মহানগর ডেস্কঃ আত্মহত্যা নাকি খুন? এক চিকিৎসকের মৃত্যু নিয়ে ঘনীভূত হচ্ছে রহস্য। এবার এই চিকিৎসকের মৃত্যুর তদন্তভার নিল সিআইডি। হুমকি ও আত্মহত্যার প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে এক দম্পতি কে আটক করেছে পুলিশ, সঙ্গে আরও তিন জনকেও পুলিশ গ্রেফতার করেছে। দম্পতির নাম অভিজিৎ দাস ও তাঁর স্ত্রী রিয়া দাস। বাকিবুল্লা বুরহানি নামের কলকাতা পুলিশের একজন কনস্টেবল এর এখনো খোঁজ চলছে।
ঘটনাটি ঘটেছে ডায়মন্ড হারবার, চিকিৎসকের নাম কল্যাণ আশিস ঘোষ, হুগলির কোন্নগরের বাসিন্দা । দীর্ঘ বছর ধরে তিনি, ডায়মন্ড হারবার মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে কর্মরত ছিলেন । এমনকি কল্যাণ ডায়মন্ড হারবারে একাধিক চেম্বারে প্র্যাকটিসও করতেন। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, ২০২৩ সালের মাঝামাঝির দিকে শিলিগুড়ির একটি হাসপাতালে তিনি বদলি হয়ে যান। তবে তিনি সেখানে না গিয়ে, হাসপাতালেরই একটি আবাসনে তিনি থেকে যান।
এই চিকিৎসকের তথা কল্যাণ আশিস ঘোষ ৪ মার্চ ভোরে হাসপাতালের আবাসন থেকে তাঁর ঝুলন্ত দেহ পাওয়া যায়। তারপর থেকেই ঘটনা শোরগোল তুলেছে। যেই দিন আত্মহত্যা করেন সিকিৎসক, ওই দিনই ছিল তাঁর মায়ের শ্রাদ্ধানুষ্ঠান ছিল। এই চিকিৎসকের দাদা শুভাশিস ঘোষ ডায়মন্ড থানার আইসি। মৃত্যুর তদন্ত করতে গিয়ে হাতে বেশ কিছু তথ্য উঠে আসে । অভিযুক্ত অভিজিৎ দাসের একটি পানশালা আছে, সেটি ডায়মন্ড হারবার জেটিঘাটের কাছে অবস্থিত। সেই পানশালায় চিকিৎসকের, নিয়মিত যাতায়াত ছিল । সেখানে যাতায়াত হতে হতে সেই সূত্রে অভিজিতের স্ত্রী রিয়ার সাথে ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয় কল্যাণের।পুলিশ সূত্রে জানা যাচ্ছে। এমনকি জানা যাচ্ছে কল্যাণের আবাসনেও নিয়মিত যাতায়াত করতেন রিয়া। অভিজিৎ অবশ্য পুলিশকে জানিয়েছে, রিয়ার সাথে তাঁর বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েগেছে। জানা যাচ্ছে, এই রিয়া ব্ল্যাকমেল করত বকল্যাণকে। লক্ষ লক্ষ টাকা ভয় দেখিয়ে কল্যাণের কাছ থেকে হাতিয়ে ছিলেন রিয়া, এই বলে যে সম্পর্কের কথা লোকজনকে জানিয়ে দেবে। এমনকি এই একই হুমকি দিয়ে বাকিবুল্লাও টাকা আদায় করেছেন কল্যাণের কাছ থেকে। এই সব চক্রান্ত জানতে পেরে পুলিশ জানিয়েছেন এবার ডায়মন্ড হারবারের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা, বাকিবুল্লার সত্যে রিয়ার কোনো সম্পর্ক আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। তারপর এই মৃত্যুর তদন্তের ভার বৃহস্পতিবার সিআইডি নিয়েছেন।চিকিৎসক নিজে আত্মহত্যা করেছেন নাকি কেউ খুন করেছে তা তদন্ত চলছে।
কল্যাণের মৃত্যুর পরে, অভিযুক্ত ব্যক্তি অভিজিৎ, ও তাঁর প্রাক্তন স্ত্রী রিয়া, বাকিবুল্লা সহ ৬ জনের বিরুদ্ধে এই ঘটনার জেরে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছিলেন মৃত ব্যক্তির দাদা ও পরিবার। ডায়মন্ড হারবার থানার পুলিশ গ্রেফতার করে তিন জনকে এই ঘটনায় দোষী হওয়ার দরুন। যারা যারা দোষী তারা সকলেই পুলিশি হেফাজতে। পরিবার অভিযোগ দায়ের করেছে ‘কল্যাণের উপরে চাপ সৃষ্টির কথা জানিয়ে। যে তাকে রীতিমতো বাধ্য করা হয় আত্মহত্যা করতে। এর পাশাপাশি ডায়মন্ড হারবার মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ উৎপল দাঁয়ের বিরুদ্ধেও অভিযোগ দায়ের করে পরিবার। তবে অধ্যক্ষ আগেই জানিয়েছিলেন যে ‘জোর করে আবাসন দখল করে রেখেছিলেন ওই চিকিৎসক। এমনকি চিকিৎসকের সম্পর্কে কুরুচিকর কথাবার্তা জানতে পেরেছিলেন, সেই জন্য আবাসন ছেড়ে দিতে নোটিস পাঠিয়েছিলেন।’ ঘটনাটির তদন্ত করা হচ্ছে, মৃত্যুর কারণ ও চক্রান্ত সব কিছু খতিয়ে দেখছে তদন্তকারী দল। মৃত্য ব্যক্তির দাদা, আইসি বলেন, ‘‘যেহেতু আমার নিজের ভাইয়ের মৃত্যুর ঘটনা, তাই সিআইডি তদন্তভার গ্রহণ করেছে।’’