Sandeshkhali incident
মহানগর ডেস্ক : সন্দেশখালির বাঘ শেখ শাহজাহানকে নিয়ে নিজাম প্যালেস থেকে রবিবার বসিরহাটের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে সিবিআইয়ের গাড়ি। সঙ্গে নিরাপত্তার জন্য রয়েছে এক কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী। রবিবার তাঁকে বসিরহাট মহকুমা আদালতে হাজির করানো হবে। জানা যাচ্ছে শেখ শাহজাহানকে আরও কিছু দিন নিজেদের হেফাজতে চাইবে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।
রাজ্য পুলিশ গত ২৯ ফেব্রুয়ারি শেখ শাহজাহানকে গ্রেফতার করে। বসিরহাট আদালত তাঁকে ১০ দিনের হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছিল। সিআইডি-র হেফাজতে ছিলেন তিনি। পরে কলকাতা হাই কোর্ট শাহজাহানকে সিবিআইয়ের হাতে তুলে দিতে বলে। সন্দেশখালিকাণ্ডের তদন্তের ভার সিবিআইয়ের হাতে আলে যায়। হিসাব মতো, তিন দিন শাহজাহানকে হেফাজতে পেয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।
সন্দেশখালির বেতাজ বাদশা শেখ শাহজাহানকে হেফাজতে পাওয়ার পরেই সন্দেশখালিকাণ্ডের তদন্তে তৎপর হয়েছে সিবিআই। পর পর দু’দিন তারা সন্দেশখালিতে গিয়েছে। তার মধ্যে দ্বিতীয় দিন শাহজাহানের বাড়ি, বাজার, অফিসে তল্লাশি চালুয়েছে সিবিআই। ইডির উপর হামলার ঘটনার পুনর্নিমানও হয়েছে শাহজাহানের বাড়ির সামনে। বিশাল কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে সিবিআই সন্দেশখালির সরবেড়িয়া এলাকা কার্যত চষে ফেলেছে এই কদিন। এমনকি, ডুগরিপাড়া গ্রামে দু’জন শাহজাহান-ঘনিষ্ঠের বাড়িতেও তল্লাশি চালিয়েঋে সিবিআই।
এরই পাশাপাশি নিজাম প্যালেসে শেখ শাহজাহানকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সিবিআই। ইডি আধিকারিকদেরও নিজাম প্যালেসে আসাযাওয়া করতে দেখা গিয়েছে। গোটা ঘটনার তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করার কাজ চলছে। সন্দেশখালিতে সিবিআইয়ের সঙ্গেও ইডি আধিকারিকেরা ছিলেন। ছিল ফরেন্সিক দল এবং কেন্দ্রীয় বাহিনী।
রবিবার কলকাতায় তৃণমূলের ডাকে ব্রিগেড সমাবেশ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সেই ‘জনগর্জন সভা’য় আসার জন্য সকাল থেকেই জেলার জনস্রোত কলকাতামুখী। সিবিআইয়ের কনভয় যখন শাহজাহানকে নিয়ে বসিরহাটের পথে, সেই সময়েও উল্টো দিক থেকে তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের গাড়ি কলকাতার দিকে যেতে দেখা গিয়েছে। এমনকি, সেই গাড়ির কারণে মাঝেমধ্যে থমকেও যেতে হয়েছে শেখ শাহজাহানকে নিয়ে বসিরহাট আদালতমুখী সিবিআইর কনভয়।
সন্দেশখালিকাণ্ডে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ কলকাতা হাই কোর্টের, আজ বিকেলেই শাহজাহানকে হস্তান্তরের নির্দেশ
