মহানগর ডেস্ক : আশঙ্কা মিলে গেল। আসানসোলের বিজেপি প্রার্থী এসএস অহলুওয়ালিয়া শনিবার তাঁর নির্বাচনী এলাকায় প্রচারে বেরিয়ে দলের কর্মীদের বিক্ষোভের মুখে পড়েন। তাঁর প্রার্থী হওয়া নিয়ে বঙ্গ বিজেপির একাংশের আপত্তি ছিল। অবশেষে সেই আপত্তি প্রার্থীর উপর ক্ষোভ হয়ে নেমে এলো।
শনিবার আসানসোল লোকসভার অন্তর্গত কুলটি বিধানসভার এলসি মোড় থেকে কেন্দুয়া বাজার হয়ে কুলটি থানার মোড় পর্যন্ত একটি রোড-শো ছিল বিজেপি প্রার্থী অহলুওয়ালিয়ার। সেই রোড-শো কেন্দুয়া বাজারে পৌঁছতেই বেশ কয়েক জন বিজেপি কর্মী-সমর্থক দলীয় পতাকা হাতে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে। এর মধ্যে এক বিক্ষোভকারী জিশান কুরেশির অভিযোগ, বিজেপির একনিষ্ঠ কর্মী হওয়া সত্ত্বেও লোকসভা প্রার্থীর প্রচারে আসার ব্যাপারে তাঁদের কিছু জানানো হয়নি। আর সেই কারণেই তিনি “ব্যথিত”, সেই কথাও তিনি উল্লেখ করেছেন। একই সঙ্গে ওই বিজেপি কর্মীর অভিযোগ, কুলটির বর্তমান বিধায়কের অজয়কুমার পোদ্দারের ছেলে গরু পাচারের সঙ্গে যুক্ত। এই বিজেপি কর্মীর দাবি, এই কারণেই কুলটিবাসীরা এ বার বিজেপিকে ভোট দেবেন না।
এই ঘটনায় শনিবার কেন্দুয়া বাজার এলাকায় প্রবল উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। তবে অহলুওয়ালিয়া বলেন, ‘‘খোদ দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ আমার নাম ঘোষণা করেছেন আসানসোলের বিজেপি প্রার্থী হিসাবে। অথচ এক জন কর্মী যদি তা মেনে না নেন, তো কী করার আছে?’’
এস এস অহলুওয়ালিয়ার রোড-শো শনিবার কেন্দুয়া বাজারে পৌঁছতেই জিশানের নেতৃত্বে দলীয় পতাকা হাতে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন বিজেপির বেশ কিছু কর্মী। তাঁরা বিজেপি বিরেধী স্লোগানও দেন। তবে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেওয়া হয়। এই নিয়ে স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডাতেও জড়িয়ে পড়েন প্রতিবাদী জিশান। জিশানের দাবি, তিনি বিজেপির ছাত্র সংগঠন এবিভিপির নেতা। গত আসানসোল পুরনিগমের বিজেপি প্রার্থী। তিনি অভিযোগ তুলেছেন, বিজেপির সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে যুক্ত থাকলেও অহলুওয়ালিয়ার প্রচারে আসার বিষয়ে তাঁকে কিছুই জানানো হয়নি। জিশান বলেন, ‘‘বিজেপি বিধায়কের ছেলে গরু পাচারের টাকা নেয়। আমার কাছে তার প্রমাণ রয়েছে। সেই গরু পাচারকারীকে সঙ্গে নিয়ে ঘুরছেন লোকসভা প্রার্থী অহলুওয়ালিয়া। আমি বহু দিন ধরে দলের সঙ্গে যুক্ত। ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। অথচ আমাকে জানানো হল না। এই ঘটনায় আমি যথেষ্ট কষ্ট পেয়েছি। আমাকে সরিয়ে দেওয়া হল। আমার কি কোনও সম্মান নেই? এ রকম করলে কুলটির মানুষই বিজেপিকে ভোট দেবে না।’’
এদিকে এই একই দিনেই এস এস অহলুওয়ালিয়ার বিরুদ্ধে প্রচারে শিশুদের ব্যবহার করার অভিযোগ তুলে সরব হয়েছে তৃণমূল নেতৃত্ব। শনিবার অহলুওয়ালিয়ার রোড শো-র যে সব ছবি এবং ভিডিয়ো প্রকাশ্যে এসেছে, তাতে বেশ কিছু নাবালককে বিজেপির পতাকা হাতে অংশ নিতে দেখা গিয়েছে। তৃণমূলের দাবি, শিশুদের ব্যবহার করে নির্বাচন কমিশনের বিধি ভঙ্গ করেছেন বিজেপি প্রার্থী। এই প্রসঙ্গে অহলুওয়ালিয়াকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘‘মোদীজি বিকশিত ভারতের আহ্বায়ক। বিকশিত ভারত নতুন প্রজন্মের জন্য। আর তাই ওই শিশুরা মিছিলে যোগ দিয়েছিল অভিভাবকদের সঙ্গে। তবে এখনও এখানে এই নিয়ে কমিশনের আচরণবিধি জারি হয়নি।’’
এদিকে নির্বাচন ঘোষণার দিনই জাতীয় নির্বাচন কমিশন জানিয়ে দেয়, শিশুদের কোনও ভাবে প্রচারের কাজে ব্যবহার করা যাবে না, এই ঘটনা আদর্শ নির্বাচনী আচরণবিধির পরিপন্থী। তাই এখন প্রশ্ন উঠছে নরেন্দ্র মোদীর বিকশিত ভারতের নতুন প্রজন্ম, শিশু কি তাহলে বিজেপির প্রচারে যোগ দিতে পারবে? নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘিত হবে না?