মহানগর ডেস্ক: “অন্যায় ভাবে আমায় গ্রেফতার করা হল। এই অন্যায়ের জবাব দেবে সন্দেশখালির মানুষ। এই অন্যায় মানছি না”, গ্রেফতার হওয়ার পর বাঁশদ্রোণী থানা থেকে সন্দেশখালি রওনা হওয়ার আগে পুলিশের গাড়িতে ওঠার সময় বললেন সন্দেশখালির প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক নিরাপদ সর্দার। তাঁকে বাঁশদ্রোণী থানা থেকে রবিবার দুপুরে সন্দেশখালি নিয়ে যাওয়া হল পুলিশের গাড়ি করে।
এদিকে সিপিএমের তরফে দাবি করা হয়, বেআইনি ভাবে, অন্যায় ভাবে নিরাপদ সর্দারকে পুলিশ গ্রেফতার করা করেছে।
বাঁশদ্রোণী থানার সামনে হাজির হয়ে সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেন, “গ্রেফতার করার কথা ছিল শেখ শাহজাহানকে, অভিষেককে। অথচ যাঁরা সন্দেশখালির মহিলাদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন তাঁদের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুলিশ গ্রেফতার করছে। এর বিরুদ্ধে রাজ্যজুড়ে সব থানায় বিক্ষোভ হবে।” এর আগে সিপিএম রাজ্য দফতরে সাংবাদিক সম্মেলন করে সেলিম বলেন, “বাংলা নিজের মেয়েকে চায় এই স্লোগান দিয়ে ভোটের আগে প্রচার করেছে তৃণমূল। ভোটের পর দেখা যাচ্ছে বাংলার মেয়েদের তৃণমূল নেতারা চায়।” মহম্মদ সেলিম বাঁশদ্রোণী থানায় এসে থানার সামনো থেকে সন্দেশখালির ঘটনা এবং নিরাপদ সর্দারকে আটক করা নিয়ে বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জমানায় দুস্কৃতীদের দাপট চলছে। সন্দেশখালির মতো বাঁশদ্রোণী থানা বুঝে চলছে, তারা আইনের শাসন চায় না তাই এসব চলছে। সন্দেশখালিতে ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়েছে অজিত ডোভালের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী। তৃণমূলের নেতারা মহিলাদের পার্টি অফিসে তুলে নিয়ে শ্লীলতাহানি করছে, সেই শিবু হাজরা, শেখ শাহজাহানকে পুলিশ ধরছে না, ধরছে যারা মহিলাদের পাশে থেকে তাদের নিরাপত্তা দিচ্ছে তাদের। নিরাপদকে না ছাড়লে এখানে বিক্ষোভ হবে। সব থানায় বামফ্রন্টের তরফে বিক্ষোভ হবে।”
নিরাপদ সর্দারের স্ত্রী বাঁশদ্রোণী থানা থেকে এদিন জানান, নিরাপদ সর্দারকে গ্রেফতার করে সন্দেশখালি নিয়ে যাওয়া হবে বলে তাঁকে জানানো হয়েছে। তার কিছুক্ষণের মধ্যেই নিরাপদ সর্দারকে বাঁশদ্রোণী থানা থেকে পুলিশের গাড়িতে করে সন্দেশখালিতে নিয়ে যাওয়া হয়। রবিবার সকাল ১০টা নাগাদ সিপিএমের সন্দেশখালির প্রাক্তন বিধায়ক নিরাপদ সর্দারকে তাঁর বাঁশদ্রোণীর ভাড়া বাড়ি থেকে কোনও ওয়ারেন্ট ছাড়া বাঁশদ্রোণী থানায় তুলে নিয়ে আসে পুলিশ। এই প্রসঙ্গে মহম্মদ সেলিম বলেন, “৭ ফেব্রুয়ারি নিরাপদ সর্দার কলকাতায় সিপিএম রাজ্য দফতরে রাজ্য কমিটির বৈঠকে ছিলেন। ৮ ফেব্রুয়ারি বীরভূমে ছিলেন নিরাপদ সর্দার। অথচ শিবু হাজরা নিরাপদ সর্দারের বিরুদ্ধে এফআইআর করে দাবি করে নিরাপদ ৭ ফেব্রুয়ারি তাঁকে খুন করতে আসে। সম্পূর্ণ মিথ্যে এফআইআর-এর ভিত্তিতে নিরাপদকে বাঁশদ্রোণী থানায় তুলে নিয়ে আসে। নিরাপদকে নিঃশর্তে মুক্তি দিতে হবে। মিথ্যা অভিযোগে নিরাপদ সর্দারকে পুলিশ আটক করেছে।”
