Partha Bhowmik
“আমি আজই বিজেপিতেই যাচ্ছি, কলকাতা বা দিল্লতে”, জানালেন অর্জুন সিং
মহানগর ডেস্ক : অর্জুন সিংয়ের স্পষ্ট ঘোষণা, ” আমি আজই বিজেপিতে যোগ দিচ্ছি। আরও এক বড় তৃণমূলের পদাধিকারী এবং অনেক মানুষ যোগ দেবেন। দুপুর দেড়টার মধ্যে আমার কাছে সূচনা আসবে। আমার সঙ্গে জেপি নাড্ডার কথা হয়েছে। আমায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন আমি বিজেপির সাংসদ। তারপরেও আমায় ব্রিগেডের মঞ্চে বসিয়েছে।”
বৃহস্পতিবার এই ঘোষণার পর অর্জুন বলেন, “নৈহাটির যে প্রার্থী তাঁর অন্যায়ের জন্য বড়মার কাছে জানিয়ে আসব। নৈহাটিতে শেখ শাহজাহানের প্রচুর সম্মত্তি, বিঘার পর বিঘা জমি কেনা আছে। এর সঙ্গে পার্থ ভৌমিকের যোগ আছে কি না সেটা বড়মার কাছে জানিয়ে আসব। শেখ শাহজাহানকে বাঁচাতে পার্থ ভৌমিককে কেন পাঠান হল? সন্দেশখালিরতে বিধায়ক আছে। এবার সেই ফাইল খোলা হোক।” পার্থ ভৌমিক সমস্ত অভিযয়োগ অস্বীকার করে বলেন, “এগুলো বোকা বোকা কথা। আগে কেন বলল না? বওজেপিতে গিয়ে কেন বলছে?” এদিকে অর্জুনের এই ঘোষণা শুনেই ব্যারাাকপুরের অর্জুন বিরোধী তৃণমূল নেতা সোমনাথ শ্যাম মুখ খুলেছেন। তিনি বলেছেন, “আমাদের কাছে দল যা জানতে চেয়েছিল অর্জুন সম্পর্কে দলকে জানিয়েছি। দল সেই অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন অর্জুন কোথায় যায় সেটা তাঁর বিষয়। তবে ব্যারাকপুরে সে প্রার্থী হলে জানাতে হবে এখানকার খুনের ঘটনা, তাতে কে যুক্ত, ব্যারাকপুরের মানুষকে জানাতে হবে তো তাদের কেন্দ্রে কে প্রার্থী হচ্ছেন।”
এদিকে সোমনাথের এই হুঁশিয়ারির পরোয়া না করেই অর্জুন বলেছেন, “আমি বিজেপিতে আজই যোগ দিচ্ছি। আমার সঙ্গে এখানকার বহু মানুষ বিজেপিতে যোগ দিচ্ছে, তৃণমূলের এক পদাধিকারীও যোগ দিচ্ছে।” তবে তিনি কী ব্যারাকপুরের বিজেপি প্রার্থী? এই প্রশ্নে অর্জুনের কৌশলী ঘোষণা, “আমি বিজেপিতে যাচ্ছি। তবে ব্যারাকপুরে কে প্রার্থী হবেন সেটা দল ঠিক করবে।”
প্রার্থী হতে না পেরে অর্জুন সিং বললেন, “ব্রিচ অফ ট্রাস্ট, জানলে তৃণমূলে আসতাম না”
মহানগর ডেস্ক: তৃণমূল নেতৃত্ব তাঁর সঙ্গে বিশ্বাসভঙ্গের কাজ করেছে। ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থী হতে না পেরে এ ভাবেই নিজের ক্ষোভ উগরে দিলেন অর্জুন সিং।
রবিবার অভিষেক যখন ব্রিগেডে জনগর্জন সভায় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করছেন তখন মঞ্চে উপস্থিত অর্জুন সিং। অভিষেক ঘোষণা করলেন, “ব্যারাকপুরে প্রার্থী হলেন পার্থ ভৌমিক।” মঞ্চে তখন দাঁড়িয়ে অর্জুন সিং।
সভা শেষে অর্জুন সিং বললেন, “আমায় যে তৃণমূলে ডেকে এনেছিলেন তিনি বলেছিলেন ব্যারাকপুরে কাজ করতে হবে। ব্যারাকপুরেই আমায় প্রার্থী করা হবে। এটা দেড় বছর আগের কথা। আমায় কয়েকদিন আগে বলা হয়েছিল ব্যারাকপুর নয়, অন্য কোথাও। তো আমি বলেছি আমি ব্যারাকপুরেই কাজ করতে চাই। এটা জানলে আমি আসতাম না। এটা ব্রিচ অফ ট্রাস্ট।”
রাজনীতিতে “ট্রাস্ট” বলে কিছু কি হয়? এই ঘটনা আবার সেই কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। কেননা ব্যারাকপুরে প্রার্থী হতে না পেরে মুহূর্ত কালক্ষেপ না করে অর্জুন সিং তৃণমূলের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। সন্ধ্যায় অর্জুন অনুগামীদের দ্বারা অবরোধ হয়েছে ব্যারাকপুর ট্রাঙ্ক রোড।
অন্যদিকে ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনের আগে মমতার সঙ্গে দেখা করে দিল্লি গিয়ে সটান বিজেপিতে যোগ দিয়ে অর্জুন সিং যে ধাক্কা দিয়েছিলেন তৃণমূলকে, তাহলে কি সেই ধাক্কার পাল্টা আঘাত অর্জুনকে করলেন মমতা এবং অভিষেক?