মহানগর ডেস্ক : সন্দেশখালি মামলার সিট খারিজ। এই তদন্তের ভার সিবিআইয়ের হাতে তুলে দিল কলকাতা হাই কোর্ট। মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের ডিভিশন বেঞ্চের এই নির্দেশ দিয়েছে। মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৪টের মধ্যেই সন্দেশখালিকাণ্ডে ধৃত শেখ শাহজাহান শেখকে কেন্দ্রীয় সংস্থা সিবিআই-র হাতে তুলে দেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট।
সন্দেশখালিকাণ্ডে কলকাতা হাই কোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে কেন্দ্রীয় সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি ডিভিশন বেঞ্চে যে আবেদন জানিয়েছিল তার পরিপ্রেক্ষিতেই মঙ্গলাবার এই নির্দেশ দিল কলকাতা হাই কোর্ট। গত ৫ জানুয়ারি ইডির আধিকারিকদের উপর হামলার ঘটনায় বিশেষ তদন্তকারী দল বা সিট গঠনের জন্য একক বেঞ্চ যে নির্দেশ দিয়েছিল তা খারিজ করেছে প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানমের ডিভিশন বেঞ্চ।
এই নির্দেশের পাশাপাশি, ন্যাজাট এবং বনগাঁ থানার মোট তিনটি অভিযোগের তদন্তের ভারও সিবিআই-কে হস্তান্তরের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে রাজ্য পুলিশকে। এর মধ্যে গত ৫ জানুয়ারি ইডির বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ দায়ের হয়েছিল ন্যাজাট থানায়। ইডি জানিয়েছিল, ইডি যেদিন শেখ শাহজাহানের বাড়িতে অভিযানে যায় সেদিন শেখ শাহজাহান বাড়িতে ছিল, ১৮টি ফোন করে সে অনুগামীদের ডেকে ইডির উপর হামলার নির্দেশ দেয়।
বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত সন্দেশখালিকাণ্ডে রাজ্য পুলিশের এসপি এবং সিবিআইয়ের এসপি পদমর্যাদার অফিসারকে নিয়ে সিট গঠনের জন্য জানুয়ারিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। সিটের সদস্য হিসাবে রাজ্যের আইপিএস অফিসার জসপ্রীত সিংহের নাম আদালতে জমা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু সিট গঠন করে যৌথ তদন্তের সেই নির্দেশে আপত্তি জানিয়েছিল ইডি। তারা আবেদন জানায় ডিভিশন বেঞ্চে। ডিভিশন বেঞ্চ ইডির দাবিতে মান্যতা দিয়ে সিট খারিজ করে দিল।
মহানগর ডেস্ক : সন্দেশখালির “বাঘ” শেখ শাহজাহানের অনুচর সন্দেশখালিকাণ্ডে অন্যতম অভিযুক্ত আমির গাজিকেও গ্রেফতার করল পুলিশ। বসিরহাট থানার পুলিশ ভিনরাজ্য থেকে আমির গাজিকে গ্রেফতার করেছে। শাহাজাহানের পাশাপাশি তাঁকেও বৃহস্পতিবার আদালতে হাজির করানো হয়েছিল। আমিরেট পাঁচ দিনের পুলিশি হেফাজত হয়েছে।
আমির গাজি সন্দেশখালির বাসিন্দা। সন্দেশখালিকাণ্ডে ধৃত আর শেখ শাহজাহানের আর এক সাগরেদ উত্তম সর্দারের ঘনিষ্ঠ হিসাবেও পরিচিত আমির। তাঁর বিরুদ্ধে অত্যাচার, জমি জবরদখল, মারধর, হুমকি দেওয়া এবং ধর্ষণের চেষ্টার মতো অভিযোগ রয়েছে। পুলিশ সূত্রের খবর, বুধবার রাতেই ওড়িশার রৌরকেল্লা থেকে আমিরকে বসিরহাট থানার পুলিশ গ্রেফতার করেছে। শাহাজাহানের মতোই আমির গাজিকেও অনেক দিন ধরেই খুঁজছিল পুলিশ। বুধবার রাতে তাঁর মোবাইল ফোনের লোকেশন দেখে পুলিশ জানতে পারে, আমির ভিনরাজ্যে রয়েছে। রাতেই বসিরহাট থানা থেকে এক দল পুলিশ রৌরকেল্লা পৌঁছয়। সেখান থেকে আমিরকে গ্রেফতার করা হয়। প্রসঙ্গত, শেখ শাহজাহান গ্রেফতার হওয়ার রাতেই পুলিশ তৎপর হয়ে আমির গাজিকে গ্রেফতার করে।
