TMCP
মহানগর ডেস্ক: রাজবংশীদের নিয়ে বেফাঁস মন্তব্য করে বিতর্কে জড়ালেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসের সমাবেশ থেকে দলের সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি মন্তব্যকে অস্ত্র করে বারবার আক্রমণ শানিয়ে যাচ্ছে বঙ্গ বিজেপি সহ বিরোধী নেতৃত্ব।
রাজবংশীদের নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী একটি মন্তব্য করেছিলেন ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসের সমাবেশে। তিনি বলেন, “আমার একটা হাত যদি হয় হিন্দু, আর একটা হাত মুসলমান। আমার একটা চোখ যদি হয় পঞ্জাব, আর একটা চোখ খ্রিস্টান। আমার একটা পা যদি হয় আমার রাজবংশী, আর একটা পায়ে আমি চলি, তাঁদের দেখে নমস্কার করি, সেটা হচ্ছে মতুয়া। আমি পায়ে নমস্কার করে তবে বলি”। উল্লেখ্য, মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যকে প্রসঙ্গে সরব হয়েছেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিকও ছেড়ে কথা বলেননি। মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যের বিরোধিতা করে সরব হন বিজেপি নেতারা।
আরও পড়ুন: ডিনারে চিকেন চাউমিন খেয়েই ছিপছিপে চেহারা
মঙ্গলবার সাংবাদিক সম্মেলন করেন গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশন। ওই বক্তব্যকে সমালোচনা করে টুইট করেছেন শুভেন্দু অধিকারী। তিনি লেখেন, “রাজবংশী” শব্দের আক্ষরিক অর্থ হলো গিয়ে “রাজকীয় সম্প্রদায়” অথবা রাজার বংশধর। ব্যুৎপত্তিবিদদের বিশ্লেষণ অনুযায়ী কোচ রাজবংশের উত্তরাধিকারিদের একটি ধারা রাজবংশী জনজাতিগোষ্ঠীর সূচনা করেছিলেন। রাজবংশীদের একটি সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রয়েছে। অথচ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্দ্বিধায় তাঁদের নিজের পায়ের সাথে তুলনা করে দিলেন। করতে পারলেন এমন?”
মতুয়াদের নিজের পায়ের সঙ্গে তুলনা করেছেন মমতা, এই অভিযোগ তুলে বুধবার দুপুরে ঠাকুরবাড়িতে সাংবাদিক সম্মেলন করল অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসংঘ। মতুয়া মহাসংঘের মহাসংঘাধিপতি তথা বিধায়ক সুব্রত ঠাকুরের কথায়, “এর আগেও তিনি আমাদের ঠাকুর সম্পর্কে বিকৃত মন্তব্য করেছেন। সমাজের পিছিয়ে রাখা মানুষগুলোকে নিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল করে যাচ্ছেন এটা রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধানের শোভা পায় না। আমরা রাজবংশীদের সঙ্গে যৌথভাবে প্রতিবাদ করব।”
কলকাতা: সুজিত বসুকে সিবিআই তলব নিয়ে শুরু জল্পনা। আজকেই হাজির দেওয়ার কথা রয়েছে তাঁর। গত ২৪ জুলাই পুর নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডের তদন্তের স্বার্থে দমকলমন্ত্রী সুজিত বসুকে তলব করে সিবিআই। এই প্রথমবার পুর নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় রাজ্যের কোনও মন্ত্রীকে তলব করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। ৩১ অগাস্ট তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য় ডাকা হয়েছে বলেই খবর।
এদিকে দমকল মন্ত্রী সুজিত বসু জানান যে, তিনি সিবিআই এর থেকে কোনো নোটিশ পাননি। তাঁর কথায়, ” এখনো পর্যন্ত হাজিরা দেওয়ার জন্য সিবিআই-এর কোনও নোটিস পাইনি”। বুধবার রাখি বন্ধনের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন দমকলমন্ত্রী, সেখানেই একথা জানিয়েছেন তিনি। পুর নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় দমকলমন্ত্রীকে ৩১ অগাস্ট তলব করা হয়েছে বলে সিবিআই সূত্রে দাবি। যদিও সিবিআই এর দাবি অস্বীকার করেছেন মন্ত্রী।
আরও পড়ুন: বেআইনি নির্মাণের প্রতিবাদ করতেই বিপত্তি, মা-মেয়েকে চরম হেনস্থা তৃণমূল কাউন্সিলরের