তবে এরই মধ্যে উল্লেখযোগ্য মন্তব্য অর্জুনকে নিয়ে করেছেন রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি বলেছেন, “দ্রৌপদী মুর্মুকে রাষ্ট্রপতি প্রার্থী হওয়ার জন্য তৃণমূলের অর্জুন সিং ভোট দিয়েছিলেন।”
বিজেপি কাউন্সিলর সজল ঘোষ বলেছেন, “অর্জুন সিংয়ের নামে ১০০ টা মিথ্যা মামলা দিয়ে তাঁকে নাজেহাল করেছিল তৃণমূল। তাই অর্জুন সিং বিজেপি ছেড়ে তৃণমূূলে যোগ দিয়েছিলেন। তখনও বলেছি, এখনও বলছি, অর্জুন সিংয়ের নামে ১০০ টা মিথ্যা মামলা তৃণমূল করেছিল তাঁকে ফাঁসানোর জন্য।”
তবে শুভেন্দু এবং সজলের অর্জুন প্রীতি শুনে মনে হচ্ছে ব্যারাকপুরে তৃণমূল প্রার্থী পার্থ ভৌমিকের বিরুদ্ধে আবারও হয়তো অর্জুন সিং প্রার্থী হবেন।
এদিকে পার্থ ভৌমিক বলছেন, “আমি তৃণমূলের প্রতিনিধি মাত্র। আমার বিশ্বাস অর্জুন সিংকে দল সম্মানজনক কোনও পদ দেবে। অর্জুন, আমি, আমরা একসঙ্গে ভোটের কাজ করব।
সন্দেশখালিতে জনরোষে প্রাণ নিয়ে লুকিয়ে অজিত, পার্থ বললেন, “দলের কোনও পদে ছিলেন না অজিত”
মহানগর ডেস্ক: সন্দেশখালির বেড়মজুর গ্রামের ক্ষুব্ধ লাঠি, ঝাঁটা হাতে মহিলাদের ধাওয়া খেয়ে এই অঞ্চলের তৃণমূল অঞ্চল সভাপতি অজিত মাইতি প্রাণ ভয়ে এক ব্যক্তির বাড়িতে লুকিয়ে পড়েছেন।
রবিবার সন্দেশখালির বেড়মজুরে যখন গলায় খোল নিয়ে কীর্তন করে রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক বললেন, “দেখছেন তো মানুষ আনন্দে আছেন।” তখন সেই বেড়মজুরেই তৃণমূলের নেতা অজিত মাইতি গণরোষে লুকিয়ে।
রবিবার বেড়মজুরের মহিলারা পুলিশের কাছে দাবি করেন, “পুলিশ এতো প্রতিশ্রুতি দিতে পারছে কেন শেখ শাহজাহানকে গ্রেফতার করতে পারছে না?”
পুলিশের সঙ্গে গ্রামের মহিলাদের যখন এই নিয়ে বচসা চলছে তখন তৃণমূল নেতা অজিত মাইতিকে তারা দেখতে পেয়ে লাঠি, ঝাঁটা নিয়ে তেড়ে যান। তখন অজিত মাইতি কোনওক্রমে প্রাণ হাতে নিয়ে অন্য এক সিভিক ভলান্টিয়ারের বাড়িতে আশ্রয় নেন এবং সেই বাড়ির গেটে তালা দিয়ে দেন। এদিকে যে বাড়িতে অজিত মাইতি আশ্রয় নিয়েছেন সেই বাড়িতে ঝাঁটা হাতে মহিলারা বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। পুলিশ প্রাণপনে অজিত মাইতিকে বিক্ষুব্ধ মহিলাদের হাত থেকে রক্ষার চেষ্ট করতে থাকে। মহিলারা দাবি করেন, আমরা জানতে চাই কেন অজিত মাইতি আমাদের বাড়ির ছেলেদের নামে মামলা করল? কেন তার অভিযোগে পুলিশ আমাদের ছেলে, স্বামীকে গ্রেফতার করেছে, কে তাদের ছাড়াবে? অজিত মাইতিকে এই মুহূর্তে গ্রেফতার করতে হবে। না হলে অজিত মাইতিকে আমাদের হাতে ছেড়ে দিতে হবে। গ্রামের মহিলারা বলেন, অজিত মাইতি যদি কিছু না করবেন তাহলে লুকিয়ে আছেন কেন?
