Sandeshkhali issue
মহানগর ডেস্ক : আরামবাগে বিজেপির জনসভা থেকে প্রত্যাশিত ভাবেই সন্দেশখালিকাণ্ডে তৃণমূলকে কাঠগড়ায় তুললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সন্দেশখালির মহিলাদের সম্মান লুঠ করেছে যে নেতা সে দু’মাস কারও আড়ালে তো ছিল। মানুষের আন্দোলনে, বিজেপির আন্দোলনে শেষ পর্যন্ত পুলিশ সন্দেশখালির ওই তৃণমূল নেতাকে গ্রেফতার করতে বাধ্য হয়েছে।”প্রধানমন্ত্রী এদিন আরও বলেন, “তৃণমূলের এই অপরাধী নেতা (পড়ুন শেখ শাহজাহান) ২ মাস আড়ালে ছিল, কেউ তো তাকে বাঁচিয়েছে, আড়াল করেছে! আপনারা এই তৃণমূলকে ক্ষমা করবেন? মা, বোনের ইজ্জত যারা নিয়েছে তাদের ভোটের মাধ্যমে জবাব দিন। মা-মাটি-মানুষ সন্দেশখালির মা, বোনেদের সঙ্গে যে ব্যবহার করেছে তাতে রামমোহন রায়ের আত্মাও কাঁদছে। এর জবাব ভোটের বাক্সে বাংলার মানুষ দেবেন।”এদিন সন্দেশখালিকাণ্ডে ইন্ডিয়া জোটকে নিশানা করে বলেন, “সন্দেশখালিকাণ্ডে তো ইন্ডি জোটের বড় বড় নেতাদের কিছু বলতে শুনলাম না। ওরা অর্থাৎ বাম, কংগ্রেস সব গান্ধিজীর তিন বাঁদরের মতো চোখ, কান, মুখ বন্ধ করে বসেছিলেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে তো মুখ খোলেনি, মুখ খোলার সাহস পর্যন্ত দেখাননি! পাটনা, বেঙ্গালুরু, মুম্বই সব জায়গায় বৈঠক করে অনেক কথা বলেছেন, সন্দেশখালি নিয়ে একটাও কথা বললেন না! কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি তো বলে দিলেন, আরে ছাড়ুন, বাংলায় এসব আকছার হয়। এটা বাংলাকে অপমান করা নয়? এটা বাংলার মানুষ মেনে নেবেন?”সন্দেশখালিকাণ্ডে কংগ্রেসকে সমালোচনা প্রসঙ্গে অধীর রঞ্জন চৌধুরী বলেন, “প্রধানমন্ত্রী সন্দেশখালি নিয়ে এখন ভোটের মুখে কথা বলছেন? কংগ্রেস, বাম সন্দেশখালিকাণ্ডে ধর্মের রাজনীতি করেনি, বাংলার মানুষ দেখেছে কংগ্রেস,বাম কি করেছে।”
সুজন চক্রবর্তী বলেন, “প্রধানমন্ত্রী বলছেন, সন্দেশখালির ঘটনায় বাম, কংগ্রেস কিছু বলার সাহস দেখাননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে। আমার প্রশ্ন ইডিকে মারল শেখ শাহজাহানের সাগরেদরা, প্রধানমন্ত্রী তার কি করেছেন? একবারও প্রধানমন্ত্রী শেখ শাহজাহানের নাম মুখে এনেছেন?”তৃণমূলের দুর্নীতি নিয়েও এদিন প্রধানমন্ত্রী মুখ খোলেন। তিনি বলেন, “মা-মাটি-মানুষের নামে টিএমসি নিয়োগ, রেশন, গড়ু পাচার সব লুঠ করছে। এই লুঠেরাদের ছুড়ে ফেলতে হবে, কাউকে ক্ষমা করা হবে না। মোদী কোনও গালাগালে ভয় পান না। সন্দেশখালির সব অত্যাচার এবং বাংলার লুঠের জবাব, গড়ু পাচার, নেতার বাড়িতে টাকার পাহাড়, যা সিনেমায় একমাত্র দেখা যায়, যা তৃণমূল নেতার বাড়িতে দেখা গেছে, গরিবের টাকা লুঠ করা লুঠেরাদের জন্য ধর্ণার জবাব বাংলার মানুষদের ভোটের মধ্য দিয়েই দিতে হবে। দুঃশাসসের সব সীমা অতিক্রম করে গেছে তৃণমূল।”
