Home Bengal “বাড়তি পদ” সৃষ্টি! মমতা মন্ত্রিসভার বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ, হেফাজতেও নিতে পারে সিবিআই: হাই কোর্ট

“বাড়তি পদ” সৃষ্টি! মমতা মন্ত্রিসভার বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ, হেফাজতেও নিতে পারে সিবিআই: হাই কোর্ট

by Mahanagar Desk
206 views

মহানগর ডেস্ক : এসএসসিতে বেআইনি নিয়োগ করতে অনেক অতিরিক্ত পদ বা সুপারনিউমেরিক পদ তৈরি করা হয়েছিল বলে অভিযোগ করছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বিরোধী দলনেতার অভিযোগ, রাজ্য সরকারই সেই অনুমোদন দিয়েছিল। রাজ্য মন্ত্রিসভার সেই বৈঠক হয়েছিল ৫ মে, ২০২২। সোমবার কলকাতা হাই কোর্ট জানিয়েছে, সিবিআই রাজ্য সরকারের সঙ্গে যুক্ত সেই ব্যক্তিদের বিরুদ্ধেও তদন্ত করবে, যাঁরা অতিরিক্ত পদ তৈরির অনুমোদন দিয়েছিলেন এবং প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। প্রয়োজনে ওই ব্যক্তিদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করতে পারবে কেন্দ্রীয় সংস্থা, জানিয়েছে আদালত। এই নিয়ে বালুরঘাটের কুমারগঞ্জের সভা থেকে ওই মন্ত্রিসভার বৈঠকে উপস্থিতদের সিবিআই হেফাজতে যাতে নেয় তার দাবি জানান শুভেন্দু।

এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলার নির্দেশনামায় কলকাতা হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, এই দুর্নীতির প্রকৃতি এবং ব্যাপ্তি জানতে, কারা এর সঙ্গে জড়িত তা বুঝতে সিবিআই তদন্ত আবশ্যিক। অতিরিক্ত পদগুলি তৈরির বিষয়ে আরও তদন্ত করতে হবে সিবিআইকে। এ প্রসঙ্গে আদালতের মন্তব্য, ‘‘রাজ্য সরকারের মন্ত্রিসভাও এসএসসিতে বেআইনি চাকরি রক্ষা করার স্বার্থে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা বিস্ময়কর। এই নিয়োগগুলি প্যানেলের বাইরে এবং প্যানেলের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরে করা হয়েছে, তা জেনেও চাকরি বাঁচাতে চেয়েছেন সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা।’’

এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্ত করতে গিয়ে স্কুল শিক্ষা দফতরের একটি চিঠি হাতে পেয়েছে সিবিআই। যা তারা আদালতে জমা দিয়েছে। সেখানে চিঠির বিষয় হিসাবে বলা হয়েছে, ‘‘ওয়েটিং লিস্টের চাকরিপ্রার্থীদের জন্য বিভিন্ন সরকারি এবং সরকার-পোষিত স্কুলে সহকারী শিক্ষক — কর্মশিক্ষা, শারীরশিক্ষা-সহ এবং অশিক্ষক কর্মীর কিছু ‘সুপারনিউমেরিক পোস্ট’ তৈরির প্রস্তাব।’’ রাজ্য মন্ত্রিসভাকে ওই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।

প্রস্তাবপত্রে নবম-দশমের জন্য ১,৯৩২টি, একাদশ-দ্বাদশের জন্য ২৪৭টি শিক্ষকের অতিরিক্ত পদ তৈরির কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া, গ্রুপ সি-র ১,১০২টি, গ্রুপ ডি-র ১,৯৮০টি অতিরিক্ত পদ এবং শারীরশিক্ষা, কর্মশিক্ষায় মোট ১,৬০০টি অতিরিক্ত পদ তৈরির কথা বলা হয়েছে।

