মহানগর ডেস্ক : দেশে ৭ দফায় ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচন ঘোষণা করেছেন দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার। পশ্চিমবঙ্গ, উত্তরপ্রদেশ এবং বিহারেও ৭ দফায় ভোট হবে বলে কমিশন জানিয়েছে।
তবে প্রথম থেকেই গত ২০১৯ -এর মতো ৭ দফায় ২০২৪-এর লোকসভা মির্বাচনে আপত্তি তুলেছিল পশ্চিমবঙ্গের শাসকদল তৃণমূল। প্রত্যাশিত ভাবেই ৭ দফায় লোকসভা নির্বাচন ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে তৃণমূূলের তরফে রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য ও তৃণমূলের শ্রমিক নেতা ও প্রাক্তন রাজ্যসভার সিপিএম সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় তীব্র প্রতিবাদ জানান।
চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, “আমরা এক বা দু’দফায় ভোট চেয়েছিলাম। অকারণে আবার ৭ দফায় ভোট ঘোষণা করল কমিশন। সঙ্গে নিজেদের মুখ রক্ষার জন্য প্রতি দফায় অন্য দুটি রাজ্যের ভোটও পশ্চিমবঙ্গের ভোটের দফার সঙ্গে রেখেছে। আমরা বারবার বলছি দীর্ঘ সময় ধরে ভোট হলে মানুষের মধ্যে ভোটদানের আগ্রহ কমে যায়, ফলে ভোটদানের হারে তার প্রভাব পড়ে। কিন্তু কমিশন আমাদের দাবি না শুনে বিরোধীদের দাবি মতো রাজ্যে ৭ দফায় লোকসভা নির্বাচন ঘোষণা করল।”
৪৭ দিন ধরে ভোটের সমালোচনায় তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু শেখর রায় বলেন, “নির্বাচন করতে রাজ্য প্রশাসনকেও কাজে লাগে। কমিশন ঘোষণা করুক কোন কোন রাজ্যে ভোটের আগে ও ভোটের সময় বেআইনি অর্থ, মদ উদ্ধার হয়। এই তালিকা প্রকাচ করলে দেখা যাবে সেই রাজ্যগুলি বিজেপি শাসিত।”
এদিকে ৭ দফা ভোট কেন তা নিয়ে তৃণমূলের সমালোচনার জবাবে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, “আমরা প্রথম থেকেই বলছি রাজ্যে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করার পরিবেশ নেই। তাই আমরা কেন্দ্রীয় বাহিনী মেতায়েন করে গতবারের মতো ৭ দফায় ভোট চেয়েছিলাম, তাই হয়েছে। আমরা দৃঢ়তার সঙ্গে বলছি, দেশে আবার নরেন্দ্র মোদীর সরকার আসছে।”
পশ্চিমবঙ্গে ৪৭ দিন ধরে যে ভোটপর্ব চলবে তাতে কবে কোথায় ভোট :-
প্রথম দফা,১৯ এপ্রিল, ২০২৪, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়িতে ভোট হচ্ছে।
দ্বিতীয় দফা, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, রায়গঞ্জ, বালুরঘাট, দার্জিলিংয়ে ভোট হচ্ছে।
তৃতীয় দফা, ৭ মে, ২০২৪, মালদা উত্তর, মালদা দক্ষিণ, মুর্শিদাবাদ, জঙ্গিপুরে ভোট হচ্ছে।
চতুর্থ দফা, ১৩ মে, ২০২৪, বহরমপুর, কৃষ্ণনগর, রানাঘাট, বোলপুর, বীরভূম, বর্ধমান পূর্ব, বর্ধমান-দুর্গাপুর, আসানসোলে ভোট হচ্ছে।
পঞ্চম দফা, ২০ মে, ২০২৪, শ্রীরামপুর, ব্যারাকপুর, হুগলি, বনগাঁ, হাওড়া, উলুবেড়িয়া, আরামবাগে ভোট হচ্ছে।
ষষ্ঠ দফা, ২৫ মে, ২০২৪, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, মেদিনীপুর, কাঁথি, তমলুক, ঘাটাল, ঝাড়গ্রাম, মেদিনীপুর, বিষ্ণুপুরে ভোট হচ্ছে।
সপ্তম দফা, ১ জুন, ২০২৪, উত্তর কলকাতা, দক্ষিণ কলকাতা, যাদবপুর, জয়নগর, বসিরহাট, বারাসত, মথুরাপুর, ডায়মন্ড হারবার, দমদমে ভোট হচ্ছে।
এই প্রলম্বিত ভোটের নির্ঘণ্ট দেখে তৃণমূল বলছে, “এর চাইতে রাজ্যের ৪২টি কেন্দ্রে একদিনে একটি করে মোট ৪২ দফায় ভোট করলেই পারত।”
আজ যে ৭ দফায় ভোটের বিরোধীতা তৃণমূল করছে, রাজ্যে যখন বামফ্রন্ট সরকার ক্ষমতায় তখন তৃণমূলনেত্রী তথা আজকে রাজ্যের যিনি মুখ্যমন্ত্রী সেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একাধিক দফায় রাজ্যে বিধানসভা ও লোকসভা নির্বাচন করার দাবি জানাতেন। তখন তিনি ছিলেন বিরোধী শিবিরে, আজ তিনি শাসক। তাই তখনকার শাসকের স্বর আর আজকের শাসক তৃণমূলের স্বর এক হয়ে যাচ্ছে অন্যদিকে তখনকার বিরোধী দলের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কন্ঠস্বর আজকের রাজ্যের বিরোধীদের কন্ঠস্বরের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে ৭ দফায় ভোট ঘোষণাকে কেন্দ্র করে। এটাই বোধহয় শাসক ও বিরোধীর চরিত্র, যে যখন ক্ষমতায় সে তখন তার মতো করে সবটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায়, না হলেই অসন্তোষ!
সিপিএম নেতা তন্ময় ভট্টাচার্য বলেছেন, “২০১১ সালের পর থেকে পশ্চিমবাংলায় তৃণমূল পুলিশ এবং গুন্ডা দিয়ে ভোট করে একটা অরাজক পরিস্থিতি তৈরী করেছে। তাই তৃণমূল ৭ দফা নির্বাচনে ভয় পাচ্ছে। তৃণমূল জানে রাজ্যে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ মির্বাচন হলে তৃণমূলের ভোট আগের চাইতে ১৫% কমবে।”
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী বলেন, “খুব ভালো হয়েছে পশ্চিমবঙ্গে ৭ দফায় ভোট হওয়ায়। এর ফলে ভোটারদের সময় নিয়ে আলাদা আলাদা করে নিরাপত্তা দিতে পারবে কমিশন। আমি চাই বাংলায় যেদিন যেখানে ভোট তার অনেক আগে সেই সব কেন্দ্রে কেন্দ্রীয় বাহিনী দেওয়া হয়। এই দাবি আমি মুখ্য নির্বাচন কমিশনারকে আগেও বলেছি আবারও বলব।”
এদিকে নির্বাচনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তৃণমূল নেতা শান্তনু সেন বলেন, “এই নির্বাচনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন থাকছে। এটা হচ্ছে তেমন ক্রিকেট খেলা যেখানে আম্পায়ার ঠিক করে দেয় কোনও একটা দলের ক্যাপ্টেন।”