মহানগর ডেস্ক : গোর্খা টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বা জিটিএ-র শিক্ষক নিয়োগ মামলায় এবার এফআইআর করল রাজ্য পুলিশ তথা রাজ্য সরকার। রাজ্যের করা এই এফআইআরে নাম রয়েছে রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী ও তৃণমূলের বহিস্কৃত মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের। নিয়োগ মামলায় এই প্রথম রাজ্য সরকারের তরফে অভিযোগের ভিত্তিতে এফআইআর দায়ের করা হল। বুধবার রাজ্য স্কুল শিক্ষা দফতরের তরফে বিধাননগর উত্তর থানায় জিটিএ-র স্কুলে নিয়োগ “দুর্নীতি” সংক্রান্ত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তার ভিত্তিতে এই এফআইআর দায়ের করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে খবর, পার্থ ছাড়াও এফআইআরে তৃণমূলের ছাত্র পরিষদের নেতা ও রাজ্য সভাপতি তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য, জিটিএ নেতা বিনয় তামাং-সহ সাত থেকে আট জনের নাম রয়েছে। জিটিএ-র শিক্ষক নিয়োগ মামলায় মঙ্গলবারই সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট। বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু জানান, এই নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে তাঁর কাছে এক সরকারি আধিকারিক চিঠি দিয়েছেন। তার ভিত্তিতেই প্রাথমিক অনুসন্ধান করে সিবিআই আগামী ২৫ এপ্রিল রিপোর্ট জমা দেবে। জিটিএ-কেও সে দিন একটি রিপোর্ট দিতে হবে।
এক সরকারি আধিকারিক সরাসরি হাই কোর্টের বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসুকে চিঠি পাঠিয়ে জিটিএ-র আওতাধীন এলাকায় বিভিন্ন স্কুলে বেআইনি ভাবে নিয়োগের কথা জানিয়েছিলেন। তার ভিত্তিতেই এই মামলা হয়েছে। জানা গিয়েছে, শিক্ষা দফতরের এক পদস্থ কর্তা বিধাননগর পুলিশের কাছেও এ বিষয়ে অভিযোগ জানিয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশ কোনও পদক্ষেপ করেনি বলে অভিযোগ। যা নিয়ে মঙ্গলবার আদালত পুলিশকে ভর্ৎসনা করেছে। বিচারপতি মন্তব্য করেছিলেন, “আমার মনে হয়, পুলিশ কাউকে আড়াল করার চেষ্টা করছে।” পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সংশ্লিষ্ট পুলিশ আধিকারিকদের বিরুদ্ধে কেন পদক্ষেপ করা হবে না, তা-ও জানতে চান বিচারপতি।
মঙ্গলবার আদালতে উপস্থিত ছিলেন বিধাননগর উত্তর থানার আইসি। তাঁকে উদ্দেশ্য করে বিচারপতি বলেন, “আপনার কাজ খুব একটা কঠিন ছিল না। কমিশনার অফ স্কুল এডুকেশন আপনাকে এফআইআর করতে বলেছিলেন। আপনি যদি কাউকে আড়াল করতে চান, সেটা আপনার বিষয়। অভিযোগপত্র দেখেছেন? এখানে বিনয় তামাংয়ের নাম আছে। দেখেছেন? আপনি এফআইআর করলেন না কেন? আপনার বিরুদ্ধে বিভাগীয় পদক্ষেপ কেন করা হবে না?” আদালতে এই ধাক্কা খাওয়ার পর বুধবার অভিযোগের ভিত্তিতে এফআইআর করে পুলিশ।
জিটিএ-র অধীন বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ প্রকাশ্যে এসেছিল ২০২২ সালেই। অভিযোগ, জিটিএর প্রশাসনিক বোর্ডে থাকাকালীন অনৈতিক ভাবে প্রায় ৫০০ জনকে শিক্ষক নিয়োগ করেছেন তৎকালীন জিটিএর মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক অনীত থাপা ও বিনয় তামাং। বহু দলীয় কর্মী-সমর্থক ও পরিবারের সদস্যকে টাকা নিয়ে নিয়োগ করা হয়েছে বলেও অভিযোগ। সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল “গোর্খা আনএমপ্লয়েড প্রাইমারি ট্রেনড টিচার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন”।
মঙ্গলবার এই সংক্রান্ত মামলায় হাই কোর্টের পর্যবেক্ষণ, সরকারি আধিকারিকের লেখা চিঠিতে যে তথ্য রয়েছে, তার অধিকাংশই নষ্ট হয়ে গিয়ে থাকতে পারে। তাই সিবিআইকে তৎপরতার সঙ্গে তার অনুসন্ধান করতে হবে। পাশাপাশি জিটিএ-কে আদালতের নির্দেশ, আগামী শুনানিতে তারা যে রিপোর্ট দেবে, তাতে জানাতে হবে যত জনের বিরুদ্ধে বেআইনি ভাবে চাকরি পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে, তাঁরা কী ভাবে, কী প্রক্রিয়ায়, কার সুপারিশে চাকরি পেয়েছেন। তাঁদের যোগ্যতা কী আছে, তা-ও হলফনামার আকারে ওই রিপোর্টে জানাতে হবে জিটিএ-কে।
কেন রাজ্য এখন পার্থ চট্টোপাধ্যায়, তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে রাজ্য পুলিশ এফআইআর করল? সিবিআই-র হাতে আদালতের নির্দেশে পাহাড়ে নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে তৃণমূল চূড়ান্ত বেকায়দায় পড়বে বলে মনে করছে রাজ্যের শাসক বিরোধীরা। বিরোধীরা বলছেন, এই কারণেই ভোটের মুখে স্বচ্ছতা দেখাতে শিক্ষা দফতরের ডেপুটি সেক্রেটারির অভিযোগের ভিত্তিতে বিধাননগর উত্তর থানা এফআইআর দায়ের করল, এফআইআর-এ পার্থ চট্টোপাধ্যায়, তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য, বিনয় তামাং, প্রান্তিক চক্রবর্তী সহ ৮ জনের নাম রয়েছে। বিরোধীরা বলছেন, “রাজ্য সরকার যেমন সারদদকাণ্ডকে আড়াল করতে নিজেরাই তদন্তে নেমেছিল ঠিক তেমনই পাহাড়ে ১৫০০ শিক্ষক নিয়োগে গড়মিল নিয়ে আদালত সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিতেই রাজ্য পুলিশ এই এফআইআর করল।”