এদিকে রাজ্যের মন্ত্রী পার্ঘ ভৌমিক বলেন, “বাস্তবের মাটিতে দাঁড়িয়ে সন্দেশখালির ঘটনায় যাকে পুলিশ জড়িত মনে করবে তাঁকেই গ্রেফতার করবে। তাতে তৃণমূল, সিপিএম, বিজেপি কেউ বাদ যাবে না।”
নিরাপদ সর্দার জানান, “রবিবার আমি যখন সন্দেশখালি যাওয়াার জন্য বাঁশদ্রোণীর বাড়ি থেকে বার হচ্ছি তখন বেশ কয়েকজন পুলিশ এসে আমায় বলে বড়বাবু ডাকছেন। তারপরই আমায় থানায় নিয়ে আসা হয়। এভাবে দেশ চলতে পারে না। এটা অন্যায়।” বাঁশদ্রোণী থানার এদিন দুপুরে পৌঁছন সিপিএম সাংসদ ও আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, “নিরাপদকে কি কারণে গ্রেফতার করেছে সেটা স্পষ্ট নয়। তবে নিরাপদ সন্দেশখালির অত্যাচারিত মানুষ, মহিলাদের পাশে ছিলেন, এটাই তাঁর উপর শাসক তৃণমূলের রাগ, তাই তাঁকে বাড়ি থেকে পুলিশ বাঁশদ্রোণী থানায় তুলে আনে। এটাকে আমরা গ্রেফতারই বলছি। এখন দেখি কি আইনি ব্যবস্থা নেয় তা বুঝে আমরা আইনি ব্যবস্থা নেবো। আসলে রাজ্যের পুলিশের চলা উচিত আইনি পথে সেটা হচ্ছে না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে রাজ্যের পুলিশ চলছে।” থানার সামনে সিপিএম নেতা সুদীপ সেনগুপ্ত, সৃজন ভট্টাচার্য, মধুজা সেনরায়, কৌস্তুভ চট্টোপাধ্যায়, বামপন্থী আইনজীবী ফিরদৌস শামিম সহ বহু সিপিএম নেতাকর্মী থানায় অবরোধ, বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। সিপিএম রাজ্য কমিটির সদস্য সুদীপ সেনগুপ্ত বলেছেন, “আমরা পুলিশের বিরুদ্ধে ১৪৪ ধারা জারি করছি। সন্দেশখালি থানার ওসিকে এখানে ঢুকতে দেবো না। নিঃশর্তে নিরাপদ সর্দারকে মুক্তি দিতে হবে।”
এই বিক্ষোভ প্রসঙ্গে বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, “থানার কাজে বিঘ্ন যাতে না হয় সেভাবেই আমাদের দলের ছাত্র-যুব-মহিলা কর্মীরা তাঁদের কর্মসূচি চালাবেন। আসলে আমরা দেখেছি, এমন বহু ঘটনা যাতে থানায় আনার পর অনেকের মৃত্যু হয়েছে। সেই ঘটনা যাতে ঘটতে না পারে তার জন্যই আমাদের দলীয় কর্মীরা বাঁশদ্রোণী থানায় এসেছেন।” পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সন্দেশখালি থেকে পুলিশের একটি দল বাঁশদ্রোনি থানায় এসেছে। তারা আটক হওয়া সন্দেশখালির প্রাক্তন সিপিআইএম বিধায়ক নিরাপদ সর্দারের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিতে তাঁর সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি জানছেন। এদিকে সিপিএমের তরফে থানার সামনে বিক্ষোভ এবং অবরোধ কর্মসূচি চলছে। তাদের দাবি নিরাপদ সরদারকে থানা থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে তবেই তারা বাঁশদ্রোণী থানার সামনে থেকে সরে যাবে। যদিও থানা থেকে দুপুর পর্যন্ত কোনও অ্যারেস্ট মেমে দেওয়া হয়নি।