অজিত মাইতির বক্তব্য, “আমি কোনও অন্যায় করিনি। আমি যদি কোনও জমি নিয়ে থাকি ফিরিয়ে দেবো। আমি তৃণমূলের অঞ্চল সম্পাদক। আমি জমি নিয়ে থাকলে সব ফিরিয়ে দেবো। আমি পার্টির হয়ে কাজ করতাম। শেখ শাহজাহান, শেখ সিরাজের কথায় কাজ করিনি। আমি জমি দখলের বিষয় জানি না, ইদানিং শুনছি, আমার কাছে কোনও অভিযোগ আসেনি। গ্রামবাসীরা আন্দোলন করছে, তাই আমি আতঙ্কে, ভয়ে লুকিয়ে আছি। আমি বলছি আমায় যদি কেউ জানাতো তাদের সমস্যার কথা, আমি সমাধান করতাম। পুলিশের উপর আমার ভরসা আছে, না হলে আমায় মেরে ফেলত। আমি এই দলের সঙ্গে যুক্ত তিন বছর। আমি ২০১৯ সালে বিজেপি করতাম। ২০১৯ সালে যখন এই অঞ্চল তৃণমূলের হাতছাড়া হয়, বিজেপির হাতে ক্ষমতা যায়, তখন তৃণমূল মারধর করে আমায় তৃণমূলে নিয়ে আসে। শ্যাম সর্দার, তাপস আড়ি আমায় মেরে তৃণমূলে আনে। সিরাজউদ্দীন শেখ এখানকার নেতা, সে শেখ শাহজাহানের ভাই। ২০১৯ সালে এই কথা আমি তৃণমূলের নেতাদের জানাইনি এখনও জানাইনি। আমায় যখন মেরে তৃণমূলে আনে তখন শৈখ শাহজাহানের ভাই শেখ সিরাজউদ্দীন শেখ অঞ্চল সভাপতি। আমি তৃণমূলে আসতে চাইনি, আমায় মারধর করে তৃণমূলে নিয়ে আসে। আমি নিজে থেকে কারও জমি নিইনি। যদি জমি নিয়ে থাকি তাহলে ফিরিয়ে দেবো। আমি এখন তৃণমূল করি। শেখ সিরাজউদ্দীনকে সরিয়ে আমায় অঞ্চল সভাপতি করা হয়েছে। দরজা খুলবেন না, সংবাদ মাধ্যম যাবেন না। আমায় পিটিয়ে মেরে ফেলবে। শেখ সিরাজউদ্দীনের সঙ্গে থেকে আমি পচা আলু হয়ে গিয়েছি। আমি অঞ্চল সভাপতির পদ পেয়ে খুশি হইনি। আমি জানি না আমায় এই পদ দিয়েছে। আমি মেয়ের বাড়িতে ছিলাম। আমি আজই পদত্যাগ করবো। আমি ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে বুঝতে পারছি দুর্নীতি হয়েছে।”
এদিকে অজিত মাইতি যার বাড়িতে ঢুকে পড়েছেন, তিনি স্নান করে বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে হিমেল হাওয়ায় কাঁপছেন। পরে পুলিশের বিরাট বাহিনী এসে বাড়ির মালিককে বাড়িতে ঢুকিয়ে দিলেও অজিত মাইতি তখনও সেই বাড়িতে।
এদিকে গ্রামের মহিলারা তখনও বিক্ষোভ দেখিয়ে বলেন, অজিত মাইতিকে আমাদের হাতে ছেড়ে দিতে হবে। পুলিশ গ্রামের মহিলাদের বারবার বোঝাতে চেষ্টা করে আপনারা আইন হাতে তুলে নেবেন না।
এদিকে এই এলাকার পাশেই পার্থ ভৌমিক বলেন, “অজিত মাইতিকে আমরা দলের পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছি। ও কোনও কালেই অঞ্চল সভাপতি ছিল না। যদি কেউ জমি নিয়ে থাকে তার ব্যবস্থা হবে। হলধর দা এবং শক্তি দা কে যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়েছে ওই অঞ্চল তৃণমূলের।” অজিত মাইতি কিন্তু শুরুতে এদিন বলেছেন সিরাজউদ্দীন সভাপতি আমি সম্পাদক ছিলাম।
তবে পার্থ ভৌমিক স্পষ্ট জানিয়ে দেন, “দল অজিত মাইতির পাশে নেই।”
এদিকে সাংবাদিকরা অজিত মাইতিকে বলেন, শনিবার আপনাকে বেড়মজুর অঞ্চলের তৃণমূল সভাপতি করা হয়েছিল, আজ পার্থ ভৌমিক বললেন আপনি কোনওদিন দলের কেউ ছিলেন না। তবে এই প্রশ্নে মুখে কুলুপ এঁটে থাকেন অজিত মাইতি।
এদিকে পুলিশ অজিত মাইতি যার বাড়িতে প্রাণ ভয়ে লুকিয়ে আছেন, সেই বাড়ির কর্তাকে নিমন্ত্রণ বাড়িতে যাওয়ার জন্য সতর্ক ভাবে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। পুলিশ জানায়, তারা জানে না কেন অজিত মাইতি এই বাড়িতে লুকিয়ে আছেন।
ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা শেখ শাহজাহান, শেখ সিরাজউদ্দীনের সহযোগী অজিত মাইতি এখন নিজেই গ্রামের ক্ষুব্ধ মহিলাদের রোষের মুখে ত্রস্ত।
এদিকে ঘটনাস্থলে বিরাট পুকিশ বাহিনী নিয়ে এসপি, ডিএসপি এসেছেন। পাশাপাশি প্রচুর সংখ্যায় গ্রামের মহিলারা বেড়মজুরে জড়ো হয়ে শেখ শাহজাহান, শেখ সিরাজউদ্দীন, অজিত মাইতির গ্রেফতারির দাবি জানাতে থাকেন। পরিস্থিতি পুলিশ নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি, গ্রামের মহিলাদের রোষের মুখে পড়ে প্রাণভয়ে অন্য এক ব্যক্তির বাড়িতে লুকিয়ে আছেন অজিত মাইতি।
আদালত অনুমতি দিলে ১০ দিনে গ্রেফতার হবে শেখ শাহজাহান, বললেন মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক
মহানগর ডেস্ক : সন্দেশখালির পাত্রপাড়া গ্রামের বিক্ষুব্ধ মহিলাদের সামনে বসে শনিবার শেখ শাহজানাহকে গ্রেফতার করতে না পারার পিছনে রাজ্য সরকারের আসল অক্ষমতার রহস্য উন্মোচন করলেন রাজ্যের সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিক। শেখ শাহজাহানকে রাজ্য গ্রেফতার করতে না পারার বিষয়ে ইডির কোর্টে বল ঠেলে দিলেন পার্থ ভৌমিক। বললেন, হাই কোর্টে শেখ শাহজাহানের বিরুদ্ধে মামলা করেছে ইডি। কলকাতা হাই কোর্ট রাজ্য পুলিশকে এই মামলায় অংশ নিয়ে শেখ শাহজাহানকে গ্রেফতারের অনুমতি দেয়নি। না হলে ১০ দিনে শেখ শাহজাহানকে রাজ্য পুলিশ ধরে ফেলত। তবে গ্রামের অত্যাচারিত এবং বিক্ষুব্ধ মহিলারা সেচমন্ত্রীর এই যুক্তিকে আমলও দিলেন না বিশ্বাসও করলেন না।
পার্থ ভৌমিক এবং সুজিত বসু এই দুই মন্ত্রী শনিবার সন্দেশখালি গ্রামের বিক্ষুব্ধ মহিলাদের সঙ্গে সমস্যা সমাধানে আলোচনায় বসেছিলেন। পার্থ ভৌমিক বলেন, “রাজ্য পুলিশের আন্ডারে উত্তম এবং শিবু গ্রেফতার হয়েছে। শেখ শাহজাহানের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে মামলা করেছে ইডি। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা হাই কোর্টে আবেদন করে বলবেন, কলকাতা হাই কোর্ট রাজ্যকে অনুমতি দিলে রাজ্য পুলিশ শেখ শাহজাহানকে ১০ দিনে মধ্যে ধরে দেবে। হাই কোর্ট তো রাজ্য, কলকাতা পুলিশকে শেখ শাহজাহানকে ধরার অনুমতি দেয়নি।” পার্থ ভৌমিকের এদিনের বক্তব্যে একটা বিষয় স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যে হাই কোর্ট রাজ্য পুলিশকে অনুমতি দিচ্ছে না বলেই শেখ শাহজাহানকে গ্রেফতার করা যাচ্ছে না। তাহলে কী রাজ্য পুলিশ জানে কোথায় আছে শেখ শাহজাহান? না হলে কী ভাবে রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক বলছেন আদালত অনুমতি দিলে ১০ দিনে শেখ শাহজাহানকে গ্রেফতার করবে রাজ্য পুলিশ।
প্রসঙ্গত, কলকাতা হাই কোর্ট ইতিমধ্যেই জানিয়েছে, যার বিরুদ্ধে এতো অভিযোগ তাকে এতোদিন কেন ধরা হচ্ছে না? সন্দেশখালির বিদ্রোহী মহিলারা প্রতিদিন তাঁদের আন্দোলনের উত্তাপ বাড়িয়ে চলেছেন। পুলিশ এবং রাজ্যের দুই মন্ত্রীর সামনে গ্রামের মহিলারা জানিয়ে দিলেন, “শেখ শাহজাহানকে ধরতে হবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সহযোগিতা আমরা চাই না। মমতা যখন ৫০০/১০০০ টাকা না দিতেন তখন আমাদের ঘরের ছেলেরা কাজ করেনি? আমরা বেঁচে ছিলাম না?” এই প্রসঙ্গে বিজেপি নেতা শঙ্কুদেব পন্ডা বলেন, “পার্থ ভৌমিক বলছেন, হাই কোর্ট বলেছে রাজ্য পুলিশ শেখ শাহজাহানকে গ্রেফতার করতে পারবে না। এসব ডাহা মিথ্যা কথা। কোর্টের এই অর্ডারটা পার্থ ভৌমিক দেখাতে পারবেন তো?”
