Home Bengal সন্দেশখালিতে জনরোষে প্রাণ নিয়ে লুকিয়ে অজিত, পার্থ বললেন, “দলের কোনও পদে ছিলেন না অজিত”

সন্দেশখালিতে জনরোষে প্রাণ নিয়ে লুকিয়ে অজিত, পার্থ বললেন, “দলের কোনও পদে ছিলেন না অজিত”

by Mahanagar Desk
54 views

মহানগর ডেস্ক: সন্দেশখালির বেড়মজুর গ্রামের ক্ষুব্ধ লাঠি, ঝাঁটা হাতে মহিলাদের ধাওয়া খেয়ে এই অঞ্চলের তৃণমূল অঞ্চল সভাপতি অজিত মাইতি প্রাণ ভয়ে এক ব্যক্তির বাড়িতে লুকিয়ে পড়েছেন।

রবিবার সন্দেশখালির বেড়মজুরে যখন গলায় খোল নিয়ে কীর্তন করে রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক বললেন, “দেখছেন তো মানুষ আনন্দে আছেন।” তখন সেই বেড়মজুরেই তৃণমূলের নেতা অজিত মাইতি গণরোষে লুকিয়ে।

রবিবার বেড়মজুরের মহিলারা পুলিশের কাছে দাবি করেন, “পুলিশ এতো প্রতিশ্রুতি দিতে পারছে কেন শেখ শাহজাহানকে গ্রেফতার করতে পারছে না?”
পুলিশের সঙ্গে গ্রামের মহিলাদের যখন এই নিয়ে বচসা চলছে তখন তৃণমূল নেতা অজিত মাইতিকে তারা দেখতে পেয়ে লাঠি, ঝাঁটা নিয়ে তেড়ে যান। তখন অজিত মাইতি কোনওক্রমে প্রাণ হাতে নিয়ে অন্য এক সিভিক ভলান্টিয়ারের বাড়িতে আশ্রয় নেন এবং সেই বাড়ির গেটে তালা দিয়ে দেন। এদিকে যে বাড়িতে অজিত মাইতি আশ্রয় নিয়েছেন সেই বাড়িতে ঝাঁটা হাতে মহিলারা বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। পুলিশ প্রাণপনে অজিত মাইতিকে বিক্ষুব্ধ মহিলাদের হাত থেকে রক্ষার চেষ্ট করতে থাকে। মহিলারা দাবি করেন, আমরা জানতে চাই কেন অজিত মাইতি আমাদের বাড়ির ছেলেদের নামে মামলা করল? কেন তার অভিযোগে পুলিশ আমাদের ছেলে, স্বামীকে গ্রেফতার করেছে, কে তাদের ছাড়াবে? অজিত মাইতিকে এই মুহূর্তে গ্রেফতার করতে হবে। না হলে অজিত মাইতিকে আমাদের হাতে ছেড়ে দিতে হবে। গ্রামের মহিলারা বলেন, অজিত মাইতি যদি কিছু না করবেন তাহলে লুকিয়ে আছেন কেন?

অজিত মাইতির বক্তব্য, “আমি কোনও অন্যায় করিনি। আমি যদি কোনও জমি নিয়ে থাকি ফিরিয়ে দেবো। আমি তৃণমূলের অঞ্চল সম্পাদক। আমি জমি নিয়ে থাকলে সব ফিরিয়ে দেবো। আমি পার্টির হয়ে কাজ করতাম। শেখ শাহজাহান, শেখ সিরাজের কথায় কাজ করিনি। আমি জমি দখলের বিষয় জানি না, ইদানিং শুনছি, আমার কাছে কোনও অভিযোগ আসেনি। গ্রামবাসীরা আন্দোলন করছে, তাই আমি আতঙ্কে, ভয়ে লুকিয়ে আছি। আমি বলছি আমায় যদি কেউ জানাতো তাদের সমস্যার কথা, আমি সমাধান করতাম। পুলিশের উপর আমার ভরসা আছে, না হলে আমায় মেরে ফেলত। আমি এই দলের সঙ্গে যুক্ত তিন বছর। আমি ২০১৯ সালে বিজেপি করতাম। ২০১৯ সালে যখন এই অঞ্চল তৃণমূলের হাতছাড়া হয়, বিজেপির হাতে ক্ষমতা যায়, তখন তৃণমূল মারধর করে আমায় তৃণমূলে নিয়ে আসে। শ্যাম সর্দার, তাপস আড়ি আমায় মেরে তৃণমূলে আনে। সিরাজউদ্দীন শেখ এখানকার নেতা, সে শেখ শাহজাহানের ভাই। ২০১৯ সালে এই কথা আমি তৃণমূলের নেতাদের জানাইনি এখনও জানাইনি। আমায় যখন মেরে তৃণমূলে আনে তখন শৈখ শাহজাহানের ভাই শেখ সিরাজউদ্দীন শেখ অঞ্চল সভাপতি। আমি তৃণমূলে আসতে চাইনি, আমায় মারধর করে তৃণমূলে নিয়ে আসে। আমি নিজে থেকে কারও জমি নিইনি। যদি জমি নিয়ে থাকি তাহলে ফিরিয়ে দেবো। আমি এখন তৃণমূল করি। শেখ সিরাজউদ্দীনকে সরিয়ে আমায় অঞ্চল সভাপতি করা হয়েছে। দরজা খুলবেন না, সংবাদ মাধ্যম যাবেন না। আমায় পিটিয়ে মেরে ফেলবে। শেখ সিরাজউদ্দীনের সঙ্গে থেকে আমি পচা আলু হয়ে গিয়েছি। আমি অঞ্চল সভাপতির পদ পেয়ে খুশি হইনি। আমি জানি না আমায় এই পদ দিয়েছে। আমি মেয়ের বাড়িতে ছিলাম। আমি আজই পদত্যাগ করবো। আমি ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে বুঝতে পারছি দুর্নীতি হয়েছে।”

