মহানগর ডেস্কঃ আপনার হাতের স্মার্টফোনটির কারণেই নিজের জীবনে ডেকে আনছেন সর্বনাশ। আপনার ফাইভ জি সেটটির মাইক্রোফোন ব্যবহারের অনুমতি আপনি নিজেই দিচ্ছেন। সর্বনাশ হলেও কিছু করার থাকবে না আর আপনার। না এটা একদমই আপনার মনের ভুল নয়। তবে তিনি অবশ্যই ভুল করবেন যে এখনো সতর্ক নয়।
আমাদের হাতে ধরে থাকা মোবাইলটি সত্যিই আড়ি পাতছে আমাদের সমস্ত কথায়। সেই সব কথা, ইচ্ছে, এবং সর্বপরি নিজেদের গোপন তথ্য সবই শেষ পর্যন্ত চলে যাচ্ছে বিজ্ঞাপনদাতা সংস্থার হাতে। আর তারপর সেই তথ্য ভাঙিয়েই মনের মতো পছন্দসই সামগ্রীর বিজ্ঞাপন দেখতে পাচ্ছেন আপনি।
কিছুদিন আগে কক্স মিডিয়া গ্রুপ(সি এম জি) নামক একটি সংস্থা জানিয়েছেন এক বিবৃতিতে। তারা স্বচ্ছতার সঙ্গে স্বীকার করেছেন এই তথ্য হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনা। সংস্থাটির দাবি তাদের কাছে এমন ক্ষমতা রয়েছে যার উন্নত প্রযুক্তি সাধনে স্মার্ট ফোনের সামনে ঘটে যাওয়া সমস্ত অডিও অ্যাকসেস তাদের হাতের মুঠোয় চলে এসেছে। যেখানে ফোন সামনে রেখে যে সমস্ত কথা বলছেন ব্যবহারকারীরা সেটাও শোনা যাচ্ছে তাদের সিস্টেমে।
এই বিষয়টি সম্ভব হচ্ছে স্মার্টফোনের বিল্ট-ইন মাইক্রোফোনের সহায়তায়। আর এটা শুধু স্মার্টফোনেই নয়। এমনকি স্মার্ট টিভি, স্মার্ট ওয়াচ সহ অন্য নানা ধরনের স্মার্ট গ্যাজেট যা গৃহস্থালীর কাজেও ব্যবহৃত হয়, সবকিছু কাজে লাগায় এই ধরনের সংস্থাগুলি। সংস্থার দাবি, এই ধরনের সক্রিয় শ্রবণ অর্থাৎ অ্যাকটিভ লিসেনিং এর সাহায্যে খুব সহজেই গ্রাহকেরা ঠিক কী জানতে চাই এবং ইউজার ইন্টারেস্ট তাদের খাতায় নথিবদ্ধ হয়ে যায় এবং তারা জানতে পারেন খুব সহজেই। আসলে তারা ওই সময়েই আড়ি পাতেন যখন তারা বুঝতে পারেন যে ব্যবহারকারী খুব সহজে সাধারণ কথাবার্তা বলছেন।
সিএমজির ওয়েবসাইটে গেলে আপনি দেখতে পাবেন একটি নিবন্ধীকরণ। যেখানে প্রকাশিত আছে একাধিক সতর্কবার্তা। ‘কিভাবে ভয়েস ডাটা কাজ করে এবং কিভাবে আপনি এটা আপনার ব্যবসার কাজে লাগতে পারবেন’- এটাই ছিল শিরোনাম। সংস্থাটি জানিয়েছে, একজন টার্গেট ভোক্তার প্রতিদিনের কথোপকথন থেকে যদি তাদের চাহিদার কথা শনাক্ত করা যায় তার থেকে ভাল আর কিছু হতে পারে একজন ব্যবসায়ীর জন্য। তবে এটা কোন ম্যাজিক নয়। এটাকে বলা হয় ভয়েস ডেটা কালেক্ট প্রসেস। সিএমজি জোর গলায় দাবি জানিয়েছে, তাদের কাছে এমন অস্ত্র ভান্ডার রয়েছে যার সাহায্যে যেকোনও ব্যবসাকে সুচারু ভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে।
সিএমজির ওয়েবসাইট অনুসারে:
●আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করে গ্রাহকের মন পড়ে ফেলতে পারলে সেই ডাটা অনুযায়ী স্ট্রিমিং টেলিভিশন, ইউ টিউব, গুগল এবং বিং-এর মাধ্যমে তার বিজ্ঞাপন দেখানো যায়।
●এই বিষয়টা কোনও ভাবেই অপরাধের আওতায় পড়ে বলে মনে করে না সংস্থাটি(সি এম জি)। তাদের দাবি, হ্যান্ড সেট এবং ডিভাইসগুলি থেকে গ্রাহকের কথা শোনা সম্পূর্ণ আইনি৷
●কারণ, সফ্টওয়্যার আপডেট বা অ্যাপ ডাউনলোডের শর্তাবলী গ্রহণ করার সময় আমরা সম্মতি দিয়ে থাকি মাইক্রোফোন ব্যবহার করার।
● আর এমনটা ভাবারও কোনও কারণ নেই যে এই ঘটনা শুধু সিএমজি একাই করছে। এখন নানা সংস্থা এই কাজ করে চলেছেন প্রতিনিয়ত। তবে তদের আইডেন্টিফাই করা এখনো সম্ভব হয়নি।
নিজেকে কিভাবে সুরক্ষিত রাখবেন:
●অনলাইন স্ক্যাম, লিংক জালিয়াতি, ফেক ক্লিক এসবের থেকে বাঁচার জন্য কিছু আধুনিক সফটওয়্যার এসেছে বাজারে।
●আই ফোনে থাকা কোনও অ্যাপ যদি ওই ডিভাইসের মাইক্রোফোন ব্যবহার করে তাহলে আপনার মোবাইলের ফ্রন্ট ক্যামেরার পাশে একটি ছোট সবুজ আলো ব্লিঙ্ক করে।
●কিন্তু এত সাবধানতার পরেও সিএমজির মতো সংস্থাগুলি নিয়মিত ব্যবহারকারীর ফোনে আড়ি পাতছে। আসলে শিক্ষিত সমাজে বাস করলেও।মানুষের অজ্ঞানতার সুযোগটাই নিচ্ছে এইসব সংস্থাগুলি। পরিশেষে, সতর্ক হোন। ফরোয়ার্ড ম্যাসেজ, প্রলোভিত লিঙ্ক, নিউ ইয়ার ধামাকা অফার, যোজনা এসব আপনার সর্বনাশ এর জন্য তৈরি ফাঁদ।