এদিকে মানুষের বিরুদ্ধে অত্যাচার হলে এভাবেই বোধহয় জনরোষের বহিঃপ্রকাশ হয়। এই ক্ষোভ পুলিশ দিয়ে কতটা মোকাবিলা করা যাবে সেটা যেমন একটা বড় প্রশ্ন তেমন অন্য আর একটা প্রশ্ন মন্ত্রীরাও কি পারবেন দীর্ঘদিন ধরে শেখ শাহজাহানের, সিরাজের, শিবুর, উত্তমের অত্যাচারের ক্ষতে প্রলেপ দিতে? রাজ্যের যে দুই মন্ত্রী শনিবার সন্দেশখালিতে গিয়েছিলেন তার মধ্যে একজন হলেন পার্থ ভৌমিক অন্যজন সুজিত বসু। ক্ষুব্ধ মহিলাদের বক্তব্যকে “শিখিয়ে দেওয়া কথা” বলে উড়িয়ে দিয়েছেন পার্থ ভৌমিক। পার্থ ভৌমিকের তুলনায় কিছুটা অভিজ্ঞ এবং জনভিত্তি থাকা অন্য আর এক মন্ত্রী সুজিত বসু বলেছেন, “আমরা দিদির (পড়ুন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) হয়ে এসেছিলাম। যা শুনলাম, সবটা দিদিকে জানাবো।”
মহাগনর ডেস্ক : সন্দেশখালিতে এক যাত্রায় পৃথক ফল! রাজ্যের দুই মন্ত্রী সুজিত বসু এবং পার্থ ভৌমিককে গ্রামে ঘুরে মানুষের সঙ্গে দেখা করতে দিচ্ছে রাজ্যের পুলিশ কিন্তু সেই সন্দেশখালিতে শনিবার আটকে দেওয়া হল ডিওয়াইআই নেত্রী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়কে। তাঁকে ধামাখালি ঘাটের কাছে পুলিশ আটকে দেয়। রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক সন্দেশখালিতে দাঁড়িয়ে বলছেন, “মীনাক্ষী ম্যাডাম টোটোতে ঘুরছেন, পুলিশ বাধা দেয়নি।”
মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমি থানায় যেতে চাই এক পুলিশ কর্মী আমায় যেতে দিচ্ছেন না। আমরা বলেছি আমরা ১৪৪ ধারা মানবো, একা যাবো সন্দেশখালি থানায়। পুলিশ আমদের থানাতেও যেতে দিচ্ছে না। আমাদের কাছে অভিযোগ আছে প্রশাসনের বিরুদ্ধে। গ্রামের মানুষের জমি,অর্থ,ইজ্জত লুঠ হচ্ছে। আমরা তাই গ্রামের মানুষের সঙ্গে কথা বলে সন্দেশখালি থানায় অভিযোগ জমা দিতে চাই। এখানকার দায়িত্বে থাকা পুলিশ আধিকারিক আমাদের যেতে দিচ্ছেন না। আমরা খোঁজ নেবো এই পুলিশ আধিকারিক মতিউর রহমান আমাদের আটকাচ্ছেন, এই পুলিশ কর্তার বিরুদ্ধে থানায়, তিনি যে থানয় থাকেন সেখানে অভিযোগ, বিক্ষোভ করব।” এদিকে সন্দেচখালিতে দাঁড়িয়ে শনিবার পার্থ ভৌমিক বলেন, “মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় টোটোতে করে ঘুরছেন। তাঁকে পুলিশ আটকাচ্ছে না। আমি কোনও রাজনৈতিক দলের হয়ে আসিনি, সেচমন্ত্রী হয়ে এসেছি।”
কেন শেখ শাহজাহানকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না? সাংবাদিকদের এই প্রশ্নের উত্তরে পার্থ ভৌমিক আমতা আমতা করে বলেন, “আমাদের কাছে শেখ শাহজাহানের নামে স্পেসিফিক অভিযোগ আসেনি।” অন্যদিকে সন্দেশখালির এক বাসিন্দা স্পষ্ট অভিযোগ করে বলেন, “সামনে লোকসভা ভোট তাই পরিস্থিতি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য পার্থ ভৌমিক এসেছেন। আমি তৃণমূল করি, করবো। আমার পার্থ ভৌমিক আগে শেখ শাহজাহানকে গ্রেফতার করে তারপর সন্দেশখালিতে আসুন। এভাবে সন্দেশখালিতে এসে লাভ নেই।”