বিধাননগরের তৃণমূল বিধায়ক ও দমকল মন্ত্রী সুজিত বসুকে আজ ৩১ অগাস্ট, বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় নিজাম প্যালেসে হাজিরা দিতে বলা হয়। ২০১৬ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে রাজ্যের একাধিক পুরসভায় নিয়োগে দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ। ওই সময়ের মধ্যেই অর্থাৎ ২০১৬ থেকে ২০২১ পর্যন্ত বর্তমান দমকল মন্ত্রী ও বিধাননগরের তৃণমূল বিধায়ক সুজিত বসু দক্ষিণ দমদম পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। সেই সূত্রেই সিবিআই তলব বলে খবর।
সিবিআই এর নোটিশ পাওয়ার কথা অস্বীকার করার পর আদৌ কি আজ হাজিরা দেবেন দক্ষিণ দমদমের প্রাক্তন পুর প্রধান? উঠছে প্রশ্ন। সকাল ১১ টা থেকে আজ সুজিত বসুর অপেক্ষায় থাকবেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকরা, সেটা বলাই বাহুল্য। যদি তিনি না আসেন তার পরবর্তী পদক্ষেপ কি হবে? সেই নিয়েও রয়েছে কৌতূহল।
কলকাতা: তৃনমূল-বিজেপির বাকবিতণ্ডা বিধানসভার বাদল অধিবেশনের দ্বিতীয় পর্বে। ইস্যু, যাবদপুর ছাত্রমৃত্যু। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া মৃত্যুর ঘটনায় কার্যত দায় ঠেলাঠেলি চললো বিধানসভায়। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলে ছাত্রমৃত্যুর জন্য রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী দোষ চাপালেন রাজ্য সরকারের ওপর। এদিকে আবার, রাজ্যপাল তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য সিভি আনন্দ বোসের ঘাড়ে দায় চাপিয়ে বসলেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু।
মঙ্গলবার বিধানসভার বাদল অধিবেশনে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় দেশ-বিরোধী শক্তির ঘাঁটিতে পরিণত হয়েছে। সেখানে মাদক পাচার হয়, র্যাগিং হয়। ঢিল ছোড়া দূরত্বে থানা হলেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।” পাল্টা জবাব দিয়েছেন ব্রাত্য। তিনি বলেন, “আপনারা মাদক পাচারের কথা বলছেন। এটা দেখার দায়িত্ব নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরোর।” নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরো কেন্দ্রীয় সংস্থা হওয়ায়, ব্রাত্যর মন্তব্যের পরেই বিজেপি বিধায়করা সরব হন। তাঁদের মতে, রাজ্যের হাতেও সংস্থা রয়েছে। তারপর বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করেন বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়।
বিরোধী দলনেতা এদিন আরও বলেন, “বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুর সিসিটিভি লাগানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু তা কার্যকর হয়নি”। এদিন শুভেন্দুর গলায় শোনা যায় প্রাক্তন উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তীর কথা। তিনি বলেন, “প্রাক্তন উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তী সিসিটিভি লাগাতে চেয়েছিলেন বলে আমাকে বলেছেন। কেন তাঁর মেয়াদ শেষের আগে সরানো হল?”
শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এদিন জবাব দিতে গিয়ে বলেন, দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগিং হচ্ছে। এই প্রসঙ্গে ২০০৯-এর সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ, রাঘবন কমিটির রিপোর্টের কথাও উল্লেখ করেন তিনি। তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য, “রাজ্যপাল নিজের ইচ্ছামতো উপাচার্য বসাচ্ছেন। উপাচার্যকে সরিয়ে দেওয়ার পরেই এই ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনার জন্য ১০০ শতাংশ দায়ী রাজ্যপাল।” শিক্ষামন্ত্রীর জবাবি বক্তৃতা চলাকালীন বিজেপি পরিষদীয় দল ওয়াক আউট করে।
শেষ রক্ষা হলো না। দল ছাড়লেন নগরোন্নায়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের জামাই। আজই কংগ্রেসে যোগ দিলেন জামাই ইয়াসির হায়দার। তৃণমূল যুব কংগ্রেসের রাজ্য সম্পাদক ছিলেন ইয়াসির। তৃণমূলে ‘টাইগার’ নামে পরিচিত তিনি। আজ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরীর পাশে বসে জানালেন দল ছাড়ার কারণ।
