মহানগর দেস্ক: এক মহিলা বিয়ের পর তার পদবীর পাশে স্বামীর পদবী জুড়েছিলেন। বতর্মানে ওই দম্পতি বিবাহ বিচ্ছেদের পথে হাঁটছেন। এখন মহিলার দাবী তিনি ওই পদবী বদলে নিজের পূর্ব নামে ফিরে যেতে চান। কিন্তু পদবী বদলাতে গিয়েই ঘটেছে বিপত্তি। সরকারি বিজ্ঞপ্তি এই বিষয়ে একপ্রকার বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ।বিয়ের পর সাধারণত মহিলারা স্বামীর পদবী ব্যবহার করে থাকেন। কেউ নিজের নামের পরেই স্বামীর পদবী রাখেন, আবার কেউ নিজের নাম -পদবীর পাশে স্বামীর পদবীর ব্যবহার করেন। তেমনই বিয়ের পর দিব্যা নামের এক মহিলা নিজের পদবীর পাশে স্বামীর নতুন পদবী যুক্ত করেছিলেন, কিন্তু সেই পদবী এখন আর তাঁর নামের পাশে জুড়ে রাখতে চাইছেননা ওই মহিলা। এমনকি জানা যাচ্ছে বিচ্ছেদের পথে হাঁটছেন ওই মহিলা। তাই স্বামীর পদবী নিজের নামের পাশ থেকে ছেঁটে ফেলতে চান, কিন্তু পূর্বের পদবীতে পুনরায় ফিরত যেতে গিয়ে আদালতে বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন বলেই অভিযোগ। মহিলাকে বলা হয়েছে, পদবী সরানোর জন্য স্বামীর অনুমতির প্রয়োজন ।
সরকার ওই মহিলার কাছে যেই চিঠি পাঠিয়েছেন তাতে স্পষ্ট লেখা আছে যে, “স্বামীর অনুমতির নথি না থাকলে বিচ্ছেদের উপযুক্ত নথি দেখিয়েও পদবী পরিবর্তন করতে পারবেন তিনি।” এরপরই ক্ষুব্ধ হন মহিলা, আপত্তি জানিয়ে মহিলা দিল্লি হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন ।
ঘটনাচক্রে, এই আবেদনকারী মহিলার নাম দিব্যা মোদী। মহিলার বক্তব্য, তিনি নিজের নামের পাশে স্বামীর পদবী বিয়ের পর জুড়েছিলেন। তারপর ওই মহিলার নাম বদলে হয়েছিল দিব্যা মোদী টোঙ্গা। বিয়ের পর এই নামেই পরিচিত ছিলেন তিনি। বর্তমানে দম্পতি বিবাহবিচ্ছেদের পথে হাঁটছেন। বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা ইতিমধ্যেই আদালতে চলছে। দিব্যার মতে, সম্পর্ক যখন থাকছেনা এরম পরিস্থিতিতে স্বামীর পদবী নামের পাশে ব্যবহার করতে চান না তিনি । সেইজন্য আবেদন জানান মহিলা, কিন্তু পদবী পরিবর্তনের জন্য আবেদন জানানোর পর, দিব্যার কাছে এক সরকারি বিজ্ঞপ্তি এসে পৌঁছায়। সেই বিজ্ঞপ্তি তে লেখা রয়েছে, ‘পদবী পরিবর্তন করতে হলে মহিলাকে উপযুক্ত নথি পেশ করতে হবে, নাহলে স্বামীর অনুমতিপত্র লাগবে। তা যদি দিতে না পারেন তাহলে নো অবজেকশন সার্টিফিকেট (NOC) অর্থাৎ স্ত্রী আগের পদবী তখনই ব্যবহার করতে পারবেন, যদি স্বামী বলেন স্বামীর এতে আপত্তি নেই, তা জমা দিতে হবে, তাহলেই সম্ভব। নাহলে বিবাহ বিচ্ছেদের নথি ওই মহিলাকে প্রমাণস্বরূপ জমা দিতে হবে।‘ যেহেতু, এখনও পর্যন্ত দম্পতির বিবাহ বিচ্ছেদ সম্পূর্ণ হয়নি, তাই ওই নথি দেখাতে পারবেন না দিব্যা।
সুতরাং, দিব্যাকে নাম পরিবর্তনের জন্য বিচ্ছেদ যত দিন না পর্যন্ত সম্পূর্ণ হচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তারপরই দিব্যা প্রথম পদবীতে পুনরায় ফিরে যেতে পারবেন বা পূর্ব পদবী ব্যবহার করতে সক্ষম হবেন।কেন্দ্রীয় সরকারের আবাসন এবং নগর বিষয়ক মন্ত্রক বিজ্ঞপ্তিটি জারি করেছিলেন মহিলাকে। দিল্লি হাই কোর্টে আবেদন জানিয়ে দিব্যা দাবি করেছেন যে সংবিধান মতে, দেশের প্রতিটি নাগরিকের মনের মত প্রকাশ করার ব্যক্তিগত স্বাধীনতা আছে, এবং নিজের নাম কোন নাগরিক কি রাখবেন সেটি বেছে নেওয়ার মতো ব্যক্তি স্বাধীনতাও রয়েছে সাধারণ নাগরিকের। এর পাশাপাশি মহিলা মহিলা সরকারি বিজ্ঞপ্তিকে সংবিধানের ১৪, ১৯ (১ এ) এবং ২১ নম্বর অনুচ্ছেদের বিরোধী বলে উল্লেখ করেছেন। এই ধারায় নারীদের প্রতি বিদ্বেষমূলক আচরণ এবং নারীদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তায় হস্তক্ষেপের অভিযোগ রয়েছে।
এই মামলার শুনানি চলছে, দিল্লি হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি মনমোহন ও বিচারপতি মনমীত প্রীতম সিংহ অরোরার ডিভিশন বেঞ্চে । আদালত ওই মহিলার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে ব্যাখ্যা চেয়েছে এই সংক্রান্ত বিষয়ে। এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে আগামী ২৮ মে, বলে জানা যাচ্ছে। এবার দেখার বিষয় আদালত কি রায় দেয়।