আদালতের নির্দেশ, অতিরিক্ত পদ তৈরি করে বেআইনি ভাবে চাকরি দেওয়ার বিষয়ে রাজ্য সরকারের যে ব্যক্তিরা জড়িত ছিলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্ত চালাবে। তদন্তের স্বার্থে সন্দেহভাজনদের হেফাজতে নিয়েও জিজ্ঞাসাবাদ করবে তারা।

উল্লেখ্য, সিবিআইয়ের তদন্তে উঠে আসা এই নথিতে ২০২২ সালের ৫ মে তারিখ দেওয়া রয়েছে। ২০২১ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার তৃতীয় বার ক্ষমতায় আসার পরেই শিক্ষামন্ত্রীর পদ পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কাছ থেকে গিয়েছিল ব্রাত্য বসুর কাছে। অর্থাৎ, যে সময়ে মন্ত্রিসভার বিরুদ্ধে এই অতিরিক্ত পদের অনুমোদন দেওয়ার অভিযোগ, সেই সময়ে শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন ব্রাত্য বসু। পার্থ ছিলেন শিল্পমন্ত্রী। ২০২২ সালের জুলাই মাসে এসএসসি মামলায় পার্থকে গ্রেফতার করা হয়। ব্রাত্য বসু এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘আমরা যেহেতু রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যাচ্ছি, তাই এ বিষয়ে এখন আমি কিছু বলব না।’’ অন্যদিকে ব্রাত্য বসু এদিন রায়দানের পর বলেছেন, “আমরা চেয়েছিলাম যাদের নিয়োগ বৈধ নয় তাদের সরিয়ে বাকিদের চাকরি সুরক্ষিত হোক। আদালত আজ সেটাই বলেছে।” তাহলে প্রশ্ন, ব্রাত্য বসুরা কেন এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে শীর্ষ আদালতে যাচ্ছে?

সোমবার এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণা করেছে কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শাব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ। ২০১৬ সালের সম্পূর্ণ নিয়োগ প্রক্রিয়াই বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। চাকরি গিয়েছে ২৫,৭৫৩ জনের। আদালত এই সংক্রান্ত তদন্ত চালিয়ে যেতে বলেছে সিবিআইকে। সেই সঙ্গে এসএসসি প্যানেলের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ার পরেও যাঁরা চাকরি পেয়েছেন, চার সপ্তাহের মধ্যে তাঁদের বেতন সুদ-সহ ফেরত দিতে বলা হয়েছে। বছরে ১২ শতাংশ হারে সুদ দিতে হবে ওই চাকরিপ্রাপকদের। লোকসভা নির্বাচনের আগে এসএসসি মামলায় হাই কোর্টের এই রায় রাজ্য সরকারের কাছে বড় ধাক্কা। ইতিমধ্যে স্কুল সার্ভিস কমিশন জানিয়ে দিয়েছে, তারা এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হবে। রায়গঞ্জের সভা থেকে রায়কে ‘বেআইনি’ বলে তোপ দেগেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

সিপিএমের তরফে দাবি করা হয়েছে ২০১৬ সালের যে নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করল কলকাতা হাই কোর্ট, সেই সময় কিন্তু তৃণমূলে সক্রিয় ছিলেন আজকের রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা তথা রাজ্য বিজেপির নেতা, বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী, অথচ আজ সেই শুভেন্দু অধিকারী বিজেপির পক্ষ হয়ে স্পষ্ট দাবি  করে বলছেন, “এই রায়কে স্বাগত জানিয়ে বলব আর কি কোনও প্রমাণের অপেক্ষা আছে তৃণমূল মানে চোর। যারা সুপার নিউমেরিক পোস্ট সৃষ্টি করেছে তাদের সিবিআই হেফাজতে নিতে হবে”, আমাদের প্রশ্ন ২০১৬ সালে আপনার বিবেক কোথায় ছিল শুভেন্দু অধিকারী?

You may also like

Mahanagar bengali news

Copyright (C) Mahanagar24X7 2024 All Rights Reserved