মহানগর ডেস্ক: সর্বদাই গোঙ্গানির আওয়াজ। বুদ বুদ শব্দ তুলে অহরহ যেন সে ফুটছে। যদি একবার সে একবার আপনাকে বাগে পায়, তাহলে ছোটবেলায় শোনা গল্প হবে সত্যি। যমরাজের মত গরম জলে ফুটিয়ে মারবে যেমন করে নিঃশেষ করে দেয় তার বক্ষে খসে পড়া গাছের পাতা কিংবা ভুল করে তার জলে যুব দেওয়া পোকামাকড় দের। এমনই এক ফুটন্ত নদীর সন্ধান মিলেছে পৃথিবীতেই। ঠিকানা আমাজনের জঙ্গল।
কোটি কোটি একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত এই আমাজন আসলে যেমন ভয়ানক, ঠিক তেমনই রহস্য ভেদি। পৃথিবীর মধ্যে থেকেও যেন সে নিজেই একটা অচেনা গদ্যময় পৃথিবী। আর সেই জঙ্গলের অধিকাংশেরও বেশি জায়গায় পৌঁছতে পারেনি মানুষ। প্রায় নটি দেশের সীমান্তবর্তী এলাকাকে ছুঁয়ে অজানা সব পশু-পাখি, গাছ-গাছালি নিয়ে বিরাজ করছে এই গা ছমছমে জঙ্গলখানি। এবার পেরুর সংলগ্ন এই আমাজনেই একটি নদীর সন্ধান পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। যেখানে প্রকৃতির নিয়মেই অবিরাম জল ফুটেছে। এককথায় বললে হয় ফুটন্ত নদী। বিজ্ঞানীরা এটিকে বিশ্বের বৃহত্তম থার্মাল রিভার বলে মনে করছেন।
এই নদীটি ২০১১ সালে ভূতত্ত্ববিদ আন্দ্রে রুজো কঠোর পরিশ্রমের পর প্রথম খুঁজে পান। এই ফুটন্ত নদীটির স্থানীয় নাম মায়ানতুইয়াকু নদী। পেরুর জনজাতি আশানুনকা ওই নদীর পাশে বসতি স্থাপন করেছিল। আর ময়ানতুয়াকু নামটা তাদেরই দেওয়া। তারা এই নদীকে পবিত্র মনে করেন।
উল্লেখ্য আন্দ্রে আমাদের মতই ছোটবেলায় দাদুর কাছ থেকে এক ফুটন্ত নদীর গল্প শোনেন। বয়স বারার সঙ্গে সঙ্গে বৈজ্ঞানিক আন্দ্রে নিশ্চিত ছিলেন, লোককাহিনীতে যার উল্লেখ আছে, বাস্তবে তার অস্থিত্ব অবশ্যই বিদ্যমান। তখন তিনি টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করছিলেন। এরপরই নদীর সন্ধানে তিনি রহস্যময়ী আমাজনকে বেছে নেন। ২০১১ সালে সেখানে যাওযার প্রস্তুতি শুরু করেছিলেন। যদিও অনুসন্ধানে নামার আগেই বিজ্ঞানীরা তাঁকে সতর্ক করে বলেন, আমাজনে এমন কোনও নদী থাকতে পারে না। কারণ এই জঙ্গলের আশেপাশে জীবন্ত আগ্নেয়গিরির উপস্থিতি নেই, যা আছে তা অনেক অনেক দূরে। কিন্তু পিছু পা হননি আন্দ্রে। বেরিয়ে পড়েন ফুটন্ত নদীর রহস্য ভেদ করতে। এরপরই পেরু সংলগ্ন এলাকাতেই চার মাইল পর্যন্ত বিস্তৃত এই ফুটন্ত নদীর হদিশ পেয়ে আন্দ্রে জানিয়েছিলেন, নদীর জলের তাপমাত্রা এতটাই বেশি, যদি ১ মিনিট আঙুল ডুবিয়ে রাখা হয়, তাহলে ঝলসে যেতে বাধ্য। ‘দ্য বয়লিং রিভার: আমাজন অ্যাডভেঞ্চার অ্যান্ড ডিসকভারি’ নামক বইতে আন্দ্রে এই নদীর কথাই উল্লেখ করেছেন।