এদিকে অজিত মাইতি যার বাড়িতে ঢুকে পড়েছেন, তিনি স্নান করে বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে হিমেল হাওয়ায় কাঁপছেন। পরে পুলিশের বিরাট বাহিনী এসে বাড়ির মালিককে বাড়িতে ঢুকিয়ে দিলেও অজিত মাইতি তখনও সেই বাড়িতে।

এদিকে গ্রামের মহিলারা তখনও বিক্ষোভ দেখিয়ে বলেন, অজিত মাইতিকে আমাদের হাতে ছেড়ে দিতে হবে। পুলিশ গ্রামের মহিলাদের বারবার বোঝাতে চেষ্টা করে আপনারা আইন হাতে তুলে নেবেন না।

এদিকে এই এলাকার পাশেই পার্থ ভৌমিক বলেন, “অজিত মাইতিকে আমরা দলের পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছি। ও কোনও কালেই অঞ্চল সভাপতি ছিল না। যদি কেউ জমি নিয়ে থাকে তার ব্যবস্থা হবে। হলধর দা এবং শক্তি দা কে যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়েছে ওই অঞ্চল তৃণমূলের।” অজিত মাইতি কিন্তু শুরুতে এদিন বলেছেন সিরাজউদ্দীন সভাপতি আমি সম্পাদক ছিলাম।

তবে পার্থ ভৌমিক স্পষ্ট জানিয়ে দেন, “দল অজিত মাইতির পাশে নেই।”

এদিকে সাংবাদিকরা অজিত মাইতিকে বলেন, শনিবার আপনাকে বেড়মজুর অঞ্চলের তৃণমূল সভাপতি করা হয়েছিল, আজ পার্থ ভৌমিক বললেন আপনি কোনওদিন দলের কেউ ছিলেন না। তবে এই প্রশ্নে মুখে কুলুপ এঁটে থাকেন অজিত মাইতি।
এদিকে পুলিশ অজিত মাইতি যার বাড়িতে প্রাণ ভয়ে লুকিয়ে আছেন, সেই বাড়ির কর্তাকে নিমন্ত্রণ বাড়িতে যাওয়ার জন্য সতর্ক ভাবে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। পুলিশ জানায়, তারা জানে না কেন অজিত মাইতি এই বাড়িতে লুকিয়ে আছেন।
ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা শেখ শাহজাহান, শেখ সিরাজউদ্দীনের সহযোগী অজিত মাইতি এখন নিজেই গ্রামের ক্ষুব্ধ মহিলাদের রোষের মুখে ত্রস্ত।

এদিকে ঘটনাস্থলে বিরাট পুকিশ বাহিনী নিয়ে এসপি, ডিএসপি এসেছেন। পাশাপাশি প্রচুর সংখ্যায় গ্রামের মহিলারা বেড়মজুরে জড়ো হয়ে শেখ শাহজাহান, শেখ সিরাজউদ্দীন, অজিত মাইতির গ্রেফতারির দাবি জানাতে থাকেন। পরিস্থিতি পুলিশ নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি, গ্রামের মহিলাদের রোষের মুখে পড়ে প্রাণভয়ে অন্য এক ব্যক্তির বাড়িতে লুকিয়ে আছেন অজিত মাইতি।

You may also like