একুশের বিধানসভা নির্বাচনের পূর্বে বহুবার দলের বিরুদ্ধে সরাসরি বিদ্রোহ ঘোষণা করেন কলকাতার মেয়রের জামাই ইয়াসির। এবার পাকাপাকিভাবে দল ছাড়লেন তিনি। শনিবার সাংবাদিক বৈঠক করে ইয়াসিরের দলে যোগ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। ফিরহাদের মেয়ে প্রিয়দর্শিনীর স্বামী ইয়াসির। সূত্রে খবর, একাধিকবার বিদেশে টাকা পাচার করতেও যান তিনি। সেই কারণে মন্ত্রী-কন্যাকে নোটিসও পাঠায় ইডি।
কংগ্রেসের যোগদান করে এদিন ইয়াসির হায়দার বলেন, “তৃণমূলেই ছিলাম। কিন্তু ওখানে কাজ করার সুযোগ পাইনি। কোনও তোলাবাজিতে ছিলাম না। কেন ২০১৯-এ আমার নাম মোছা হল, আজও বুঝলাম না।” জামাই কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার প্রসঙ্গে ফিরহাদ জানান, “কংগ্রেস দলটাই উঠে যাবে। পরজীবী হয়ে বাঁচা যায় না।”
দীর্ঘদিন ধরেই দলের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছিল ইয়াসিরের। তাঁকে দলীয় পদ থেকে সরিয়েও দেওয়া হয়েছিল। অবশেষে শনিবার প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরীর উপস্থিতিতে তৃণমূল ছেড়ে কংগ্রেসে যোগদান করতে দেখা গেল ইয়াসির হায়দরকে। দলবদলের সময় বিভিন্ন নেতা-মন্ত্রীরা ঠিক যেমন অভিযোগ করে থাকেন, যে প্রাক্তন দলে কাজের সুযোগ পাচ্ছিলেন না তাঁরা। ইয়াসিরের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হলো না।
ইয়াসিরের বক্তব্য অনুযায়ী, তিনি রাজনীতিতে এসেছেন মানুষের সেবা করার জন্য। কিন্তু তৃণমূলে থেকে সেটাই করতে পারছেন না তিনি। তাই কংগ্রেসে যোগদান। আজ ইয়াসিরের হাতে দলীয় পতাকা তুলে দেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। বড়ো তৃণমূল নেতার জামাই দলে যোগ দেওয়ায় অধীরের মুখের হাসি ছিল দেখার মত।
রাজন্যার উপরেই আস্থা মুখ্যমন্ত্রীর মমতার, দেওয়া হল যাদবপুরে ছাত্র ইউনিটের দায়িত্ব
কলকাতা: যাদবপুরের তৃণমূলের নবনিযু্ক্ত সভাপতি হলেন রাজন্যা হালদার। এ বছর ২১ শে জুলাই তৃণমূলর শহিদ দিবসের মঞ্চে উঠে আসা তৃণমূলের এই নতুন মুখের ওপরেই ভরসা রাখলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মৃত্যুর ঘটনার পর তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে স্মারকলিপি জমা দিতে গিয়ে ‘নির্যাতন’-এর মুখে পড়তে হয়েছিল রাজন্যা হালদারকে। এমনকি তাঁর জামাকাপড় ছিঁড়ে দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ উঠেছে। যাদবপুরের মাটি দখলের লড়াইতে নতুন ইউনিটে সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া দেওয়া হয়েছে সোনারপুরের এই তৃণমূল নেত্রীকে। দলীয় সংগঠনের দায়িত্ব পেয়েছেন ঠিকই, কিন্তু ছাত্রমৃত্যুর বিচার তাঁর কাছে সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলেই জানিয়েছেন রাজন্যা হালদার। যাদবপুরকাণ্ডে রাজ্য জুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। আর এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ইউনিট ঘোষণা করেছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশেই শুক্রবার রাতে বৈঠকে বসে তৃণমূল কংগ্রেস। যাদবপুরে কীভাবে ইউনিট তৈরি করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয় দক্ষিণ ২৪ পরগনায় তৃণমূলের সহ-সভাপতি রাজন্যা হালদারকে।
দলীয় সংগঠনের দায়িত্ব পেয়েছেন ঠিকই, কিন্তু ছাত্রমৃত্যুর বিচার রাজন্যার কাছে সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলেই জানিয়েছেন তৃণমূলের যুবনেত্রী। এই বিষয়ে রাজন্যা হালদার জানান, “দল ভরসা রেখেছে, যাদবপুরে বাম ও অতিবাম দৌরাত্ম বন্ধ করতে হবে। ছাত্রের মৃত্যুর বিচার চাই।” বর্তমানে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিটের পর্যবেক্ষক সঞ্জীব প্রামাণিককে চেয়ারপার্সনের দায়িত্ত্ব দেওয়া হয়েছে। রাজন্যার কাঁধে এত বড় দায়িত্ব দেওয়াকে বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।