৫৫ দিন অধরা থাকার পর বুধবার, ৫৬ দিনের মাথায় মিনাখাঁ থেকে শেখ শাহজাহানকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বৃহস্পতিবার তাঁকে বসিরহাট আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক ১০ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন। তাঁর বিরুদ্ধে ১৪৭, ১৪৮, ১৪৯-সহ একাধিক ধারায় মামলা করা হয়েছে বলে জানান এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) সুপ্রতীম সরকার। শাহজাহানের মামলার তদন্তভার গিয়েছে সিআইডির হাতে। রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ এই সংক্রান্ত তদন্ত করবে। আপাতত তাঁকে ভবানী ভবনে নিয়ে আসা হয়েছে সন্দেশখালির বেতাজ বাদশাকে। আগামী ১০ দিন সেখানেই সিআইডির গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হবেন তিনি। গ্রেফতারির পরেই তৃণমূল সাংবাদিক সম্মেলন করে জানিয়ে দিয়েছে, শাহজাহানকে দল থেকে সাসপেন্ড করা হচ্ছে। আগামী ছয় বছরের জন্য দল থেকে সাসপেন্ড শাহজাহান। তবে যে ভাবে সিপিএমের সন্দেশখালির প্রাক্তন বিধায়ক নিরাপদ সর্দারকে পুলিশ জাপটে ধরে থানায় ও আদালতে নিয়ে যেতে দেখা গিয়েছিল সেই অবস্থা শেখ শাহজাহানের গ্রেফতারি, তাকে আদালতে পেশ করা কোনও সময়ই দেখা গেল না। শেখ শাহজাহানের শরীরি ভাষা দেখে মনে হচ্ছিল সত্যিই সে সন্দেশখালির “বাঘ”, আর পুলিশ? শরীরি ভাষায় রীতিমতো বুঝিয়ে দিচ্ছিল তারা কত অসহায়।
আদালতের বাধা ছিল, পুলিশ কাজ করতে পারেনি।@abhishekaitc র সৌজন্যে আদালত বাধা সরিয়েছে।
পুলিশ যা করার করেছে।
— Kunal Ghosh (@KunalGhoshAgain) February 29, 2024
সন্দেশখালির ঝুপখালি এবং বয়ারমারিতে ফের গ্রামবাসীদের ক্ষোভ, দাবি শাহজাহানকে গ্রেফতারের
মহানগর ডেস্ক : বুধবার ফের সন্দেশখালিতে জনরোষ! সন্দেশখালির ঝুপখালি এবং বয়ারমারিতে গ্রামবাসীদের বিক্ষোভ, দাবি শাহজাহানকে গ্রেফতার করতে হবে,ঝুপখালিতে নতুন অভিযোগ তৃণমূল নেতা হাজি সিদ্দিক আলি মোল্লার নামে। এদিন সন্দেশখালির বয়ারমারিতে তৃণমূলের আরবএক নেতা শান্তনু জানার বিরুদ্ধে গ্রদমবাসী অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে। শান্তনু জানার বিরুদ্ধে অভিযোগ সে খেলার মাঠ ভরাট করে শেখ শাহজাহানের নির্দেশে দোকান করছে। শান্তুনু জানা শেখ শাহজাহানের ডান হাত বলেও অভিযোগ করছেন গ্রামবাসীরা। গ্রামবাসীরা নিজের হাতে শেখ শাহজাহানের নির্দেশে খেলার মাঠ দখল করে বাজার, বানানো দোকানের ইঁটের গাথনি ভেঙে দিচ্ছে।