রাজ্যের শাসকদল গ্রামবাসীদের শান্ত করতে তাদের অভিযোগ মতো শেখ শাহজাহান বাহিনীর দ্বারা কেড়ে নেওয়া জমি ফেরতের জন্য তৎপর হয়ে ওঠে তাহলে এটা ধরে নেওয়াই যায় শেখ শাহজাহানের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের মান্যতা রাজ্য সরকার এবং তৃণমূল দল দিচ্ছে। তাহলে কেন পার্থ ভৌমিক বলছেন, “শেখ শাহজাহানের নামে স্পেসিভিক অভিযোগ আসলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে, মিডিয়ায় অভিযোগ শুনে নয়।” অন্যদিকে কেন এতো দেরিতে সন্দেশখালির সমস্যা সমাধান করতে এসেছেন? এই প্রশ্নের জবাবে পার্থ ভৌমিক বলছেন, “খবর আগে পাইনি, এখন পেয়েছি, তাই ব্যবস্থা নিতে সরকার তৎপর হয়েছে।”
তাহলে জমি ফেরতের বিষয়ে পার্থ গ্রামবাসীর অভিযোগের মান্যতা দিলেও শেখ শাহজাহানের ফাঁসি চাই, চেখ সিরাজের ফাঁসি চাই বলে আন্দোলনের ঢেউয়ে বাংলা কাঁপলেও সেই দাবি কী প্রবেশ করছে না প্রশাসনের কানে? তবে ১৪৪ ধারা মেনে ধামাখালি ঘাটের কাছে তিনজন করে দলে ভাগ হয়ে মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় অবস্থানে বসে আছেন।
জমি, ভেড়ি ফেরতের প্রতিশ্রুতি নিয়ে সন্দেশখালির মানুষের দরজায় মন্ত্রী সুজিত,পার্থ
মহানগর ডেস্ক : সন্দেশখালির জনতার দাবির কাছে কী নত হচ্ছে রাজ্যের তৃণমূল সরকার? তাই কি মানুষের দাবির কাছে নত হয়ে রাজ্যের দুই মন্ত্রী সুজিত বসু এবং পার্থ ভৌমিক শনিবার সন্দেশখালি পৌঁছে টোটোয় চেপে পাত্রপাড়ায় মানুষের বাড়ি বাড়ি পৌঁছচ্ছেন? প্রশ্ন উঠছে কেন এর পরেও রাজ্য সরকার শেখ শাহজাহানকে ধরছে না?
শনিবার রাজ্যের সেচ এবং দমকল মন্ত্রীর আশ্বাস, ফিরিয়ে দেওয়া হবে জমি। বেআইনি ভেরি ভেঙে চাষযোগ্য করে দেওয়া হবে। রীতিমতো দমকল দফতরের আধিকারিক এবং সেচ দফতরের মুখ্য বাস্তুকার সহ প্রশাসনের বড় কর্তাদের নিয়ে রাজ্যের দুই মন্ত্রী সুজিত বসু ও পার্থ ভৌমিক। গ্রামের মানুষরা এই দুই মন্ত্রীকে কাছে পেয়ে শেখ শাহজাহান ও তার বাহিনীর অত্যাচারের কাহিনী উগরে দিচ্ছেন।
এদিকে সন্দেশখালির তৃণমূল বিধায়ক সুকুমার মাহাতো শনিবার গ্রামবাসীর অভিযোগের মুখে স্বীকার করেছেন শেখ শাহজাহানের ভাই শেখ সিরাজ জোর করে যে সব জমি কেড়ে নিয়েছিল সেই জমি ফিরিয়ে দেওয়া হবে। শেখ সিরাজকে দল থেকে বহিস্কার করার কথাও ঘোষণা করেন সুকাুমার মাহাতো। সন্দেশখালির বিধায়ক জানান তিনি অন্যকাজে ব্যস্ত ছিলেন, তাই শেখ সিরাজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ জানতে পারেননি, যখন জেনেছেন তৎক্ষনাৎ দল থেকে শেখ সিরাজ দল বহিস্কার কর হয়েছে। তবে সন্দেশখালির মানুষের প্রশ্ন একটাই, সবই করছে তৃণমূল এবং তৃণমূল পরিচালিত রাজ্য সরকার তবে শেখ শাহজাহানকে গ্রেফতার করছে না!
