মহানগর ডেস্ক: জলপাইগুড়ির জনসভা থেকে মঙ্গলবার তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করলেন, “এবার আর বিজেপি আসবে না। বাংলায় ইন্ডিয়া জোট নেই। দিল্লিতে আছে। এখানে তৃণমূল একাই বিজেপির বিরুদ্ধে লড়ছে। সিপিএম, কংগ্রেসকে ভোট দেবেন না, ওরা বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। বিজেপি মানুষকে ভয় দেখাচ্ছে, ওষুধের দাম বাড়িয়েছে, মানুষের জীবন কেড়ে নিচ্ছে, মহওলাদের উলঙ্গ করে রাস্তায় ঘোরাচ্ছে।”
এক দমে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই কথাগুলো বলে গেলেন জলপাইগুড়ির সভা থেকে। পাশাপাশি মমতা বললেন, “ইন্ডিয়া জোট ভোটের পর আমি দিল্লিতে বুঝে নেব।”
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিনের সভা থেকে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানান। তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী বলছেন ভোটের পর দুর্নীতিগ্রস্থদের জেলে পুরবেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন, অপরাধীদের পা উপরে, মাথা নীচে করে ঝুলিয়ে দেবেন। এটা প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভাষা?”
সভায় উপস্থিত মানুষদের সতর্ক করে মমতা এদিন বলেন, “বিজেপি জিতলে কিছু থাকবে না। সব চলে যাবে। ওরা আর ভোট হতে দেবে না। একদেশ, এক নেতা, এক ভোট ওরা চাইছে। একদেশ, এক ভোট মানে আর ভোট হবে না।”
এদিনের সভা থেকে মোদীর গ্যারিন্টির সনালোচনা করে মমতা বলেন, “ওরা বড় বড় কথা বলছে। বলেছিল ১৫ লক্ষ টাকা সবার অ্যাকাউন্টে দেবে, কেউ ১ লাখ টাকা পেয়েছেন? দেশে বেকার সমস্যা স্বাধীনতার পর থেকে সর্বোচ্চ। ওদের হাতে ইডি, সিবিআই, এনআইএ আছে। তাদের দিয়ে ওরা বিরোধীদের কন্ঠরোধ করতে আাইছে।”
মমতা কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে বলেন, “সব ধর্মের সন্ধান কিন্তু আমরা উত্তরবঙ্গে পাই। জলপাইগুড়িতে সেদিন রাতে যারা প্রাকৃতিক দুর্যোগে মারা গিয়েছেন তাদের বাড়িতে এসে পৌঁছেছিলাম। তারপর গেছিলাম হাসপাতালে। সব পরিবারগুলোর সঙ্গে দেখা করেছিলাম। সব পেশেন্টদের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। আমাদের তিনটি পেশেন্ট,বাচ্চা, শিলিগুড়িতে পাঠানো হয়েছিল। তারাও সুস্থ হয়ে সম্ভবত ফিরে এসেছে। এই হাসপাতাল থেকে আমি ময়নাগুড়ি ছুটে গিয়েছিলাম। সেখানে বাড়িঘর সব তছনছ হয়ে গিয়েছিল বার্নিশে। তার পরের দিন আমি আলিপুরদুয়ারেও গিয়েছিলাম। ইলেকশন চলছে, না হলে আমার এক সেকেন্ডের ব্যাপার ছিল। ইলেকশন চলছে বলে আমরা অনেক কিছু করতে পারি না কারণ বিজেপির কমিশন বসে আছে। আমরা চেয়েছিলাম যাদের বাড়িঘর ভেঙে গেছে, তাদের ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হোক যাতে বাংলার বাড়ি তারা পায়। ইলেকশন কমিশন বললেন না, যা একজিস্টিং রুল আছে, তাতেই হবে। একজিস্টিং রুলে আছে যার বাড়ি ভেঙে গেছে সে ২০ হাজার পাবে, যার আংশিক ভেঙে গেছে সে ৫ হাজার পাবে। যাদের বাড়ি ভেঙেছে তাদের ২০ হাজার দেওয়া হয়েছে, আরও ৪০ হাজার পাবেন। তারপর আরও ৬০ হাজার পাবেন বাংলার বাড়ি যোজনায়। বাড়িগুলো ভালো করে তৈরী করে নেবেন। যাদের বাড়ি আংশিক ভেঙেছে তাদেরও বাড়ি তৈরী করে দেওয়া হবে।”
মমতা এদিন বলেন, “আপনারা উত্তরবঙ্গের লোকরা,জঙ্গল মহলের লোকরা বিজেপিকে ভাোট দিয়ে দিচ্ছে। আমাদের বলছেন টাকা দেয়নি? বিজেপি সরকার ৩ বছর ১০০ দিনের কাজ, আবাস যোজনার কাজের টাকা দেয়নি। বাংলা থেকে বিজেপির এতোগুলো এমপি আছে, দিল্লি গিয়ে কেউ বলে না যে বাংলায় টাকা দাও। উল্টে বিজেপি এমপিরা বলছেন, বাংলাকে টাকা দেবেন না। ১০০ দিনের কাজ বন্ধ করে দাও, বাংলার ঘর দেবেন না, রাস্তা দেবেন না, সব বন্ধ করে দিন। আমি আপনাদের বলি ভোটের বাক্সে আপনাদের অধিকার আছে, বিজেপিকে ভোট দেবেন না। বিজেপিকে ভোটের বাক্সে বন্ধ করে দিন, যাতে বিজেপি ক্ষমতায় আসতে না পারে, আপনার অধিকার কাড়তে না পারে।”
মমতা এদিন সিএএ,এনআরসি, ইউনিফর্ম সিভিল কোডের বিরোধীতা করে বলেন, “এসব চালু হলে মতুয়া, কামতাপুরি, কুর্মি, রাজবংশী কেউ থাকবে না। আপনি বলতে পারবেন না আপনার ধর্ম কি, আপনি কি খাবেন, আপনি কি পরবেন। সব তুলে দেবে। ওয়ান ইলেকশন, ওয়ান নেশন করবে। আমরা থাকতে বাংলায় সিএএ, এনআরসি, ইউসিসি হতে দেবো না।”