের বিধানসভা কেন্দ্র ভবানীপুরের বাসিন্দা। মুখ্যমন্ত্রী বুধবার মৃত ব্যবসায়ীর বাড়িতে বুধবার সোজা শিলিগুড়ি থেকে এসে পৌঁছন। মুখ্যমন্ত্রী এই ঘটনায় পরিবারের সদস্যদের প্রতি শোক জ্ঞাপন করেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “যারা খুন করেছে তারা ক্রমিনালের চেয়েও ক্এিমিনাল। আমি এই খবর পেয়ে শিলিগুড়িতে আমার অনুষ্ঠান বাতিল করে কলকাতায় চলে আসি। দু’জনকে এই ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ তদন্ত করছে, কড়া স্টেপ নেওয়া হবে।”
এদিকে এই ঘটনায় কলকাতা পুলিশের কমিশনার বিনীত গোয়েল বলেন, ‘‘অনির্বাণের বাড়িতে খুন করে ছাদের উপর জলের ট্যাঙ্কের নীচে রেখে পাঁচিল তুলে দেওয়া হয়। অভিযুক্ত অনির্বাণ মৃতের ব্যবসায়িক অংশীদার ছিলেন। ওষুধ সরবরাহের অজুহাতে ওই ব্যবসায়ীর কাছ থেকে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা নিয়েছিলেন। ওই ওষুধ সরবরাহ করেননি এবং টাকাও ফেরত দেননি। ধৃত দু’জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।’’ পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, অনির্বাণের সঙ্গে ওষুধের ব্যবসা করতেন ভাভিয়া লাখানি। বেশ কিছু ওষুধ সরবরাহ করবেন বলে ভাভিয়ার কাছ থেকে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা নিয়েছিলেন অনির্বাণ। কিন্তু কোনও ওষুধই সরবারহ করেননি। টাকাও ফেরত দেননি। মনে করা হচ্ছে, ওই নিয়ে কথা বলবেন বলেই ব্যবসায়িক সঙ্গীকে নিমতার বাড়িতে ডাকেন অনির্বাণ। তার পরেই এই হাড় হিম করা খুনের ঘটনা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, খুন হওয়া এই ব্যবসায়ী ভাভিয়া লখানির স্ত্রী ছাড়াও রয়েছে দুই নাবালক পুত্র। তাদের এক জন দশম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। অন্য জন অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। এক জনের বুধবার স্কুলের পরীক্ষা ছিল। তার মধ্যেই বাবার মৃত্যুসংবাদ সে পেয়েছে। এমন একটি ঘটনায় পুরো পরিবার স্বাভাবিক ভাবেই ভেঙে পড়েছে। খুন হওয়া ব্যবসায়ীর পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের সঙ্গে মমতা কথা বুধবার কথা বলেছেন। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, উইকেট দিয়ে পিটিয়ে ভাভিয়া লাখানিকে খুন করার পর বস্তাবন্দি দেহ জলের ট্যাঙ্কের নীচে রেখে তার উপর রাতারাতি পাঁচিল তুলে দেওয়া হয়েছিল। বুধবার ভবানীপুরের ব্যবসায়ী ভব্য লখানির দেহ নিমতায় উদ্ধারের চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে খাস কলকাতাতে। বর্তমানে এই খুনের তদন্ত করছে লালবাজার। ইতিমধ্যে দু’জনকে গ্রেফতার করেছে বালিগঞ্জ থানার পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে খবর, সোমবার দুপুর ১টা থেকে ৩টের মধ্যে খুন হন ভাবানীপুরের এই ব্যবসায়ী। মঙ্গলবার ব্যবসায়ীর স্ত্রী নেহা লখানি থানায় অভিযোগ করেন। তিনি জানান, তাঁর স্বামীকে কেউ অপহরণ করেছেন। সোমবার বালিগঞ্জ সার্কুলার রোড এলাকা থেকে ভাভিয়া লাখানি বেরনোর পর তাঁর আর কোনও খোঁজ তাঁরা পাননি। ঘটনার তদন্তে নেমে বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালানো হয়। অবশেষে বুধবার নিমতা থানার একটি বাড়ি থেকে ভবানীপুরের ওই ব্যবসায়ীর দেহ উদ্ধার করে বালিগঞ্জ থানার পুলিশ।
অভিযোগ, খুনের পর দেহ বস্তাবন্দি করে জলের ট্যাঙ্কের নীচে পুঁতে দেওয়া হয়েছিল। তার পর রাতারাতি তার উপর পাঁচিল তুলে দেন অভিযুক্তেরা। যে বাড়ি থেকে ভাভিয়ার দেহ পাওয়া যায়, সেটি অনির্বাণ গুপ্ত নামে এক যুবকের বাড়ি। নিমতার প্রবোধ মিত্র লেনের বাসিন্দা অনির্বাণ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। প্রাথমিক তদন্তে তিনি খুনের কথা স্বীকারও করে নিয়েছেন বলে খবর। পাশাপাশি ৩৮ বছরের সুমন দাস নামে এক যুবককেও গ্রেফতার করেছে পুলিশ। অভিযোগ, অনির্বাণের সঙ্গে হাত লাগিয়ে ওই ব্যবসায়ীর দেহ লুকোনোর চেষ্টা করেন সুমন। এখন দু’জনকেই জিজ্ঞাসাবাদ করছেন লালবাজারের তদন্তকারী দল।