মহানগর ডেস্কঃ শিক্ষা জীবন গড়ার একটি কাঠামো, কারণ শিক্ষাই একমাত্র একটা মানুষ কে সঠিক পথে চালনা করতে পারে। শিক্ষা চেতনার বৃদ্ধি ঘটানোর পাশাপাশি ঠিক ভুল সিদ্ধান্ত নিতে শেখায়। জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপ ভেবেচিন্তে নিলে পরে আফসোস করতে হয় না। তাই নাবালিকা বিবাহ বন্ধ করতে সব থেকে বেশি যেটির দরকার তা হচ্ছে শিক্ষার প্রসার ঘটানো। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, দেশে যদি ১৮ বছর পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষা ব্যবস্থার কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়, বা যারা পড়াশোনা করতে চেয়েও টাকার অভাবে করতে পারছেনা তাদের জন্য এই প্রকল্প যদি চালু করা হয়, তাহলে নাবালিকা বিবাহ মুক্ত ভারত গড়ে তোলা সম্ভব হবে। যদি বাস্তবে এখন থেকে এই কর্মসূচি বা পদক্ষেপ নেওয়া হয় তাহলে গত কয়েক বছরে অর্থাৎ ২০৩০ সালের মধ্যেই নাবালিকা বিবাহ মুক্ত দেশ গড়ে উঠবে।
ওই সংগঠনটি এও বলেছে যে, এখন ভোটপর্ব চলছে, আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে প্রতিটি রাজনৈতিক দল, যেন তাদের ইস্তাহারের মধ্যে ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত ‘অবৈতনিক শিক্ষাকে’ মর্যাদা দিয়ে অন্তর্ভুক্ত করুক।
২০৩০ সালের মধ্যে নাবালিকা বিবাহ নির্মূল করতে হবে, রাষ্ট্রপুঞ্জের সুস্থায়ী উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রায় এমনই কথা বলা হয়েছে।
মেয়েদের প্রাপ্ত বয়সের আগেই বিয়ে অর্থাৎ নাবালিকা বিবাহ বলা যেতে পারে অনেকটাই নির্ভর করে শিক্ষায় অজ্ঞতা এবং পরিবারে অর্থিক দুর্যোগ এর মতো পরিস্থিতির জন্য । স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটির দাবি, যদি ১৮ বছরের কম বয়সিদের বিনামূল্যে এবং বাধ্যতামূলক ভাবে শিক্ষার ব্যবস্থার কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়, তাহলে নাবালিকা বিবাহ রুখে দাঁড়ানো বা বন্ধ করা সম্ভব হবে। কারণ, নারী স্বাবলম্বী হতে শিখবে, আত্মবিশ্বাস বাড়বে, সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবে, কারণ শিক্ষা বুদ্ধির রুদ্ধ দ্বার খুলে দেয়।
শিক্ষার সাথে নাবালিকা বিবাহের মধ্যে, ব্যস্তানুপাতিক সম্পর্ক কিন্তু থেকেই যায়। উদাহরণ হিসেবে, সংস্থাটি কেরলের পরিস্থিতির কথা বলেছে। দক্ষিণী রাজ্যে যদি তাকানো যায়, তাহলে দেখা যাবে সেখানের নারী শিক্ষার হার ৯৬ শতাংশ। এর পাশাপাশি কেরলে, নাবালিকা বিবাহের হারও ৬ শতাংশের নীচে। যেখানে জাতীয় স্তরে নাবালিকা বিবাহের হার ২৩.৩ শতাংশ। আবার, বিহারে নারীদের শিক্ষার হার ৬১ শতাংশ। এদিকে পশ্চিমবঙ্গের ওই পড়শি রাজ্যে নাবালিকা বিবাহের হার সেখানে দেখা যাচ্ছে, ৪১ শতাংশে দাঁড়িয়ে।
মূলত, আন্তর্জাতিক নারী দিবসের দিন একটি গবেষণা পত্র প্রকাশ করা হয়। ১৬০টি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন একজোট হয়ে এই গবেষণা পত্র প্রকাশ করেছে। সংগঠন গুলি এক জোট হয়ে দেশ জুড়ে যে নাবালিকা বিবাহ এখনো অব্যাহত রয়েছে, তার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে প্রকারে শামিল হয়েছে। এই গবেষণা পত্রে বলা হয়েছে যে, “নাবালিকা বিবাহ” এটি একটি জঘন্য কাজ যা সামাজিক অপরাধের সমতুল্য।
জাতীয় পারিবারিক স্বাস্থ্য সমীক্ষায় উঠে এসেছে যেই অথ্য, তা দেখে অবাক হওয়ার মতো। দেশে ২০-২৪ বছর বয়সি মেয়েদের ২৩.৩ শতাংশরই, ১৮ বছরের আগে বিয়ে হয়েছিল। এমনকি ২০১১ সালের জনগণনার রিপোর্টে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে, প্রতি ৩ টে মেয়ের মধ্যে ২ জন কেই ১৫-১৭ বছর বয়সের মধ্যেই বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
চাইল্ড ম্যারেজ ফ্রি ইন্ডিয়ার পলিসি অ্যান্ড রিসার্চের অধিকর্তা জ্যোতি মাথুর এই নাবালিকা বিবাহ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘‘কেন্দ্র এবং রাজ্য উভয়ই যদি নাবালিকা বিবাহ বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ করে, প্রতিটি শিশুকে ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত বিনামূল্যে ও বাধ্যতামূলক ভাবে শিক্ষা প্রাঙ্গণে নিয়ে আসতে পারে তা হলে নাবালিকা বিবাহ রোখার গতি ত্বরান্বিত হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে দেশ নাবালিকা বিবাহ মুক্ত হবে।’’
আবার এই সমীক্ষায় কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের ছবিটা একটু অন্যরকম উঠে এসেছে। নাবালিকা-বিবাহ বা বালিকাবধূর বিবাহের সংখ্যার দিক থেকে দেশের মধ্যে ‘বাংলা’ কিন্তু এগিয়ে। এই রাজ্যে নারী জাতির শিক্ষার হার ৭৭ শতাংশ, কিন্তু বালিকাবধূর বিবাহের সংখ্যার হার শুনলে অবাক হবেন, ৪২ শতাংশের ওপরে রয়েছে। হতভম্ব হওয়ার মতো অবস্থা, শিক্ষা নাবালিকা বিবাহ রুখতে অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে। তাহলে শিক্ষার এত প্রসার হওয়া সত্ত্বেও, বাংলায় তাহলে কেন নাবালিকা বিবাহ আটকাতে পারা যাচ্ছেনা? এই সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, ‘নাবালিকা বিবাহ রুখতে শিক্ষার একটি অগ্রণী ভূমিকা আছে ঠিকই। কিন্তু শিক্ষার পাশাপাশি আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি এবং ওই অঞ্চলের সাংস্কৃতিক প্রভাবও নাবালিকা বিবাহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ে থাকে।’