নরেন্দ্র মোদী ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে বাংলায় এসে, “দিদি, ও দিদি”, বলে যে নাটকীয় কন্ঠে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করেছিলেন এদিন তার ছিটেফোঁটাও মোদীর গলায় শোনা গেল না। মমতা নামটি মুখে না এনে শুধুই টিএমসি বলেই রাজ্যের শাসকদলকে সমালোচনা করলেন প্রধানমন্ত্রী। মুখে তুললেন না অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বা ভাতিজা শব্দটিও।মোদীর এই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম মুখে না তোলা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় তৃণমূল নেতা দেবাংশু ভট্টাচার্য লিখেছেন, “২০২১-এর নির্বাচনে প্রতি মিনিটে একবার করে দিদির নাম নিতেন। আজকের বক্তব্যে বারংবার ‘TMC’ উচ্চারণ করলেও “মমতা” নামটা সেভাবে উচ্চারণই করেননি।মোদী সাহেব বুঝেছেন, বাংলা তার মেয়েকে কতটা ভালোবাসে। তাই গতবারের মত দিদির নাম নিয়ে ভরাডুবির রাস্তা গ্রহণ করতে চাননি। এই ভয় ভালো লক্ষণ!”ইয়ে ডর হামে আচ্ছা লাগা..”এখন দেখার বাংলার মাটিতে বিজেপি ৩৫টি আসন তৃণমূলের হাত থেকে ছিনিয়ে নিতে পারে কি না!
মহানগর ডেস্ক: শেখ শাহজাহানকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গ্রেফতার করছে না এটা ঠিক নয়। এই নিয়ে কেউ ক্ষোভ, বিদ্বেষ রাখবেন না। শাহজাহানকে তৃণমূল আড়াল করছে না, আড়াল করছে বিচার ব্যবস্থা। যারা শেখ শাহজাহানের গ্রেফতার চাইছেন তারা হাই কোর্টে অনুরোধ করুন। কলকাতা হাই কোর্টের স্থগিতাদেশের জন্য শেখ শাহজাহানকে পুলিশ ধরতে পারছে না। আর কলকাতা হাই কোর্টে এই স্থগিতাদেশ চেয়েছে ইডি। তারাই শেখ শাহজাহানের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করে। রবিবার সন্দেশখালিকাণ্ড এবং শেখ শাহজাহানের গ্রেফতারি নিয়ে বজবজ থেকে এমনই মন্তব্য করলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার সন্দেশখালি থেকে শেখ শাহজাহানের গ্রেফতারি প্রসঙ্গে এই একই কথা বলেছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক।
রবিবার বজবজে এক অনুষ্ঠানে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “৫ জানুয়ারি শেখ শাহজাহানের ওখানে ইডির উপর হামলার যে অভিযোগ হয় তার পর ইডি এফআইআর করে, হাই কোর্টে জয় সেনগুপ্তর এজলাসে ইডি মামলা করে। আদালত এসআইটি গঠনের নির্দেশ দেয়। তার দিন দশে পড়ে ইডি হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন করে এই মামলায় স্থগিতাদেশ চায়। এটা কে করেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? এটা করেছেন হাই কোর্টের বিচারপতি। এর শুনানি ৬ মার্চ। হাই কোর্ট যদি প্রচাসনের হাত-পা বেধে দেয় কি করে গ্রেফতার করবে পুলিশ? পুলিশকে ১৫ দিন সময় দেবেন না, ইডি, সিবিআইকে ১২ বছর সময় দেবেন! একটা রাজশেখর মান্থার বেঞ্চ একটা প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ স্থগুতাদেশ দিয়েছে। যারা বলছে শেখ শাহজাহানকে তৃণমূল আড়াল করছে সেই সব নেতা, মানবাধিকার কর্মীরা ফুটেজ পাওয়ার জন্য এসব করছে। উত্তম সর্দার, শিবু হাজরার বিরুদ্ধে অভিযোগ হয়, পুলিশ গ্রেফতার করেছে। আরে তৃণমূল পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মতো নেতাকে রেয়াত করে না তৃণমূল। যে শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে নারদার টাকা নেওয়ার ভিডিও বিজেপি দেখিয়েছে সেই শুভেন্দুকে বিজেপি দলে নিয়েছে। হিমন্ত বিশ্ব শর্মাকে বিজেপিতে নিয়েছে। এটাই হচ্ছে নরেন্দ্র মোদীর গ্যারিন্টি। মানুষ জানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিচার দেবেন, তাই তাঁর কাছে আবেদন করছে। কাশ্মীর থেকে সুদীপ্ত সেনকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসন ধরে এনেছে। সংবাদ মাধ্যম দেখাচ্ছে দিল্লির কৃষক আন্দোলন? শেখ শাহজাহানকে তৃণমূল গার্ড করছে না। যদি কেউ গার্ড করে থাকে জুডিশিয়ারি গার্ড করছে। ইনভেস্টিগেশন স্থগিতাদেশ মানে চাইলে থানায় ডেকে আনা যাবে না অভিযুক্তকে। স্থগিতাদেশ চেয়েছে ইডি। প্রধান বিচারপতি স্থগিতাদেশ দিয়েছেন। শেখ শাহজাহানকে তৃণমূল আড়াল করছে না, আড়াল করছে হাই কোর্ট।”
এদিন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আরও বলোন, “সন্দেশখালি নিয়ে যা তথ্য আসছে তাতে কেউ অভিযুক্ত হলে তৃণমূল ক্ষমা করবে না। ২০১৬ পর্যন্ত সিপিএমের নিরাপদ সর্দার সন্দেশখালির বিধায়ক ছিলেন। কেন তখন কিছু বলেননি? তিনি তো একটা কাগজে অভিযোগ লিখে সংবাদ মাধ্যমকে ডেকেও অভিযোগ করতে পারতেন। কেন করেননি?”
এই প্রসঙ্গে শুভেন্দু অধিকারীর প্রসঙ্গ উল্লেখ করে অভিষেক বলেন, “শুভেন্দু অভিকারীর সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ায় শেখ শাহজাহানের অনেক ছবি পাবেন, তখন কেন শুভেন্দু কিছু বলেননি? কেউ যদি চায় ইচ্ছাকৃত বিভাজন সৃষ্টি করবে তার জবাব মানুষ দেবে। ২০২১ সালেও জোর করে ক্ষমতায় আসতে চেয়েছে, মানুষ জবাব দিয়েছে। আমরা পরিস্থিতি ঠিক হলে সন্দেশখালি যাবো। ১০ তারিখ ব্রিগেড সমাবেশের পর সন্দেশখালি আমরা যাবো। এই মুহূর্তে সন্দেশখালিতে সভা না করাই ভালো। মানুষ বাঁচলে, সম্প্রীতি ঠিক থাকলে সব হবে।”
অভিষেক এদিন বলেন, “আগামী ১০ মার্চ ব্রিগেডে তৃণমূলের ট্রেলার দেখবেন, সিনেমা দেখা যাবে ভোটে।”
আদালত অনুমতি দিলে ১০ দিনে গ্রেফতার হবে শেখ শাহজাহান, বললেন মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক
মহানগর ডেস্ক : সন্দেশখালির পাত্রপাড়া গ্রামের বিক্ষুব্ধ মহিলাদের সামনে বসে শনিবার শেখ শাহজানাহকে গ্রেফতার করতে না পারার পিছনে রাজ্য সরকারের আসল অক্ষমতার রহস্য উন্মোচন করলেন রাজ্যের সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিক। শেখ শাহজাহানকে রাজ্য গ্রেফতার করতে না পারার বিষয়ে ইডির কোর্টে বল ঠেলে দিলেন পার্থ ভৌমিক। বললেন, হাই কোর্টে শেখ শাহজাহানের বিরুদ্ধে মামলা করেছে ইডি। কলকাতা হাই কোর্ট রাজ্য পুলিশকে এই মামলায় অংশ নিয়ে শেখ শাহজাহানকে গ্রেফতারের অনুমতি দেয়নি। না হলে ১০ দিনে শেখ শাহজাহানকে রাজ্য পুলিশ ধরে ফেলত। তবে গ্রামের অত্যাচারিত এবং বিক্ষুব্ধ মহিলারা সেচমন্ত্রীর এই যুক্তিকে আমলও দিলেন না বিশ্বাসও করলেন না।
