মহানগর ডেস্কঃ ২০১৪ সালে টেট পাশ করেছিলেন তাঁরা। অথচ ইন্টারভিউ থেকে ফিরে আসতে হয়েছিল এই পরীক্ষার্থীদের। স্কুল শিক্ষকতার চাকরিটা হয়নি তাঁদের। এদিকে সেই টেট পাশ না করেও বহু চাকরি প্রার্থীদের চাকরি মিলে গেছে এ রাজ্যে। এ দৃষ্টান্তও কম নয়। ফলত ২০১৪-র টেট পাশ চাকরিপ্রার্থীদের একটাই দাবি সরাসরি নিয়োগপত্র হাতে দেওয়া হোক।
সেই দাবি নিয়েই সল্টলেকের করুণাময়ীতে দীর্ঘ ৮৪ ঘন্টার আমরণ অনশন বিক্ষোভ। শাসকপক্ষের দাবি ইন্টারভিউতে পাশ না করে চাকরির দাবি অসঙ্গত। সরকারের পক্ষ থেকে সে দাবি মানা কার্যত অসম্ভব।
এদিকে এপিসি ভবনের সামনে বিক্ষভকারীদের ধর্না চলায় যাতায়াতের অসুবিধে হয় প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের কর্মীদের। ব্যস্ত রাস্তায় বিক্ষোভ দেখানোয় যাতায়াতের সমস্যায় পড়েন সাধারণ মানুষজনও। ফলত হাইকোর্টের দ্বারস্থ হতে হয় সরকারকে। বিদ্রোহ দমনে আদালতের নির্দেশ সরকারের পক্ষেই যায়। সেই নির্দেশেই বৃহস্পতিবার মাঝরাতে পুলিশের অভিযান শুরু হয়। অবস্থানরত চাকরিপ্রার্থীদের এক এক করে তোলা হয় প্রিজন ভ্যানে। জোর করে তাঁদের উপর নির্যাতন চালায় পুলিশ এমন অভিযোগই করেছেন বিক্ষোভরত চাকরিপ্রার্থীরা। মাঝরাতে সল্টলেক করুণাময়ীতে চলে আসেন পুলিশের উচ্চপদস্থ আধিকারিকেরা। পুলিশের ধরপাকড়ের মুখে পড়ে বিক্ষোভকারীরা সংবাদ মাধ্যমের সামনে ক্ষোভ উগরে দেন এদিন। এদিন পুলিশের অভিযান তৎপরতা ৮৪ ঘন্টার অবস্থান বিক্ষোভকে মাত্র ১৫ মিনিটে স্তব্ধ করে দেয়।
মাঝরাতে পুলিশ প্রশাসনের এই ধরপাকড়ের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে বিরোধী দল। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর শাসকদলের প্রতি ক্ষোভ উগড়ে জানান, এটা পশ্চিমবঙ্গ না হিটলারের জার্মানি তাই গুলিয়ে ফেলছেন তিনি। এইভাবে প্রতিবাদীদের দিকে পুলিশ প্রশাসনকে লেলিয়ে দেওয়া নিছকই লজ্জাজনক বলে তিনি জানান। অন্যদিকে বিজেপি নেত্রী অগ্নিমিত্রা পাল দাব করেন, টেট পাশ চাকরিপ্রার্থীরা শান্তিপূর্ণ অবস্থান করা সত্ত্বেও তাঁদের দিকে পুলিশকে লেলিয়ে দেওয়া হয়েছে। এমন ঘটনার আড়ালে আসলে মুখ্যমন্ত্রীর ভয় আছে, এমনটাই দাবি তাঁর।
টেট পাশ করেই সরাসরি চাকরির নিয়োগপত্র পাওয়ার দাবি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন অনেকেই। তবে মাঝরাতে বিক্ষভকারীদের উপর এমন নির্যাতন আসলে সরকারের প্রশাসনকে কিনে নেওয়ার নামান্তর বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কয়েকবছর আগেই এই সরকারের পালাবদলের ইতিহাসে নাম জড়িয়েছে সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম আন্দোলনের। সেখানেও কৃষকদের প্রতি পুলিশ প্রশাসনের অকথ্য অত্যাচারের নিদর্শন পেয়েছিল এ রাজ্যবাসী। এবারও সেই স্মৃতিই ফিরল মধ্যরাতের কলকাতা শহরে। তাহলে কি আবারও কোনও পালাবদল আসন্ন? উত্তরটা জানে আগামীই।