মহানগর ডেস্ক: ৩ জুন উত্তরপ্রদেশের কানপুরে (Kanpur) যে সহিংসতা শুরু হয়েছিল, তারপর আজ ছিল জুমার নমাজ। এই সময় কোনও ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। অন্যদিকে জানা গিয়েছে, অল ইন্ডিয়া সুন্নি ওলামা কাউন্সিল সমস্ত ইমামদের কাছে একটি চিঠি লিখেছে। যেখানে তাদেরকে নমাজ পড়ে সোজা বাড়িতে যাওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে। পাশাপাশি একটি বিবৃতি জারি করেছেন মাওলানা হাজি সেলিমও। তিনি গান্ধীবাদী পদ্ধতিতে বিক্ষোভ পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছেন।
মূলত গত সপ্তাহে কানপুরে যে ঘটনা ঘটেছে, তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেখানকার অনেক দোকানপাট। পাশাপাশি ক্ষতি হয়েছে ইয়াতিমখানার জায়গাটিও। জানা গিয়েছে এমনিতে জনসংখ্যার দিক থেকে এলাকাটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ। কিন্তু সেখানে রয়েছে বহু হিন্দুদের দোকানপাট। বর্তমানে সেই সব কিছুর শাটার বন্ধ। এদিন গত সপ্তাহের ঘটনা প্রসঙ্গে এক ব্যাক্তি বলেছেন, ‘এই এলাকায় হিন্দু তেমন নেই। আমাদের এলাকার নাম চন্দ্রেশ্বর। যেখানে কয়েকশো হিন্দু বসবাস করে। বিক্ষোভের সময় ওই এলাকায় টার্গেট করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু শক্তির জোরে রক্ষা পেয়ে গিয়েছে তা’।
আরও পড়ুন: ট্র্যাফিক সিগন্যালকে বুড়ো আঙুল, পুলিশের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ
প্রসঙ্গে সেই ব্যক্তি এক ঐতিহাসিক ঘটনার কথা স্মরণ করেন। তাঁর কথায়, যেখানে সেদিন সংঘর্ষ বাধে সেখানে খুন হয়েছিলেন গণেশ শঙ্কর বিদ্যার্থী। তাঁর বক্তব্য, সুনেহরি মসজিদটি প্যারেড মোড় থেকে মূলগঞ্জ সড়কের মাত্র ৩০০ মিটার দূরে। যার কাছেই ১৯৩১-এ খুন হয়েছিলেন গণেশ শঙ্কর বিদ্যার্থী। পাশাপাশি তিনি আরও বলেন যে, দু-তিন দিন আগেই কানপুরের মেয়র ওই এলাকায় গিয়ে অনেক মন্দিরকে মুসলিমদের কবল থেকে মুক্ত করেছিলেন। সেদিক থেকে ক্ষোভের আরেকটি কারণ এটিও। তাঁর কথায়, ওই এলাকায় থাকা ৩ শতাংশ হিন্দুও ৯৭ শতাংশ মুসলমানের চোখে লাগছে। ১৯৯২ সালে রাম মন্দির এবং ২০০১-এ দিল্লি বিরোধের সময় হিন্দুদের সংখ্যা বেশি ছিল। তখন তাঁরা মুসলিমদের সঙ্গে লড়াই করে জিততে পারত।
আরও পড়ুন: কথা হয়নি সাসপেন্ডেড নেত্রীর কুরুচিকর মন্তব্য প্রসঙ্গে, টুইট মুছল ইরান
চেতন বাজপেয়ী নামের ওই ব্যক্তি বলেছেন, পাকিস্তানে যাওয়া অনেকেই এখানে তাদের সমস্ত সম্পত্তি আত্মীয়দের কাছে হস্তান্তর করে গিয়েছে। এটা দেশের বিরুদ্ধে অনেক বড় ষড়যন্ত্র। তবে দাঙ্গাকারীদের বাজি আসলে উল্টে গিয়েছে যোগীর রাজত্বে। দাঙ্গাকারীরা ভেবেছিল পুলিশ রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সুরক্ষায় ঐদিন ব্যস্ত থাকবে। তাই শহরের ভিতরে কোনও গন্ডগোল করলে অসুবিধা হবে না। কিন্তু সমস্ত পরিকল্পনাই উল্টো পড়ে যায়। তাদের উদ্দেশ্য ছিল শহরের ভেতর হত্যালীলা চালানোর। কিন্তু ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ ফোর্স সঙ্গে সঙ্গে সেখানে পৌঁছলে, তারা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। এমনকি ১৫ মিনিটের মধ্যে পুলিশ কমিশনার ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। যা দাঙ্গাকারীদের ধারনার বাইরে ছিল। বাজপেয়ীর কথায়, যোগী সরকার আগের সরকারের থেকে এই সকল ক্ষেত্রে অনেক বদল এনেছে।
প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার নমাজের আগে নবীকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্যের জেরে হিংসায় জড়িয়ে পড়েছিল দুই পক্ষ। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল একের পর এক দোকান। সম্প্রতি উত্তরপ্রদেশের পুলিশ ৪০ জনের ছবি সহ পোস্টার প্রকাশ্যে এনেছে। যাদেরকে গত সপ্তাহে কানপুরের ঘটনার জন্য অভিযুক্ত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। যে ঘটনায় কমপক্ষে ২০ জন পুলিশ কর্মী সহ আহত হয়েছিলেন ৪০ জন। সিসিটিভিতে ঘটনার বেশ কয়েকটি ভিডিও ফুটেজ দেখে অভিযুক্তদের চিহ্নিত করেছে পুলিশ। এদিন তারই এক অন্য ব্যাখ্যা দিয়েছেন চেতন বাজপেয়ী নামের এক ব্যাক্তি।