এদিকে বেড়মজুরে যখন বুধবার সকালে শেখ শাহজাহানের গ্রেফতারির দাবিতে থানায় অভিযোগ জমা দিতে যাচ্ছেন তখন পুলিশ ১৪৪ ধারা জারি আছে বলে বিক্ষোভরত মহিলাদের আটকে দেয়। তখন ওই প্রতিবাদী গ্রামের মহিলারা বলেন, ১৪৪ ধারা জারি থাকলে আমরা ২ জন করে যাবো। পুলিশ আমাদের বলছে অভিযোগ জমা দিতে, আবার সেই পুলিশ কেন অভিযোত জমা দিতে গেলে ১৪৪ ধারা জারি আছে বলে আমাদের আটকে দিচ্ছে? এরপরই গ্রামের মহিলাদের ক্ষোভ এবং জমায়েত বাড়তে থাকে। তখন একটা উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটায় পুলিশ। গ্রামের মহিলাদের ক্ষোভ প্রশমিত করতে দ্রুত টেবিল-চেয়ার এনে বিক্ষোভরত মহিলাদের সামনেই অভিযোগ গ্রহণ কেন্দ্র খুলে ফেলে। তবে পুলিশের এই ভূমিকাতে সন্তুষ্ট হননি গ্রামের মহিলারা, তাঁরা দাবি করতে থাকেন, এতোদিন আমরা অভিযোগ জমা দিতে চেয়েছি, তখন পুলিশ কোথায় ছিল? আজ যখন আমরা নিজেদের অধিকার, সম্পত্তি, সম্মান রক্ষার জন্য নিজেরা পথে নেমেছি, তখন পুলিশ সক্রিয় হয়ে উঠেছে।
এদিকে বুধবার কলকাতা হাই কোর্ট নির্দেশ দিয়েছে, শেখ শাহজাহানকে যে কোনও এজেন্সি গ্রেফতার করতে পারে, তার গ্রেফতারিতে ইডি, সিবিআই-র কোনও বাধা নেই। এরই মধ্যে ভাঙড়ের আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি বলেন, “সন্দেশখালির আন্দোলন, মা-বোনেদের পাশে থেকেই বলছি, সন্দেশখালির ঘটনাকে সামনে এনে কী কালীঘাটের কাকুর ভয়েজ টেস্টের রিপোর্ট চাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে?” এদিকে সন্দেশখালি এখন এক কথায় সিসি ক্যামেরা দিয়ে পুলিশ মুড়ে ফেলেছে। এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন হচ্ছে একটাই এতো কিছুর পরেও কেন এখনও অধরা সন্দেশখালির “বেতাজ বাদশা” শেখ শাহজাহান। বাঘ কেন এখন ইঁদুরের মতো লুকিয়ে আছে? এই প্রশ্ন তুলছেন সন্দেশখালির গ্রামবাসীরা।
মহানগর ডেস্ক : এই রাজ্যে একশো দিনের কাজ, আবাস যোজনা থেকে শুরু করে মিড ডে মিল সহ সমস্ত সরকারি প্রকল্পই দুর্নীতিতে ছেয়ে গেছে। কাটমানি নেওয়াই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের সার্বভৌমিক অধিকার হয়ে দাঁড়িয়েছে। মঙ্গলবার কলকাতায় এসে ঠিক এই ভাষাতেই রাজ্য সরকারকে বিদ্ধ করলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের আবাস যোজনা থেকে শুরু করে একশো দিনের কাজের মতো সব প্রকল্পগুলিতে রাজনৈতিক কারণে এবং ন অজুহাতে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে টাকা না দেওয়ার অভিযোগ প্রায়ই তুলছেন। এই বিষয়ে সরব তাঁর তৃণমূলও। এই ইস্যুতে মঙ্গলবার কলকাতায় এসে নির্মলা সীতারামনের প্রশ্ন, এতো দুর্নীতি থাকলে তাঁরা টাকা দেওয়া হবে কী ভাবে? একশো দিনের কাজে ২৫ লক্ষ ভুয়ো জবকার্ড পাওয়ার দাবি করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘‘টাকা তো আমজনতার। তাঁদের করের টাকা থেকে কী ভাবে এটা দেব?’’ নির্মলার অভিযোগ, চা বাগানের মতো ব্যক্তিগত সম্পদের কাজে ওই প্রকল্পকে ব্যবহার করা হয়েছে। আবাস প্রকল্পে ঘর পেয়েছেন ‘ঘর থাকা’ অনেক মানুষ! এ ভাবে দুর্নীতির টাকা যাঁদের পকেটে গিয়েছে, তাঁদের থেকে তা আর আদায় করা অসম্ভব বলেই উল্টে তৃণমূল সরকারই এখন রাজ্যের কোষাগার থেকে আমজনতার করের টাকা দ্বিতীয় বার খরচ করছে।অর্থমন্ত্রীর দাবি, একের পর এক কেলেঙ্কারি ঘটে চলেছে। দুর্নীতি ও সিন্ডিকেট-নির্ভর অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। তবে পুলিশের একাংশের মেরুদণ্ড নেই। তাঁরা কার্যত শাসকদলের ক্যাডারে পরিণত হয়েছেন।
এই প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের কটাক্ষ, ‘‘আদানি-অম্বানী নন, রেশন দেওয়ার কথা আমজনতাকে। শুধু ২০২২ সালের এপ্রিল-সেপ্টেম্বরের মধ্যে মিড ডে মিল সংক্রান্ত ১০০ কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে! এক জন মহিলা মুখ্যমন্ত্রী এমন হৃদয়হীন!’’অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী-দিদি নিজেই ২০১৯ সালে ২০১১ সালের কাটমানি ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন। তার মানে তিনি স্বীকার করছেন। কিন্তু তার পরেও কিছু হয়নি।’’নির্মলা বলেন, “কেন ১৪৪ ধারা জারি করে সন্দেশখালির অত্যাচারের কাহিনী যাতে বিরোধীরা দেখতে না পারে তার চেষ্টা চালাচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুলিশ? একই রাজ্য শাসক-বিরোধীের জন্য আলাদা নিয়ম? ওখানে জমি লুঠ থেকে শুরু করে মহিলাদের সম্ভ্রম লুঠ হয়েছে, কী করছেন মুখ্যমন্ত্রী? কেন সন্দেশখালির ঘটনায় মূল অভিযুক্ত এখনও আড়ালে? কোথায় দিদির স্বচ্ছতা?”
তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ অবশ্য বলেন, ‘‘১০০ দিনের কাজে নির্মলা সীতারামন সরকার প্রথম পুরস্কার দিয়েছে বাংলাকে। বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পে বাংলা একাধিক বার পুরস্কৃত। আর এখানে এসে উনি মিথ্যা রাজনীতি করছেন!’’কুণালের এই মন্তব্যে বিজেপির বক্তব্য, কেন্দ্রীয় প্রকল্পে রাজ্যের পুরস্কৃত হওয়ার মানে কী কেন্দ্রের বিভিন্ন প্রকল্পে দেওয়া টাকা রাজ্য সরকার নয়ছয় করবে?
সন্দেশখালিতে জনরোষে প্রাণ নিয়ে লুকিয়ে অজিত, পার্থ বললেন, “দলের কোনও পদে ছিলেন না অজিত”
মহানগর ডেস্ক: সন্দেশখালির বেড়মজুর গ্রামের ক্ষুব্ধ লাঠি, ঝাঁটা হাতে মহিলাদের ধাওয়া খেয়ে এই অঞ্চলের তৃণমূল অঞ্চল সভাপতি অজিত মাইতি প্রাণ ভয়ে এক ব্যক্তির বাড়িতে লুকিয়ে পড়েছেন।
রবিবার সন্দেশখালির বেড়মজুরে যখন গলায় খোল নিয়ে কীর্তন করে রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক বললেন, “দেখছেন তো মানুষ আনন্দে আছেন।” তখন সেই বেড়মজুরেই তৃণমূলের নেতা অজিত মাইতি গণরোষে লুকিয়ে।
রবিবার বেড়মজুরের মহিলারা পুলিশের কাছে দাবি করেন, “পুলিশ এতো প্রতিশ্রুতি দিতে পারছে কেন শেখ শাহজাহানকে গ্রেফতার করতে পারছে না?”
