মহানগর ডেস্ক: কলকাতার এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ঋণের নামে প্রায় আড়াই কোটি টাকা আত্মসাৎ করে দিল্লিতে গিয়ে পুরো একটি পরিবার গা ঢাকা দিয়েছিল। সিম পালটে,মোবাইল বন্ধ করে, ছিল বহাল তবিয়তেই। দিল্লিতে বাড়ি থেকে বেরও হত না কেউ। কিন্তু বিপদ বাড়ল অনলাইনে কেনাকাটা করতে গিয়ে।
মধ্য কলকাতার পোস্তা থানার আধিকারিকরা, অনলাইন অ্যাপের জিনিস সরবরাহকারীদের সঙ্গে ছদ্মবেশে গিয়েই হাতেনাতে প্রতারণার অভিযুক্ত বাবা ও ছেলেকে গ্রেফতার করলেন। পুলিশের তরফে অভিযোগ, ওই পরিবার ওই ব্যবসায়ীর কাছ থেকে আড়াই কোটি টাকা হাতালেও বড়বাজারের অন্যান্য ব্যবসায়ী ও ব্যাঙ্ক-সহ মোট প্রায় ৫ কোটি টাকা হাতিয়ে দিল্লি পালায়। পুলিশ সূত্রে খবর, দুই ধৃতর মধ্যে জগদীশ দাইয়া বাবা ও আদিত্য দাইয়া ছেলে। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে বাবা ও ছেলে পোস্তার কটন স্ট্রিটের এক ব্যবসায়ীর কাছে আসে। তারা জানায়, ব্যবসার জন্য প্রায় আড়াই কোটি টাকা তাদের প্রয়োজন। ৬ মাসের মধ্যে ওই টাকা ফেরত দিয়ে দেওয়া হবে বলা হয়। সেইমতো চুক্তিপত্রই তৈরি হয় ব্যবসায়ীদের মধ্যে। ব্যবসায়ীও দাইয়া পরিবারকে ২ কোটি ৩৫ লক্ষ টাকা দেন। ওই সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর পুরো পরিবার এসে হাজির হয় কটন স্ট্রিটে ব্যবসায়ীর কাছে। এবার তারা টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য ব্যবসায়ীর কাছ থেকে এক বছর সময় চায়। নতুন করে চুক্তিপত্র তৈরি করে। সঙ্গে দাইয়া পরিবার হাওড়ায় নিজেদের জমি ও বাড়ির জমির দলিল এবং যাবতীয় নথি ব্যবসায়ীর হাতে তুলে দেয়। ব্যবসায়ীকে সঙ্গে একটি চেকও দেওয়া হয় ২ কোটি ৩৫ লক্ষ টাকার।
সেই টাকা হাতে না পাওয়ার পর তা আদায় করার জন্য এক বছর পর ব্যবসায়ী জগদীশ ও আদিত্যকে ফোন করেন। কিন্তু দু’জনের মোবাইল ফোন বন্ধ। সন্দেহের বশে তিনি বড়বাজারে দাইয়ার অফিসে লোক পাঠান। দেখা যায়, অফিস তালা বন্ধ। হাওড়ায় তাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সেখানেও তালা। তখন বড়বাজারে খোঁজখবর নিয়ে ব্যবসায়ী জানতে পারেন, বিভিন্ন জনের কাছ থেকে বিপুল টাকা হাতিয়ে স্ত্রী, ছেলে আদিত্য, তিন মেয়েকে নিয়ে উধাও হয়েছে জগদীশ দাইয়া। তখন ওই দলিলপত্র নিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যাওয়ার পর জানা যায়, সেগুলি কপি মাত্র। আসল দলিল ব্যাঙ্কে জমা দিয়ে বিপুল পরিমাণ টাকা ঋণ নিয়েছে দাইয়ারা। মোট ঋণের পরিমাণ পাঁচ কোটি টাকার বেশি। ওই চেকটি জমা দেওয়ার পর সেটিও বাউন্স করে। ব্যবসায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আদালতে আবেদন জানান। আদালতের নির্দেশে গত অক্টোবরে পোস্তা থানার পুলিশ প্রতারণার মামলা শুরু করে।দাইয়াদের পরিচিত কয়েকজন ব্যক্তির মোবাইলের সূত্র ধরে তদন্ত শুরু করে পুলিশ।