পার্থ ভৌমিক এবং সুজিত বসু এই দুই মন্ত্রী শনিবার সন্দেশখালি গ্রামের বিক্ষুব্ধ মহিলাদের সঙ্গে সমস্যা সমাধানে আলোচনায় বসেছিলেন। পার্থ ভৌমিক বলেন, “রাজ্য পুলিশের আন্ডারে উত্তম এবং শিবু গ্রেফতার হয়েছে। শেখ শাহজাহানের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে মামলা করেছে ইডি। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা হাই কোর্টে আবেদন করে বলবেন, কলকাতা হাই কোর্ট রাজ্যকে অনুমতি দিলে রাজ্য পুলিশ শেখ শাহজাহানকে ১০ দিনে মধ্যে ধরে দেবে। হাই কোর্ট তো রাজ্য, কলকাতা পুলিশকে শেখ শাহজাহানকে ধরার অনুমতি দেয়নি।” পার্থ ভৌমিকের এদিনের বক্তব্যে একটা বিষয় স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যে হাই কোর্ট রাজ্য পুলিশকে অনুমতি দিচ্ছে না বলেই শেখ শাহজাহানকে গ্রেফতার করা যাচ্ছে না। তাহলে কী রাজ্য পুলিশ জানে কোথায় আছে শেখ শাহজাহান? না হলে কী ভাবে রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক বলছেন আদালত অনুমতি দিলে ১০ দিনে শেখ শাহজাহানকে গ্রেফতার করবে রাজ্য পুলিশ।
প্রসঙ্গত, কলকাতা হাই কোর্ট ইতিমধ্যেই জানিয়েছে, যার বিরুদ্ধে এতো অভিযোগ তাকে এতোদিন কেন ধরা হচ্ছে না? সন্দেশখালির বিদ্রোহী মহিলারা প্রতিদিন তাঁদের আন্দোলনের উত্তাপ বাড়িয়ে চলেছেন। পুলিশ এবং রাজ্যের দুই মন্ত্রীর সামনে গ্রামের মহিলারা জানিয়ে দিলেন, “শেখ শাহজাহানকে ধরতে হবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সহযোগিতা আমরা চাই না। মমতা যখন ৫০০/১০০০ টাকা না দিতেন তখন আমাদের ঘরের ছেলেরা কাজ করেনি? আমরা বেঁচে ছিলাম না?” এই প্রসঙ্গে বিজেপি নেতা শঙ্কুদেব পন্ডা বলেন, “পার্থ ভৌমিক বলছেন, হাই কোর্ট বলেছে রাজ্য পুলিশ শেখ শাহজাহানকে গ্রেফতার করতে পারবে না। এসব ডাহা মিথ্যা কথা। কোর্টের এই অর্ডারটা পার্থ ভৌমিক দেখাতে পারবেন তো?”
এদিকে মানুষের বিরুদ্ধে অত্যাচার হলে এভাবেই বোধহয় জনরোষের বহিঃপ্রকাশ হয়। এই ক্ষোভ পুলিশ দিয়ে কতটা মোকাবিলা করা যাবে সেটা যেমন একটা বড় প্রশ্ন তেমন অন্য আর একটা প্রশ্ন মন্ত্রীরাও কি পারবেন দীর্ঘদিন ধরে শেখ শাহজাহানের, সিরাজের, শিবুর, উত্তমের অত্যাচারের ক্ষতে প্রলেপ দিতে? রাজ্যের যে দুই মন্ত্রী শনিবার সন্দেশখালিতে গিয়েছিলেন তার মধ্যে একজন হলেন পার্থ ভৌমিক অন্যজন সুজিত বসু। ক্ষুব্ধ মহিলাদের বক্তব্যকে “শিখিয়ে দেওয়া কথা” বলে উড়িয়ে দিয়েছেন পার্থ ভৌমিক। পার্থ ভৌমিকের তুলনায় কিছুটা অভিজ্ঞ এবং জনভিত্তি থাকা অন্য আর এক মন্ত্রী সুজিত বসু বলেছেন, “আমরা দিদির (পড়ুন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) হয়ে এসেছিলাম। যা শুনলাম, সবটা দিদিকে জানাবো।”