পুলিশের সঙ্গে গ্রামের মহিলাদের যখন এই নিয়ে বচসা চলছে তখন তৃণমূল নেতা অজিত মাইতিকে তারা দেখতে পেয়ে লাঠি, ঝাঁটা নিয়ে তেড়ে যান। তখন অজিত মাইতি কোনওক্রমে প্রাণ হাতে নিয়ে অন্য এক সিভিক ভলান্টিয়ারের বাড়িতে আশ্রয় নেন এবং সেই বাড়ির গেটে তালা দিয়ে দেন। এদিকে যে বাড়িতে অজিত মাইতি আশ্রয় নিয়েছেন সেই বাড়িতে ঝাঁটা হাতে মহিলারা বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। পুলিশ প্রাণপনে অজিত মাইতিকে বিক্ষুব্ধ মহিলাদের হাত থেকে রক্ষার চেষ্ট করতে থাকে। মহিলারা দাবি করেন, আমরা জানতে চাই কেন অজিত মাইতি আমাদের বাড়ির ছেলেদের নামে মামলা করল? কেন তার অভিযোগে পুলিশ আমাদের ছেলে, স্বামীকে গ্রেফতার করেছে, কে তাদের ছাড়াবে? অজিত মাইতিকে এই মুহূর্তে গ্রেফতার করতে হবে। না হলে অজিত মাইতিকে আমাদের হাতে ছেড়ে দিতে হবে। গ্রামের মহিলারা বলেন, অজিত মাইতি যদি কিছু না করবেন তাহলে লুকিয়ে আছেন কেন?
অজিত মাইতির বক্তব্য, “আমি কোনও অন্যায় করিনি। আমি যদি কোনও জমি নিয়ে থাকি ফিরিয়ে দেবো। আমি তৃণমূলের অঞ্চল সম্পাদক। আমি জমি নিয়ে থাকলে সব ফিরিয়ে দেবো। আমি পার্টির হয়ে কাজ করতাম। শেখ শাহজাহান, শেখ সিরাজের কথায় কাজ করিনি। আমি জমি দখলের বিষয় জানি না, ইদানিং শুনছি, আমার কাছে কোনও অভিযোগ আসেনি। গ্রামবাসীরা আন্দোলন করছে, তাই আমি আতঙ্কে, ভয়ে লুকিয়ে আছি। আমি বলছি আমায় যদি কেউ জানাতো তাদের সমস্যার কথা, আমি সমাধান করতাম। পুলিশের উপর আমার ভরসা আছে, না হলে আমায় মেরে ফেলত। আমি এই দলের সঙ্গে যুক্ত তিন বছর। আমি ২০১৯ সালে বিজেপি করতাম। ২০১৯ সালে যখন এই অঞ্চল তৃণমূলের হাতছাড়া হয়, বিজেপির হাতে ক্ষমতা যায়, তখন তৃণমূল মারধর করে আমায় তৃণমূলে নিয়ে আসে। শ্যাম সর্দার, তাপস আড়ি আমায় মেরে তৃণমূলে আনে। সিরাজউদ্দীন শেখ এখানকার নেতা, সে শেখ শাহজাহানের ভাই। ২০১৯ সালে এই কথা আমি তৃণমূলের নেতাদের জানাইনি এখনও জানাইনি। আমায় যখন মেরে তৃণমূলে আনে তখন শৈখ শাহজাহানের ভাই শেখ সিরাজউদ্দীন শেখ অঞ্চল সভাপতি। আমি তৃণমূলে আসতে চাইনি, আমায় মারধর করে তৃণমূলে নিয়ে আসে। আমি নিজে থেকে কারও জমি নিইনি। যদি জমি নিয়ে থাকি তাহলে ফিরিয়ে দেবো। আমি এখন তৃণমূল করি। শেখ সিরাজউদ্দীনকে সরিয়ে আমায় অঞ্চল সভাপতি করা হয়েছে। দরজা খুলবেন না, সংবাদ মাধ্যম যাবেন না। আমায় পিটিয়ে মেরে ফেলবে। শেখ সিরাজউদ্দীনের সঙ্গে থেকে আমি পচা আলু হয়ে গিয়েছি। আমি অঞ্চল সভাপতির পদ পেয়ে খুশি হইনি। আমি জানি না আমায় এই পদ দিয়েছে। আমি মেয়ের বাড়িতে ছিলাম। আমি আজই পদত্যাগ করবো। আমি ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে বুঝতে পারছি দুর্নীতি হয়েছে।”
এদিকে অজিত মাইতি যার বাড়িতে ঢুকে পড়েছেন, তিনি স্নান করে বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে হিমেল হাওয়ায় কাঁপছেন। পরে পুলিশের বিরাট বাহিনী এসে বাড়ির মালিককে বাড়িতে ঢুকিয়ে দিলেও অজিত মাইতি তখনও সেই বাড়িতে।
