মহানগর ডেস্ক : বামফ্রন্টের প্রথম দফার প্রার্থী তালিকায় নতুনের জয়গান গেয়েছেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু। ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে ১৬ জন প্রার্থীর যে তালিকা বিমান বসু বৃহস্পতিবার ঘোষণা করেছেন তার মধ্যে লোকসভা নির্বাচনের প্রার্থী হিসাবে ১৪ জনই নতুন।
এঁদের মধ্যে আবার অনেকে বিধানসভা নির্বাচনে ২০২১ এ প্রার্থী হয়ে পরাজিত হয়েছেন। তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় এসে একটা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো যুব নেতা তৈরী করতে পেরেছেন, পেরেছেন দেবাংশু ভট্টাচার্য, ঋজু দত্ত, সুদীপ রাহার মতো একগুচ্ছ তরুণ নেতাকে বাংলার রাজনীতির ময়দানে ছাড়তে। সেটা কিন্তু বামফ্রন্ট তথা সিপিএম পারেনি।
সিপিএমের একদা তরুণ প্রজন্মের নেতাদের মধ্যে পরবর্তীকালে রাজ্যের বড় নেতা-মন্ত্রী হয়েছেন গৌতম দেব, মানব মুখোপাধ্যায়, সুজন চক্রবর্তী, বরীণ দেব, মহম্মদ সেলিম, শ্রীকুমার মুখোপাধ্যায়ের মতো নেতা। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যতো যুব নেতা থেকে রাজ্য মন্ত্রীসভায় এসে শেষ পর্যন্ত পচিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীও হয়েছিলেন। কিন্তু তারপর একটা বড় সময় ধরে প্রবীণদের কাঁধে ভড় করেই সিপিএম তথা বামফ্রন্ট ৩৪ বছর রাজত্ব চালিয়ে অবশেষে ২০১১ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল তৃণমূল এবং কংগ্রেসের জোটের কাছে পরাজিত হয়ে বাংলা থেকে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে আজ রাজ্য বিধানসভা এবং লোকসভায় শূন্যে পরিণত হয়েছে।
তবে সিপিএম ২০১১-র পর বুঝেছে এই প্রাজ্ঞ, প্রবীণ বামনেতাদের উপর বাংলার মানুষ ভরসা করতে পারছে না। তাই ২০২১ এ একঝাক তরুণ-তরুণীকে বামফ্রন্ট বিধানসভার প্রার্থী করে এবং ওই নির্বাচনেই বামফ্রন্ট বাংলায় শূন্যে পরিণত হয়। তারপর ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনেও রাজ্যে ধরাশায়ী হয় বামফ্রন্ট। এবার ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে ফের বামফ্রন্ট তরুণ শক্তিতেই ভরসা করছেন, তেমন ইঙ্গিতই বৃহস্পতিবার বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে দিয়েছেন। এদিন ১৬ জন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেঋেন বিমানবাবু। তার মধ্যে দমদমের সিপিএম প্রার্থী সুজন চক্রবর্তী এবং মেদীনিপুরের সিপিআই প্রার্থী বিপ্লব ভট্ট ছাড়া বাকি ১৪ জনই নতুন এবং তরুণ-তরুণী। এই প্রার্থী তালিকায় লোকসভা নির্বাচনে নতুন প্রার্থী যাদবপুরের শ্রীজন ভট্টাচার্য, তমলুকের সায়নদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, শ্রীরামপুরের দীপসীতা ধরের মতো প্রার্থী আছেন। বামফ্রন্ট এখন রাজ্যের সভাসমিতিতে জীবীত হলেও বিধানসভায় শূন্য। তৃণমূল তাই সর্বক্ষণ বামফ্রন্ট তথা সিপিএমকে “শূন্য” বলে তাচ্ছিল্য করে। প্রশ্ন একটাই, সিপিএম তথা বামফ্রন্ট কী বিপদের সময় ঝুঁকি নিয়ে নতুন মুখকে এগিয়ে দিচ্ছে ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের লড়াইয়ের ময়দানে? না হলে কেন ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনে পরাজিত সৃজন, দীপসীতা, সায়নদীপদের মতো প্রার্থীকে ফের লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী করা হল? সিপিএম কী নিশ্চিত এই নতুন প্রার্থীদের লোকসভা নির্বাচনের প্রার্থী করে ভোট বৈতরণী পার করতে পারবে? না কি এটা তাদের অ্যাসিড টেস্ট? প্রশ্ন উঠছে এই কারণে সিপিএম তথা বামফ্রন্ট তাদের ভরা সময়ে এই নতুনের জয়গান গাইলে আজ বঙ্গ রাজনীতিতে হয়তো আরও দু-পাঁচজন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, বিমান বসু, গৌতম দেব, মহম্মদ সেলিম, মানব মুখোপাধ্যায়দের মতো নেতার জন্ম দিতে পারত, তবে ৩৪ বছরের শাসন ব্যবস্থায় থেকে সিপিএম তথা বামফ্রন্ট গতানুগতিক পথে চলতে গিয়ে এসএফআই, ডিওয়াইএফআই বা সিপিআই, আরএসপি,ফরওয়ার্ড ব্লকের যুব সংগঠনের সম্ভাবনাময় বয়সে তরুণ নেতানেত্রী গুরুত্ব দেয়নি, শাসন ব্যবস্থায় আনেনি।
৩৪ বছরে এই চেষ্টা চালালে আজ বামফ্রন্টের বাংলায় এই কঠিন পরিস্থিতির মুখে হয়তো পড়তে হত না। তবে রাজনীতি সম্ভাবনার খেলা। সিপিএম তথা বামফ্রন্ট সেই সম্ভাবনার উপর নির্ভর করে নতুনের জয়গান গেয়ে ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে কতটা সাফল্য পায় সেটা দেখার। তবে রাজনীতিতে কোনও কিছুই অসম্ভব নয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন একা তৃণমূলের সাংসদ ছিলেন তখন কে জানত এই তৃণমূলই ২০১৯-এর লোকসভায় রাজ্য থেকে ২২টি আসন পাবে? বিজেপি কি জানত ১ থেকে ১৮ সাংসদ বাংলা থেকে তারা পাবে। হয়তো এসব ভেবেই বামফ্রন্ট সম্ভাবনার খেলা রাজনীতিতে নতুনের জয়গান গাইছে।