শেখ শাহজাহান ছাড়া মঙ্গলবার প্রথম সন্দেশখালির কালীনগরে তৃণমূলের মিটিং হল। এদিন কালীনগরে যান রাজ্যের সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিক, তৃণমূল নেতা নারায়ণ গোস্বামী, হাজি নুরুল সহ কয়েকজন তৃণমূল নেতা। কালীনগরে পার্থ ভৌমিক বলেন, ‘‘মা, বোনেরাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতীক। এটা উত্তরপ্রদেশ নয়। যেখানে ধর্ষণ করে নির্যাতিতাকে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাংলা, এখানে মায়েদের সম্মান নষ্ট হয় না।’’ এর পর পার্থ ভৌমিক ঘেষণা, “আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি সন্দেশখালিতে তৃণমূলের জনসভা হবে।”
সন্দেশখালিতে মঙ্গলবার ঢুকতে দেওয়া হয়নি যুব কংগ্রেসের প্রতিনিধি এবং বিজেপি প্রতিনিধিদের। রাস্তায় আটকে দেওয়া হয় কংগ্রেস নেতা অমিতাভ চক্রবর্তী এবং বসিরহাট এসপি অফিসের অদূরে বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ও বিজেপি কর্মীদের। সোমবার সন্দেশখালি থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে আটকে দেওয়া হয় রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সহ বিজেপির ৬৭ জন বিধায়ককে। তার আগে সিপিএম নেত্রী কনীনিকা ঘোষ এবং মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় সহ সিপিএম প্রতিনিধি দলকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি সদেশখালিতে। তবে মঙ্গলবার শুধুমাত্র রাজ্যের শাসক দলের প্রতিনিধি বলেই কী পার্থ ভৌমিক, নারায়ণ গোস্বামীদের সন্দেশখালি কালীনগরে যেতে দিল পুলিশ? এই প্রশ্ন এখন রাজ্য রাজনীতিতে উঠছে। বিরোধীরা সন্দেশখালিতে অশান্তি করবে আর শাসকদল অশান্তি করবে না? এটা কি সত্যি? এ পর্যন্ত সন্দেশখালির মহিলারা কিন্তু যাবতীয় অভিযোগ করেছেন রাজ্যের শাসক দলের নেতা শেখ শাহজাহান, উত্তম সর্দার এবং শিবপ্রসাদ হাজরার বিরুদ্ধে। এই তিন তৃণমূলের যোগ্য নেতার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ শুনে কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি পর্যন্ত চমকে উঠেছেন। তবে সন্দেশখালির এহেন তৃণমূল নেতাদের নিয়ে মুখ খোলেননি তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর সেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভার সদস্য পার্থ ভৌমিক সন্দেশখালিতে দাঁড়িয়ে শেখ শাহজাহান, শিবপ্রসাদ হাজরা, উত্তম সর্দারের বিরুদ্ধে একটা শব্দ উচ্চারণ না করে বললেন, “এখানে মা,বোনেদের সম্মান নষ্ট হয় না”, রাজ্যের মানুষ পার্থ ভৌমিকের কাছে প্রশ্ন করছেন, ” তা হলে শেখ শাহজাহান, উত্তম সর্দার, শিবপ্রসাদ হাজরা তাহলে রাতে সন্দেশখালির মহিলাদের বেছে বেছে কি সম্মান জানাবার জন্য ডাকত?”
এই প্রসঙ্গে বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেছেন, “এই রাজত্বে সম্ভব নয়, তা না হলে শেখ শাহজাহানদের এনকাউন্টারে মেরে ফেলা উচিত।”
এদিকে বসিরহাটে এসপি-র অফিসে বিক্ষোভ দেখাতে গিয়ে সুকান্ত মজুমদারদের পুলিশের বাঁধার মুখে পড়তে হয়। পুলিশ ব্যাপক মারধর করে বিজেপি নেতাকর্মীদের। সুকান্ত মজুমদার এসপি অফিসের বাইরে অবস্থান করছেন ধৃত বিজেপি কর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে। দলের কর্মীদের পুলিশ না ছাড়লে সারারাত অবস্থান করার কথা জানান সুকান্ত মজুমদার। অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করে জেনারেটর চালিয়ে মঞ্চে আলোর ব্যবস্থা করছে বিজেপি।
মহানগ ডেস্ক: ১৪৪ ধারা জারি করে সন্দেশখালিতে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না বিরোধীদের। মঙ্গলবার তৃণমূল বিধায়ক নারায়ণ গোস্বামী এবং পার্থ ভৌমিক সন্দেশখালি যাবেন। এখন দেখার মঙ্গলবার সন্দেশখালিতে ১৪৪ ধারা লঙ্ঘন করে তৃণমূলের দুই বিধায়ক প্রতিনিধি যান কি না, না কি মঙ্গলবার সন্দেশখালিতে নারায়ণ গোস্বামী এবং পার্থ ভৌমিক প্রবেশের আগেই সন্দেশখালি থেকে ১৪৪ ধারা তুলে নেওয়া হয়।