এদিকে গ্রামের মহিলারা তখনও বিক্ষোভ দেখিয়ে বলেন, অজিত মাইতিকে আমাদের হাতে ছেড়ে দিতে হবে। পুলিশ গ্রামের মহিলাদের বারবার বোঝাতে চেষ্টা করে আপনারা আইন হাতে তুলে নেবেন না।
এদিকে এই এলাকার পাশেই পার্থ ভৌমিক বলেন, “অজিত মাইতিকে আমরা দলের পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছি। ও কোনও কালেই অঞ্চল সভাপতি ছিল না। যদি কেউ জমি নিয়ে থাকে তার ব্যবস্থা হবে। হলধর দা এবং শক্তি দা কে যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়েছে ওই অঞ্চল তৃণমূলের।” অজিত মাইতি কিন্তু শুরুতে এদিন বলেছেন সিরাজউদ্দীন সভাপতি আমি সম্পাদক ছিলাম।
তবে পার্থ ভৌমিক স্পষ্ট জানিয়ে দেন, “দল অজিত মাইতির পাশে নেই।”
এদিকে সাংবাদিকরা অজিত মাইতিকে বলেন, শনিবার আপনাকে বেড়মজুর অঞ্চলের তৃণমূল সভাপতি করা হয়েছিল, আজ পার্থ ভৌমিক বললেন আপনি কোনওদিন দলের কেউ ছিলেন না। তবে এই প্রশ্নে মুখে কুলুপ এঁটে থাকেন অজিত মাইতি।
এদিকে পুলিশ অজিত মাইতি যার বাড়িতে প্রাণ ভয়ে লুকিয়ে আছেন, সেই বাড়ির কর্তাকে নিমন্ত্রণ বাড়িতে যাওয়ার জন্য সতর্ক ভাবে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। পুলিশ জানায়, তারা জানে না কেন অজিত মাইতি এই বাড়িতে লুকিয়ে আছেন।
ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা শেখ শাহজাহান, শেখ সিরাজউদ্দীনের সহযোগী অজিত মাইতি এখন নিজেই গ্রামের ক্ষুব্ধ মহিলাদের রোষের মুখে ত্রস্ত।
এদিকে ঘটনাস্থলে বিরাট পুকিশ বাহিনী নিয়ে এসপি, ডিএসপি এসেছেন। পাশাপাশি প্রচুর সংখ্যায় গ্রামের মহিলারা বেড়মজুরে জড়ো হয়ে শেখ শাহজাহান, শেখ সিরাজউদ্দীন, অজিত মাইতির গ্রেফতারির দাবি জানাতে থাকেন। পরিস্থিতি পুলিশ নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি, গ্রামের মহিলাদের রোষের মুখে পড়ে প্রাণভয়ে অন্য এক ব্যক্তির বাড়িতে লুকিয়ে আছেন অজিত মাইতি।
মহানগর ডেস্ক: সন্দেশখালি থেকে ৫২ কিলোমিটার দূরে ভোজের হাটে আটকে দেওয়া হল স্বেছাসেবী সংস্থার ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিমকে। পুলিশের সঙ্গে তীব্র বচসায় জড়ালেন ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিমের সদস্যরা। সন্দেশখালির অত্যাচারিত পুরুষ-মহিলাদের সঙ্গে দেখা করার জন্য এই দলটি সন্দেশখালি যাওয়ার পথে ১৪৪ ধারা জারির কথা বলে ভোজেরহাটে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিমকে পুলিশ আটকে দেয়। প্রসঙ্গত, ভোজেরহাটে ১৪৪ ধারা জারি নেই।
এই ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিমের নেতৃত্বে আছেন পাটনা হাইকোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি নরসিমা রেড্ডি সহ মোট ছয়জন। প্রতিনিধি দল ও রাজ্যের বেশ কয়েকজন আইনজীবী সন্দেশখালি এলাকায় যাবেন বলেই প্রাথমিক ভাবে জানা যায়।
নরসিমা রেড্ডির বক্তব্য, “আমরা কোনও আইন ভাঙিনি। আমাদের রাস্তায় বাধা দিয়ে পুলিশ আইন ভেঙেছে।”
