মহানগর ডেস্ক : রেখা পাত্র, বসিরহাটের বিজেপি প্রার্থী,সন্দেশখালিকাণ্ডের প্রতিবাদী মুখ। মুখে কাপড় ঢেকে যিনি শেখ শাহজাহান বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদে গর্জে উঠেছিলেন, যাঁর মুখ থেকে কথা বলার সময় হিন্দি শব্দ বেরিয়ে যেতেই তৃণমূল তাঁকে বহিরাগত তকমা দিয়ে দিয়েছিলেন, সেই রেখা পাত্র বসিরহাটের এবারের বিজেপি প্রার্থী, এখন আর তাঁকে মুখ ঢেকে কথা বলতে হবে না, হচ্ছেও না।
রেখা পাত্রর বাড়ি সন্দেশখালির পাত্র পাড়ায়। তাঁর স্বামী পরিযায়ী শ্রমিক। শিবু হাজরা, উত্তম সর্দারদের দল যেদিন রেখার শিশু কন্যাকে প্রহার করে, সেদিন বাধা দিলে রেখার চুলের মুটি ধরে বেদম মার দেয় শিবু-উত্তমের দল। রেখা কিন্তু দমে যাননি। তিনি সন্দেশখালি থানায় শিবু হাজরা, উত্তম সর্দারদের নামে এফআইআর করেন এবং তার পরই তৃণমূলের এই গুনধর শিবু, উত্তম গ্রেফতার হন।
প্রধানমন্ত্রী বারাসাতে সভা করতে এলে রেখা পাত্রর নেতৃত্বে সন্দেশখালির নির্যাতিতা মহিলাদের একটি অংশ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করেন। প্রধানমন্ত্রী তখনই মনস্থির করে ফেলেছিলেন হয়ত যে রেখা পাত্রই হবেন এবার বসিরহাটের বিজেপি প্রার্থী। ১ জুন বসিরহাটের ভোট। ২৬ মার্চ প্রধানমন্ত্রী রেখাকে ফোন করলেন। এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে বসিরহাটের বিজেপি প্রার্থী প্রধানমন্ত্রীর পছন্দের, এবং এই কারণেই রেখার পাশে ভোটে জেতার যাবতীয় শক্তি নিয়ে বিজেপি যে ঝাঁপিয়ে পড়বেই সেটা নিশ্চিত।
রেখা পাত্রর লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া বঙ্গ রাজনীতিতে একটা ইতিহাস এবং রেখা পাত্রকে প্রধানমন্ত্রীর ফোন করাও একটা ইতিহাস। বাংলার লোকসভা নির্বাচনে এবার অনেক গ্ল্যামার প্রার্থী। তৃণমূলের এবারের গ্ল্যামার প্রার্থী রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়, সায়নী ঘোষ, দেব, বিজেপির হীরণ চট্টোপাধ্যায়, অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তবে প্রধানমন্ত্রীর ফোন পাওয়ার পর পরিচিত গ্ল্যামার প্রার্থীদের চাইতে মিডিয়ার চর্চায় ইতিমধ্যেই অনেকটা বাড়তি জায়গা করে নিয়েছেন রেখা পাত্র।
তবে গত ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনে বসিরহাট লোকসভা নির্বাচনে ৫৪% ভোট পেয়ে জয়লাভ করেন তৃণমূলের গ্ল্যামার প্রার্থী নুসরাত জাহান। বসিরহাটের সাতটি বিধানসভায় তৃণমূলের যে প্রভাব তার ফলে গত নির্বাচনে বিজেপি ২৪% ভোটে বসিরহাটে তৃণমূলের থেকে পিছিয়ে ছিল। তাই এই ভোট ব্যাবধান অতিক্রম করে বিজেপির জিততে হলে জোর লড়াই করতে হবে সেটা স্বাভাবিক ঘটনা। তবে এক্ষেত্রে সন্দেশখালিকাণ্ডে তৃণমূলের শেখ শাহজাহান, শিবু হাজরা, উত্তম সর্দার সহ অনেক বাঘসম নেতা এখন জেলে। তাই তৃণমূলের এবার বসিরহাটে ভোট করা এবার যথেষ্ট কঠিন। সন্দেশখালির ঘটনার পর সন্দেশখালির তৃণমূলের বুথ স্তরের নেতাদের মনোবল এখন অনেকাংশে ভেঙে গেছে। তারা নিজেরাই বলছে, কোন ভরসায় ভোট চাইতে যাব হাজি নুরুলের হয়ে? মানুষ যদি তাড়া করে! সন্দেশখালির মানুষজন এখনও রাগে ফুঁসছেন শেখ শাহজাহান বাহিনীর অত্যাচারে। তার উপর ২০১৪ সালের কিছু আগে এক সাম্প্রদায়িক সংঘাতের প্রধান নাম ছিল হাজি নুরুলের। তাই হাজি নুরুল ২০০৯ সালে বসিরহাটে জিতলেও ২০১৪ তে হাজি নুরুলকে বসিরহাটে প্রার্থী করেনি তৃণমূল। পর্যায়ক্রমে ইদ্রিশ আলি এবং অভিনেত্রী নুসরাত জাহানকে প্রার্থী করে তৃণমূল এবং পরপর এই দুই প্রার্থীই জয়ী হয়। তবে ২০১৪, ২০১৯ এর তৃণমূল আর আজকের বসিরহাটকাণ্ডের পর তৃণমূল এক নয়। তার উপর আইএসএফ এবার এক প্রধান শিক্ষককে বসিরহাটে প্রার্থী করেছে, এই আইএসএফ প্রার্থী প্রাক্তন সিপিএম, তিনি সংগঠন করা মানুষ। এদিকে বসিরহাট কেন্দ্রে সিপিআই প্রার্থী দেবে। তাই একদিকে সিপিআই, আইএসএফ ভোট কাটবে তৃণমূলের। অন্যদিকে শাহজাহানের অত্যাচার বিজেপির পক্ষে কাজ করবে। তাই বলা যায় রেখা পাত্র এবার বসিরহাটে একটা ফ্যাক্টর হবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যতোই ৫০০ থেকে লক্ষ্মীর ভান্ডার ১০০০ করে দিক না কেন, রেখা পাত্র যখন বলবেন, কী ভাবে তাঁর শিশু কন্যাকে শেখ শাহজাহান বাহিনীর অন্যতম সাগরেদ শিবু, উত্তমরা দিনের আলোয় মেরেছে, বাধা দিতে গেলে রেখা পাত্রকে চুলের মুঠি ধরে শিবু ও উত্তম, যারা শেখ শাহজাহানের সাগরেদ, বেদম মেরেছে, তখন বসিরহাটের ভোটাররা হয়তো ইভিএমের সামনে দাঁড়িয়ে একবার ভাববেন, ১০০০ টাকা না সম্মান, কোনটা তাদের কাছে মূল্যবান! তাই রেখা পাত্র এবাট বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রের গেম চেঞ্জার হলে অবাক হওয়ার কিছু নেই, কারণ রাজনীতি সম্ভাবনার বাণিজ্য!