মহানগর ডেস্ক: রবিবার বঙ্গ রাজনীতিতে প্রথম কর্পোরেট ব্রিগেড দেখতে চলেছে বাংলার মা-মাটি-মানুষ, যারা এখনও ১০০ দিনের কাজের টাকা পায়নি, সন্দেশখালিতে এই মা-মাটি-মানুষেরই জমি, অর্থ, ইজ্জত লুঠ হয়েছে। ৩২০ ফুটের এই কর্পোরেট সভামঞ্চ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নরেন্দ্র মোদীকে রাজ্যকে বঞ্চনার বিরুদ্ধে তোপ দাগবেন। এই কর্পোরেট ব্রিগেডের রূপকার তৃণমূূলের সেনাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ক্যামাক স্ট্রিটের অফিসে বসেই এই চোখ ধাঁধানো ব্রিগেডের মঞ্চ তৈরীর নীলনকশা তৈরী করেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
সমশ বদলেছে। তার সঙ্গে তাল রেখে কেনইবা ব্রিগেডের সভামঞ্চে বদল আসবে না? তাই থার্মোকল থেকে ফ্লেক্স হয়ে এবার সরাসরি ডিজিটাল ডিসপ্লে বোর্ড রাখা হয়েছে তৃণমূলের জনগর্জন সভার মঞ্চে। ব্রিগেডে মোবাইল কানেকটিভিটির সমস্যা থাকে তাই সাংবাদিকের জন্য ওয়াইফাই জোন তৈরী করা হয়েছে।
মূল মঞ্চের সামনের ৩৩০ ফুট লম্বা র্যাম্প তৈরী করে তৃণমূল এই সময় পর্যন্ত ব্রিগেডের সব সভামঞ্চকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। এমন মঞ্চ রাজনৈতিক সভায় দেখা যায় না। সাধারণত দেশ-বিদেশের বড় কনসার্টে এই ধরণের মঞ্চ দেখা যায়, যা তৈরি হয়েছে তৃণমূলের রাজনৈতিক সভায়। এই ৩৩০ ফুট লম্বা র্যাম্প ধরে মমতা, অভিষেক ভাষণ দিতে দিতে জনতার মধ্যে পৌঁছে যেতে পারবেন, যেমন ভাবে দর্শকদের মধ্যে পারফর্ম করার সময় পৌঁছে যান দেশ-বিদেশের রকস্টার থেকে শুরু করে জনপ্রিয়তম শিল্পীরা।
তৃণমূলের জনগর্জন সভার মূল মঞ্চ লম্বায় ৭২ ফুট, গভীরতায় ২০ ফুট। আর মাটি থেকে ১২ ফুট উপরে। মূল মঞ্চের পাশে দু’টি তুলনামূলক ছোট মঞ্চ থাকবে। সেগুলির দৈর্ঘ্য ৬৮ ফুট এবং প্রস্থ ২৮ ফুট। ৬০০ -র বেশি নেতানেত্রী থাকবেন এই তিনটি মঞ্চে।
মঞ্চের ঠিক পিছনে থাকছে বিশাল এলইডি ডিসপ্লে বোর্ড। তৃণমূলের অনেকেই মনে করে বলতে পারছেন না, দলের কোনও কর্মসূচিতে এই ধরনের পরিকাঠামো এর আগে দেখেছেন কি না। ফিরহাদ হাকিম শনিবার বলেছেন, “আমাদের এতো বিশাল ব্রিগেড মঞ্চ আগে দেখিনি, অনেক ব্রিগেড হয়েছে। আমাদের একটা ব্রিগেডে মৃত্যুঘণ্টা করা হয়েছিল। তবে সময় বদলেছে। তাই তার ছাপ জনগর্জন ব্রিগেডেও পড়েছে। ভাবলাম এতো বড় ব্যবস্থা, রবিবার ভিড় থাকবে, তাই আজ শনিবারই দেখে গেলাম।”
তবে শুধু পরিকাঠামোগত বন্দোবস্তই নয়, সমগ্র কর্মসূচিতে সাংগঠনিক বাঁধুনিও থাকছে নজর করার মতো। মূল মঞ্চে এবং দু’পাশের দু’টি মঞ্চে কারা বসবেন সব তালিকা প্রস্তুত। কোন জেলা পরিষদ সভাধিপতি এক নম্বর মঞ্চে, কোন সাংসদ দুই নম্বর মঞ্চে, কোন বিধায়ক কোথায় বসবেন সবটাই নির্দিষ্ট ইতিমধ্যেই হয়ে গিয়েছে। প্রত্যেককে কার্ড সংগ্রহ করে নিয়েছেন শনিবার রাতের মধ্যেই। অভিষেকের ক্যামাক স্ট্রিটের অফিসে কেউ দূত পাঠিয়ে, কেউ সশরীরে গিয়ে গলায় ঝোলানোর কার্ড সংগ্রহ করে নিয়ে গিয়েছেন।
সামনে বসে সমাবেশ উপভোগ করার পাশাপাশি একই ভাবে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারকেও সংগঠিত আকারে তুলে ধরবে তৃণমূল। জাতীয় রাজনীতিতে প্রথমবার সোশ্যাল মিডিয়াকে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করে দেখিয়েছিল বিজেপি। ২০১৪ সালের লোকসভা ভোট বিজেপির দৌলতে কর্পোরেট প্রচার দেখেছে। তার পর ধীরে ধীরে সব দলই কম-বেশি আইটি সেল তৈরি করেছে। তৃণমূলও তাকে ঢেলে সাজিয়েছে গত কয়েক বছরে। এ বার লোকসভা ভোটের আগে, এখনও পর্যন্ত ব্রিগেডের জনগর্জন সভার পরিকাঠামোগত ব্যবস্থাপনা বিজেপির থেকে তৃণমূলকে অনেকটাই এগিয়ে দিয়েছে তাতে কোনও সন্দেহ নেই।
রবিবারের ব্রিগেডের রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক বার্তা, ছবিকে সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে দিতে মরিয়া শাসকদল। তার জন্য ব্রিগেডের মঞ্চের পিছনেই থাকবে “ফিড রুম”।
ব্রিগেডের মাঠ থেকে অনেক দিন-বদলের স্লোগান, বক্তৃতা শুনেছে বাংলা তথা দেশের রাজনীতি। সেই ব্রিগেড রবিবার দেখতে চলেচে ব্রিগেডেরই আবার এক বদলে যাওয়া কর্পোরেট ব্রিগেডের ছবি। জানা যাচ্ছে এই জনগর্জন সভা থেকেই আজ তৃণমূলের লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী তালিকা ঘোষণার সম্ভাবনা রয়েছে।