পুলিশি বাধা পেয়ে রাস্তার পাশে বসে পড়েন প্রতিনিধিরা। রবিবার সকালেই মধ্য কললাতার যে হোটেলে এই প্রতিনিধি দলটি ছিলেন সেখানে গিয়ে পুলিশ তাঁদের সদেশখালি যেতে নিষেধ করে নোটিশ দিয়ে আসে।
পুলিশ জানিয়েছে, বসিরহাট থানা থেকে কলকাতা পুলিশকে বলা হয়েছে সন্দেশখালির পরিস্থিতির দিকে নজর রেখে এই প্রতিনিধি দলকে ঘটনাস্থলে ঢুকতে দেওয়া হবে না। তবে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিমের বক্তব্য, “আমরা সন্দেশখালি যাবোই। এই বাধা আইন বিরুদ্ধ। আমরা কোনও আইন ভাঙিনি।”
এদিকে টিমের সদস্যরা ভোজেরহাটে রাস্তায় বসে পড়ার ফলে এই রাস্তায় ব্যাপক জানজট সৃষ্টি হয়েছে। বিরাট পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে রয়েছে।
সন্দেশখালিতে কি শুধু শাসকদলেরই যাওয়ার অধিকার আছে? এই প্রশ্ন তুলে পুলিশের সঙ্গে তুমুল বচসায় জড়িয়ে পড়েন ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিমের সদস্যরা।
প্রসঙ্গত গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে সন্দেশখালি আশান্ত হওয়ার পর থেকে এপর্যন্ত শাসকদল ছাড়া অন্য কাউকে এলাকায় ঢুকতে বারবার বাধা দিচ্ছে পুলিশ-প্রশাসন। বাম, বিজেপি, বিজেপি মহিলা মোর্চা সদস্য সবাইকেই পুলিশ সন্দেশখালিতে ঢুকতে বাধা দিয়েছে। তবে এরই মধ্যে ব্যতিক্রম রাজ্যের শাসকদলের নেতা-মন্ত্রীরা, তাঁরা সন্দেশখালিতে বিনা বাধায় প্রবেশ করতে পারছেন।
পুলিশের যুক্তি, সন্দেশখালিতে ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে। সেখানে কেউ গেলে পরিস্থিতি অশান্ত হয়ে উঠতে পারে। তবে শনিবার দেখা গেছে রাজ্যের দুই মন্ত্রী সুজিত বসু এবং পার্থ ভৌমিক সদেশখালির পাঠকপাড়ায় পৌঁছলে স্থানীয় মানুষেরা শেখ শাহজাহানকে গ্রেফতারির দাবিতে দুই মন্ত্রীর সামনে ক্ষোভে ফেটে পড়েন। অথচ শুভেন্দু অধিকারী, মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়কে দেখে সন্দেশখালির স্থানীয় মহিলা-পুরুষেরা তাঁদের ওপর অত্যাচারের কাহিনী তুলে ধরেছেন অভিযোগের মাধ্যমে।
বিরোধীরা বলছে, “শাসকের এই অত্যাচারের কাহিনী যাতে কেউ জানতে না পারে সেই কারণেই বিরোধী দল এবং বিভিন্ন সংগঠনকে সন্দেশখালিতে ঢুকতে দিতে চাইছে না পুলিশ এবং প্রশাসন।
এদিকে এর আগে সন্দেশখালির ঘটনায় জাতীয় মহিলা কমিশন, এসসি,এসটি কমিশন, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এলাকায় এসে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে গিয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি সংগঠন সন্দেশখালির ঘটনায় রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন দরকার বলে সংশ্লিষ্ট জায়গায় জানিয়েছে। রাজ্যের শাসক এবং শাসকদল ৫২ দিনে শেখ শাহজাহানকে গ্রেফতার করতেমনা পারলেও গ্রামের প্রতিবাদী মানুষদের কাউকে কাউকে গ্রেফতার করেছে এবং বিরেধীদের বাধা দিয়ে শাসকদলের নেতা-মন্ত্রীদের পাহারা দিয়ে সন্দেশখালিতে ঢুকতে দিচ্ছে।