মহানগর ডেস্কঃ ছোট শিশু থেকে শুরু করে টিনেজার, প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ-মহিলা, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা চকোলেট খেতে পছন্দ করেন না এমন সংখ্যা খুবই কম। আমাদের দেশে এমন অনেক মানুষ খুঁজে পাবেন, যারা বলে মিষ্টি খাইনা কিন্তু চকলেট কে না বলতে পারেন না। প্রত্যেকেই কম বেশি চকোলেট খেতে ভালোবাসেন। এখন বাজারে হরেক রকমের চকোলেট পাওয়া যায়। যেমন- দুধ চকোলেট, ডার্ক চকলেট, হোয়াইট চকলেট, রুবি চকোলেট, মদ চকোলেট, মিষ্টি বিহীন চকোলেট, মিষ্টি তেতো চকোলেট। স্বাদ অনুযায়ী যার যেমন পছন্দ, সে তেমন চকোলেট খান।
যত দিন যাচ্ছে চকলেটের গুরুত্ব যেন সময়ের সাথে বেড়েই চলেছে। বাজারে অনেক ধরণের চকোলেট পাওয়া গেলেও গবেষকরা মনে করেন, ডার্ক চকলেটে প্রচুর পরিমাণে মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে। যা মেটাবলিজমকে শক্তিশালী করে ফ্যাট বার্ন করে, এবং বার বার খিদে পাওয়া কমায়। এমনকি ডার্ক চকলেট খেলে স্মৃতিশক্তিও প্রখর হয়। ২০১২ সালের একটি গবেষণায় উঠে এসেছে যে, ডার্ক চকোলেট খেলে মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালনের গতিবিধি উন্নত হয়, যা মানবদেহের কাজ করার ক্ষমতা এবং মনে রাখার ক্ষমতা বাড়ায়। আবার ২০১৩ সালের জার্নাল অফ নিউরোলজিতে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ডার্ক চকলেট খেলে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়।
১. মস্তিস্কের জন্যে উপকারী- গবেষণায় দেখা গেছে চকলেট খেলে মস্তিস্কে রক্তচলাচল প্রক্রিয়া ভালো ভাবে করে। মস্তিস্কের কার্যাবলী সঠিক ও সুন্দরভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়। আপনি চকলেট খাওয়া মানে আপনার ব্রেইনে রক্ত সঠিক ভাবে সরবরাহ করে। মস্তিস্ক যত সচল থাকবে শরীরে তত সতেজ থাকবে।
২. এনার্জি বজায় রাখে- চকোলেটে মজুত থাকে প্রচুর পরিমাণে ক্যালোরি,তাই চকোলেট খাওয়ার পর শরীরে ক্যালরি পৌঁছানোর জন্য, শরীরে দ্রুত শক্তি এনে দেয়। চকোলেটে বিশেষ এমন কিছু উপাদান থাকে যা রক্ত সার্কুলেশন বাড়াতে সাহায্য করে, যার ফলে শরীর ভালো থাকে।
৩) ত্বক রক্ষা করে- চকোলেট নিয়ে জার্মান বিজ্ঞানীরা গবেষণা করেন, তাঁদের মতে ডার্ক চকলেটে Flavonoids থাকে। যা ত্বককে সূর্যের ক্ষতিকর বেগুনী রশ্মি থেকে রক্ষা করতে এন্টিবডি তৈরি করতে সহায়তা করে।
৪) কের ঝুঁকি কমায়- স্ট্রোসুইডেনে গবেষণা করে দেখা গেছে চকলেটের মধ্যে ফ্লেভোনয়েড নামক এন্টি অক্সিডেন্ট থাকে, যা স্ট্রোকের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। গবেষণায় উঠে এসেছিল, একজন ব্যক্তি সপ্তাহে ৪৫ গ্রাম চকলেট যদি খান, তাহলে ২০ শতাংশ পর্যন্ত স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে যাবে।
৫) হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমায়- চকোলেট খেল রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে। চকলেট গ্রহণকারীদের ক্ষেত্রে, রক্তে প্লেটলেটের কাজ অনেক সহজে ঘটে । এভাবে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অনেকটা কমে যায়। যারা নিয়মিত ডার্ক চকলেট খেয়ে থাকেন, হার্টের রোগ হওয়ার ঝুঁকি অন্যদের তুলনায়, তাঁদের অনেক কম থাকে। ডার্ক চকলেট খেলে রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক থাকে এবং হার্ট সুস্থ থাকে।
৬) কাশির উপশমে সহায়তা করে- চকলেটে থাকা থিওব্রোমিন উপাদান মস্তিস্কের Chevages নামক নার্ভটির কাজকে কিছুটা হলেও নিয়ন্রণ করতে পারে। এই নার্ভটিকাশির সঙ্কেত পাঠায়। যদি কাশির সময় চা, কফি, আদা, লবঙ্গ খেয়ে বিরক্তি হয়েগেছেন।তখন কিন্তু সবচেয়ে সহজ সুস্বাদু উপায়টি হল এই চকলেট।
৭) আয়ু বাড়ায়- আপনি কি জানেন নিয়মিত চকোলেট খাওয়া আপনার দু বছর পর্যন্ত আয়ু বাড়াতে পারে। পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘায়ূ ব্যাক্তি ছিলেন Jeanne Louise Calment নামের এক ব্যক্তি, যিনি ১২২ বছর বয়েসে মারা যান। তিনি প্রতিদিন আড়াই পাউন্ড করে ডার্ক চকলেট খেতেন।
৮) ক্যানসারের ঝুঁকি কমে- ডার্ক চকোলেটে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় সামগ্রিকভাবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে প্রতিদিন চকোলেট খেলে ক্যানসারের ঝুঁকি কমে। কারণ চকোলেটের প্রধান উপাদান হলো- কোকো, এই চকলেটে ব্যবহৃত উপাদান কোকোয়াতে থাকে pentameric procyanidin নামে উপকারী উপাদান। যা ক্যান্সার আক্রান্ত কোষগুলোকে ছড়িয়ে ফেলাতে বাধার সৃষ্টি করে।
চকলেটের উপকারিতা আছে এটা সত্যি, কিন্তু তাই বলে প্রতিদিন অতিরিক্ত মাত্রায় খাবেন না, বা চকলেটের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়বেন না। নিয়মিত যদি চকোলেট খাওয়ার অভ্যাস আছে, তাহলে কিন্তু অল্প পরিমানে চকলেট খান। চিনি বিহীন বা অল্প চিনির ডার্ক চকলেট খান। কিন্তু সেটাও অতিরিক্ত পরিমানে খেতে থাকবেন না। কারণ দিনে অতিরিক্ত মাত্রায় বা বেশি পরিমাণে চকোলেট খাওয়া ঠিক হবে না। কারণ চকোলেটে ভালো পরিমাণে ক্যালোরি থাকে, ফ্যাট থাকে, মিষ্টি থাকে। শরীরে বেশি ক্যালোরি পৌঁছাতে থাকলে সমস্যা দেখা দিতে পারে। বাড়তে পারে ওজন, এছাড়া চকোলেট কোনও সুগার রোগীর খাওয়া একদমই উচিত হবে না।