মহানগর ডেস্ক : তৃণমূলের একদা ভোটকুশলী প্রশান্ত কুমার বা পিকের বাংলার ভোটের ফল নিয়ে ভবিষ্যৎবাণীর সঙ্গে তৃণমূলের প্রাক্তন মুখপাত্র কুণাল ঘোষের বক্তব্য মিলছে না। রবিবার কুণাল তৃণমূলকে বাংলায় আসন প্রাপ্তির নিরিখে এক নম্বরে রেখেছেন। অন্যদিকে পিকে দাবি করেছেন, “বাংলায় লোকসভা নির্বাচনের ফলে বিজেপি তৃণমূলকে টপকে এক নম্বরে চলে আসতে পারে।” প্রশ্ন উঠছে কুণাল কী তাহলে পিকে-র কথার উত্তর দিলেন? প্রসঙ্গত পিকে-র এই বক্তব্যের উত্তর কিন্তু কুণালের আগে একটি বাংলা সংবাদ চ্যানেলে দিয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিষেক বলেছেন, “পিকে ওভারহাইপড।” তাই কুণাল যদি পিকেকে কাউন্টার করার জন্য এই মন্তব্য করে থাকেন তাহলে কিন্তু তাঁর একটু বিলম্ব হয়ে গিয়েছে, তবে ভোটের বাজার তেজি রাখতে কুণাল এই মন্তব্য করেছেন। আর তার পরই তাঁকে বিরোধীদের কেউ বলছেন জ্যোতিষ কেউ বলছেন আষাঢ়ে গল্পকার।
কুণাল রবিবার তাঁর এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেনাপতিত্বে তৃণমূল কংগ্রেস এবার বাংলায় ৩০-৩৫ আসন পাবে, সংখ্যা বাড়তে পারে। ভোট শতাংশে গড়ে ৫৮ – ৬২% ভোট তৃণমূলের। বিজেপির ভোট % কমবেশি ৩০-৩২। আসন ৫ থেকে ১১ র মধ্যে। বাম এবং কংগ্রেসের আসন ০।
* 24/3/24 এর পরিস্থিতি অনুযায়ী।”
কুণালের এই মন্তব্য শুনে বিজেপি মুখপাত্র ও রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য বলোন, আমরা দেখেছিলাম, কুণাল ঘোষকে ২০১১-র পর এই তৃণমূল সরকার এক সময় গ্রেফতার করে তাঁর কন্ঠরোধ করতে যে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল তার নজির ভারতে নেই। কুণালকে একজন সাংবাদিক হিসাবে জানতাম। তবে এখন তাঁর এই ভবিষ্যৎবাণী শুনে মনে হচ্ছে কুণাল ঘোষ বোধহয় উত্তর কলকাতার কোথাও টিয়াপাখি নিয়ে বসে জ্যোতিষি করেন। তবে তাঁর এই গুণটা জানা ছিল না। তবে কুণাল ঘোষের একটা রাজনৈতিক পর্যবেক্ষণ আছে। তাই তিনি হতদ্যম তৃণমূল কর্মীদের হথে নামাতে এসব বলছেন। তৃণমূলের মৃত্যুঘণ্টা বেজে গেছে।”
সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী কুণালের এই দাবি খারিজ করে বলেছেন, “তৃণমূল তো কুণালের কথায় মান্যতা দেয় না। কুণালকে আমার জ্যোতিষ মনে হচ্ছে। কুণাল জেলবাসের থাকাকালীন বলেছিলের সারদার প্রধান সুবিধাভোগী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তাঁর এই তত্ত্ব তৃণমূল খারিজ করে দিয়েছে। এখন কুণাল আবার তৃণমূলের আসন পাওয়া নিয়ে ভাবিষ্যৎবাণী করছেন। মোদীও দাবি করছেন বাংলায় ৩৫টি আসন পাবেন অন্যদিকে কুণালও দাবি করছেন ৩৫ আান পাওয়ার। তাহলে কি ৪২টি আসনের মধ্যে মোদী-মমতা মিলে ৩৫টি আসন পাবে।”
কংগ্রেস মুখপাত্র সৌম্য আইচ রায় কুণালের বক্তব্যের জবাবে বলেন, “কুণাল ঘোষ আষাঢ়ে গল্প করছেন। আসলে উনি ভয় পেয়েছেন, তাই ভয় পেলে মানুষ যেমন ভুল সুরে গান গায়, কুণাল ঘোষ তাই করছেন।”
তৃণমূলের ঘনিষ্ঠ মহলে পিকে-র বাংলার ভোট নিয়ে ভবিষ্যৎবাণী আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে বলে তৃণমূল সূত্রের খবর। এখন পিকের এখন তৃণমূলের সঙ্গে ভোটকুশলীর বা পরামর্শদাতার সম্পর্ক নেই। তাই পিকে-র বিরুদ্ধে অভিষেক মুখ খোলার পরই হয়তো কুণাল মুখ খুললেন, তবে ঘুরিয়ে। আর ঘুরিয়ে মুখ খুলে বিরোধীদের তোপের মুখে পড়লেন কুণাল ঘোষ। ২০২১ সালে বাংলার বিধানসভা নির্বাচনে এই তৃণমূল কিন্তু পিকে-র পরামর্শে, পিকের স্লোগান, “বাংলা নিজের মেয়েকে চায়”-এর উপর নির্ভর করে নজরকাড়া ফল করেছিল। তৃণমূল মনে করত তাদের বিপুল সাফল্য পিকের কৃতিত্ব, সেই পিকে এবার ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে বাংলার ফল প্রসঙ্গে বলছেন, বাংলায় লোকসভা ভোটে আসন প্রাপ্তির নিরিখে তৃণমূলকে টপকে ১ নম্বরে চলে আসতে পারে, পিকের এই মন্তব্যে আতঙ্কিত হয়েই কি অভিষেকের পর কুণাল তৃণমূলের ভোটের ভবিষ্যৎ নির্ধা রণ করলেন, যা শুনে বিরোধীরা তাঁকে আষাঢ়ে গল্পকার, জ্যোতিষ ইত্যাদি বাছা বাছা বিশেষণে বিশেষিত করছেন!