মহানগর ডেস্ক: আসছে আলোর উৎসব। আর এই দীপাবলিকে ঘিরে বাংলায় চল রয়েছে মাকালীর আরাধনা। সেই উৎসবে আলোর সঙ্গে ৮ থেকে ৮০ প্রত্যেকের হাতেই থাকে বাজি। রকমারী আলোর ফুলজুরি নিয়ে বাজির পসোরা সাজিয়ে বসেন দোকানদার। কোথাও কোথাও আবার বাজি মেলাও বসে এই কালীপুজোর আগে। সেখান থেকে ক্রেতারা নিজেদের ইচ্ছা মতো আলোর বাজি, শব্দ বাজি ব্যাগ ভর্তি করে নিয়ে আসে। কিন্তু এবছর আর সেটি হচ্ছে না। প্রকৃতিকে বাজির কবল থেকে রক্ষা করতে এবার পরিবেশবান্ধব ‘সবুজ’ বাজি ছাড়া অন্য কোনও বাজি আর পোড়ানো বা বিক্রি করা যাবে না। মঙ্গলবার একটি জনস্বার্থ মামলার প্রেক্ষিতে এমনই নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী ও অপূর্ব সিংহের ডিভিশন বেঞ্চ। তার সঙ্গে পুলিশ ও দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্যদের ভূমিকা নিয়েও নির্দেশ দিয়েছে বেঞ্চ। তার পর থেকেই তৎপরতা শুরু হয়েছে জেলায়।
বীরভূম জেলা পুলিশ সূত্রে খবর, আদালতের নির্দেশ মানতে এবার থানায় থানায় নিষিদ্ধ বাজি বাজেয়াপ্ত করতে অভিযানের নির্দেশ গিয়েছে।যদিও এর আগে কোর্ট শব্দবাজির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। কিন্তু সব নির্দেশ আমান্য করে জেলাতে দুর্গাপুজোয় নিষিদ্ধ বাজি পোড়ানোর ঘটনা থেকে কালীপুজো নিয়েও আদলতের রায় মান্য করা নিয়ে সংশয় থেকে যাচ্ছে। কারণ জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে দুর্গাপুজো ও কালীপুজোয় যথেচ্ছ নিষিদ্ধ বাজি পোড়ানো হয়। সেখানে প্রসাশনিক সক্রিয়তা অনেক কম। তাই আদালতের নির্দেশ কার্যকর করতে পুলিশের ও দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের সদর্থক ভূমিকা নিয়ে সংশয়ে রয়েছে বাসিন্দারা। কারণও, অনুমোদিত বাজি প্রস্তুতকারক সংস্থার তৈরি সবুজ বাজি কী সহজে মিলবে জানা নেই বাজি বিক্রেতাদের।
অনেকেই বলছেন কেন্দ্রীয় সংস্থা পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড সেফটি অর্গানেইজেশন (পেসো) অনুমোদিত সবুজ বাজি নিয়ে এসে জেলার বাজি বিক্রেতারা চাহিদা মতো বিক্রি করতে পারবেন না। তা ছাড়া বৈধ সবুজ বাজির সঙ্গে অবৈধ বাজি মিশে থাকলে সেটাই চিহ্নিত করার উপায় নেই। আবার অনেক ক্রেতা-বিক্রেতাই সবুজ বাজি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নয়। যদিও প্রশাসনিক কর্তাদের মত, বাজির প্যাকেটের উপরের কিউআর কোড নির্দিষ্ট মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের সাহায্যে ‘স্ক্যান’ করলেই কোনটা আসল আর কোনটা নকল বেরিয়ে আসবে।কিন্তু জেলার প্রতিটি প্রান্তে গিয়ে এভাবে বৈধ বাজি শনাক্ত করা খুবই মুশকিল।
উল্লেখ্য বাজি পোড়ানো নিয়ে গত বারও একই নির্দেশ ছিল আদালতের। বিতর্ক এড়াতে গত বার জেলা পুলিশ চেয়েছিল বাজারে যাতে বাজি বিক্রিই না হয় সে ব্যাপারে কড়াকড়ি করতে। ফলে গত বছর কালীপুজো-দিওয়ালিতে কিছুটা কম বাজি পুড়লেও সেটা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা যায় নি। কোভিড উত্তর পরিস্থিতিতে উৎসবের মরসুমে এ বার জেলা পুলিশ নিষিদ্ধ বাজি পোড়ানো ঠেকায় কী ভাবে সেটাই দেখার।
প্রশাসনের একটি সূত্র বলছে, গতবার শেষ বেলায় সবুজ বাজিতে ছাড় দিলেও রাজ্যের কোনও বাজি উৎপাদন সংস্থার সবুজ বাজি তৈরির অনুমোদন ছিল না। পাশপাশি এবার অনলাইনেও সবুজ বাজি বিক্রি হচ্ছে। ফলে জেলার বিভিন্ন এলাকায় বাজি বিক্রেতাদের দাবি বিক্রি হওয়া সবুজ বাজির চাহিদার তুলনায় সাপ্লাই অনেক কম। ফলে এ সবের আড়ালে অনেক অসাধু ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে সাধারণ কাগজেই কিউআর কোড ছেপে বাক্সের গায়ে সেঁটে বাজি বিক্রির চেষ্টাকে উড়িয়ে দিচ্ছে না কেউই। এমনকি দুর্গাপুজোয় বাজি ফাটানয় ‘ছাড়’ থাকায় জেলায় বিভিন্ন প্রান্তে প্রচুর নিষিদ্ধ বাজি বিক্রি হয়েছে। আর তার মধ্যেই অনেকের কাছেই ব্রাত্য বাজি থেকে গিয়েছে।যা কার্যত সবুজ বাজির চূড়ান্ত কড়াকড়ির মধ্যে নিষিদ্ধ বাজি পোড়ানো আটকানো কষ্টসাধ্য বলেই মনে করছেন পুলিশ ওর প্রশাসনিক কর্তারা।