এদিকে এই প্রসঙ্গে শুভেন্দু অধিকারীকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, “আমার কাছে খবর আছে সন্দেশখালির যেখানে ১৪৪ ধারা জারি নেই তৃণমূলের দুই বিধায়ক সেখানে যাবেন। আমরা নজর রাখছি।” এদিকে শুভেন্দু অধিকারীদের বাসন্তী হাইওয়েতে পুলিশ আটকে দেওয়া প্রসঙ্গে তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ সোমবার বলেছেন, “শুভেন্দু ওখানে অশান্তি করতে চাইছে। ঢুকতে দেবে কেন? আটকে ভালো করেছে।”
সোমবার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃ্ত্বে বিজেপি বিধায়করা সন্দেশখালির উদ্দেশ্যে রওনা দেন। কিন্তু যাওয়ার আগেই তাঁদের বাসন্তী হাইওয়ে আটকে দেওয়া হয়। কলকাতা পুলিশের বিরুদ্ধে যেতে না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। অন্যদিকে আজ রাজ্যপাল জেতেই গ্রামের মহিলারা রাজ্যপালকে উদ্দেশ্যে বলেন, ” আমরা বাঁচতে পারব না। ওদের গ্রেফতার করা হোক।’
মহানগর ডেস্ক: সন্দেশখালির গণরোষ নিয়ন্ত্রণে বুধবারের পর শনিবার প্রথম পদক্ষেপ নিল রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল। এলাকায় সন্ত্রাস সৃষ্টি, ভীতি প্রদর্শন, স্থানীয়দের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার সহ একাধিক অভিযোগে শেখ শাহজাহান অনুগামী, উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের তৃণমূল সদস্য উত্তম সর্দারকে ৬ বছরের জন্য সাসপেন্ড করলো তৃণমূল। শনিবার ধর্মতলায় তৃণমূলের ধরনামঞ্চ থেকে এই ঘোষণা করলেন রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক। তিনি জানালেন, এ ধরনের অভিযোগ দল বরদাস্ত করে না। তাই দলের শীর্ষ নেতৃত্ব এবং সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায় উত্তম সর্দারকে সাসপেন্ড করা হল।
পার্থ ভৌমিক বলেন, “আমাদের দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের নির্দেশে এবং দলীয় অভ্যন্তরীণ কমিটিট রিপোর্টের ভিত্তিতে উত্তম সর্দারকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।” এই কমিটিতে নারায়ণ গোস্বামী, ব্রাত্য বসু, সুজিত বসু, পার্থ ভৌমিকের মতো নেতারা ছিলেন। শনিবার বেলা ১২টা নাগাদ এই রিপোর্ট জমা পড়ে। তারপরই উত্তমকে ৬ বছরের জন্য ছেটে দেওয়া হয়। পার্থ ভৌমিক বলেন, “আমরা তৃণমূলকে ভালোবাসি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ভালোবাসি। উত্তম সর্দার এলাকার মানুষের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করছে। তাই আমরা উত্তর ২৪ পরগণার জেলা পরিষদ সদস্য উত্তম হাজরাকে ৬ বছরের জন্য দলের উচ্চতর নেতৃত্বের নির্দেশে সাসপেন্ড করা হল। এই দলটা সিপিএম নয়।” এদিকে উত্তম সর্দারকে সাসপেন্ড করার পর বিজেপি মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, “পার্থ ভৌমিক উত্তম হাজরাকে সাসপেন্ড করে কি প্রমাণ করতে চাইছেন? উত্তম মহিলাদের ইজ্জত, গরিবের জমি, শ্রমের টাকা লুঠ করেছে। তারপরও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করছে না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুযমন্ত্রী,পুলিশমন্ত্রী, তাঁর পদত্যাগ করা উচিত।”
সিপিএম কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী এই প্রসঙ্গে বলেন, “উত্তম সর্দারকে সাসপেন্ড করা আসলে বাহানা। শাহজাহানকে ধরছে না কেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুলিশ।” এদিকে শেখ শাহজাহানকে কেন গ্রেফতার করা হয়নি সেই প্রশ্নের উত্তরে রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক বলেন, “আমরা দলীয় তদন্তের ভিত্তিতে উত্তম সর্দারকে সাসপেন্ড করেছি। শেখ শাহজাহানের কথা আসছে কেন? তার নাম কি এখানে এসেছে?” এদিকে গত বুধবার থেকে সন্দেশখালির সাধারণ মানুষ শেখ শাহজাহান ও তার দুই অনুগামী উত্তম সর্দার ও শিবপ্রসাদ হাজরার বিরুদ্ধে মহিলাদের সঙ্গে অশালীন ব্যবহার, গ্রামের মানুষের জমি লুঠ, কাজ করিয়ে মজুরি না দেওয়া, কাজের মজুরি চাইলে কোদালের বাট দিয়ে মারার অভিযোগ করছেন। এই ঘটনা থানায় বলতে গেলে পুলিশ আবার শেখ শাহজাহানের কাছেই তাদের পাঠিয়ে দিত বলেও পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে গ্রামবাসীরা। তবে এই গণরোষ প্রশমিত করতে, জনরোষের ক্ষতে প্রলেপ দিতে অবশেষে বাধ্য হয়ে শাসকদল উত্তম সর্দারকে ৬ বছরের জন্য দল থেকে সাসপেন্ড করলেও শেখ শাহজাহান ও শিবু হাজরার বিষয়ে এখনও তৃণমূল নেতৃত্ব সাফাই দিয়ে চলেছে।