দিঘা সংলগ্ন জুনপুট থেকে কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা ডিফেন্স রিসার্চ ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন বা ডিআরডিও ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করবে। জুনপুট সৈকতে এই কাজের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে ডিআরডিও।
ডিআরডিও সূত্রের তরফে দাবি করা হয়েছে, ফেব্রুয়ারির শেষে বা মার্চের গোড়াতেই এখান থেকে তাদের ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করার কথা। তবে এই বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা কিছুই জানতেন না বলে তারা অভিযোগ করছেন। গত কয়েক দিন ধরে লঞ্চিং প্যাড তৈরি হচ্ছে, লাগানো হয়েছে ডিআরডিও-র সাইনবোর্ড। এই এলাকাটি মৎস্যজীবী প্রধান, এই কারনে বাসিন্দাদের আশঙ্কা, এখান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের কাজ করলে দূষণ সৃষ্টি হবে, যার পরিণতিতে বিপন্ন হবে জীব বৈচিত্র এবং সাধারণ মানুষ ও মৎষ্যজীবীদের জীবন-জীবিকা।
ওড়িশার চাঁদিপুর বা অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটা থেকে ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ হলেও এ রাজ্যে এমন উদ্যোগ এই প্রথম।
এদিকে পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক তনবীর আফজল মানছেন, ‘‘ফেব্রুয়ারি শেষে বা মার্চের গোড়ায় ডিআরডিও ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করবে। একটা রকেট ছাড়া হবে বালেশ্বর থেকে। আর একটা জুনপুট থেকে। দু’টো ক্ষেপণাস্ত্র কী ভাবে পরস্পরের সঙ্গে আঘাত লেগে আলাদা হয়ে যায়, সেই সংক্রান্ত গবেষণার জন্য জেলার এই জায়গাটি বেছেছে ডিআরডিও।’’ জেলাশাসক জানান, এ জন্য রাজ্য সরকার জমি দিয়েছে। সব রকম সহযোগিতা করা হয়েছে জেলা প্রশাসনের তরফেও।
প্রায় দু’দশক আগে পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরির কথা হয়েছিল পূর্ব মেদিনীপুরের হরিপুরে। স্থানীয়দের বাধায় তা করা সম্ভব হয়নি। এখন সেই হরিপুরের অদূরেই জুনপুটে ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ হতে চলেছে তৃণমূল সরকারের সহায়তায়, জারন তৃণমূল প্রশাসন ডিআরডিওকে জুনপুট থেকে ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের জন্য জমি দেওয়া হয়েছে এবং সমস্ত রকমের সহায়তা করা হয়েছে এবং হচ্ছে।
জুনপুটের যে এলাকায় এই ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ কেন্দ্র হচ্ছে এ বার সেখানকার পঞ্চায়েত জিতেছে বিজেপি। সেখানার বিধানসভাতেও বিজেপি বিধায়ক। তবে বিজেপি অবশ্য এখান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণে শঙ্কিত নয়। দক্ষিণ কাঁথির বিধায়ক তথা বিজেপির কাঁথি সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অরূপকুমার দাস বলেন, ‘‘জাতীয় নিরাপত্তার খাতিরে সকলের সহযোগিতাই করা উচিত।’’ এদিকে রামনগরের বিধায়ক তথা রাজ্যের কারামন্ত্রী অখিল গিরি বলছেন, ‘‘মৎস্যজীবীদের জীবন-জীবিকা বিঘ্নিত হলে আমরা প্রতিরোধ করবই।’’
মৎষ্যজীবীদের আশঙ্কা কয়েক দশক ধরে জুনপুটে শুঁটকি মাছের ব্যবসা, এখান থেকে মৎষ্যজীবীরা মাছ ধরতে যায়, ডিআরডিও বলছে এই এলাকায় আর আসা যাবে না। তাহলে আমরা যাবো কোথায়? খাবো কি?
তবে পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক তানবীর আফজল জানিয়েছেন, “জুনপুটই এখন এক সোনাকী ইতিহাস তৈরির অপেক্ষায়।”