মহানগর ডেস্ক: বীরভমের অনুব্রত মণ্ডল গ্রেফতারের পর জেলার কাজল শেখকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জেলার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। পরে আবার তাঁকে মমতা নিজেই সরিয়ে দেন। মমতার পর এবার কাজল শেখের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ করলেন বীরভূলেম বিদায়ী জেলাশাসক বিধান রায়। বিধান রায়ের এই অভিযোগের পর জেলার জোর জল্পনা শুরু হয়েছে।
বীরভূমে নিজের কাজের দায়িত্ব শেষ করে, বুধবারই পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক পদে দায়িত্ব নিয়েছেন বিধান রায়। মঙ্গলবার তাঁর বিদায় সম্বর্ধনার আয়োজন করেছিল তৃণমূল পরিচালিত বীরভূম জেলা পরিষদ। আর সেই অনুষ্ঠানেই জেলা পরিষদের সভাধিপতি কাজল শেখের উপস্থিতিতেই তাঁর সম্পর্কে ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেন বিদায়ী জেলাশাসক। গতকাল বিধান রায় বলেন, “একেবারে সভাধিপতি হিসেবেই এসেছেন আর কী। আমরা সাধারণত বলি যে, একটা উচ্চ অট্টালিকা, সেখানে চারতলা বা পাঁচতলায় পৌঁছতে গেলে, আগে একতলার সিঁড়ি ভেঙে উঠতে হয়। তাহলে তিন চারতলায় ওঠাটা অনেক সহজ হয়ে যায়। কিন্তু ওনার কাছে সেই অবসর ছিল না।’’
প্রসঙ্গত, গত ডিসেম্বরে বোলপুরের এসডিও অফিসে তৎকালীন জেলাশাসক বিধান রায়ের উপস্থিতিতেই বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন জেলার তৃণমূল নেতা কাজল শেখ। এই ঘটনার দু’সপ্তাহের মধ্যে ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য শোনা গেল বীরভূমের বিদায়ী জেলাশাসকের মুখে। তিনি বলেন, “তিনি একেবারে সেই তিনতলা বা চারতলায় উঠেছেন। বোঝার চেষ্টা করছেন, কাজ করার চেষ্টা করছেন। অসম্ভব দৌড়ে বেড়াচ্ছেন। প্রায় প্রত্যেকটি জায়গায় পৌঁছনোর চেষ্টা করছেন। ভীষণ উৎসাহ ওঁর মধ্যে এবং একটা ইচ্ছা আছে কিছু করার, কিছু করে দেখানোর, এটা আমি খেয়াল করেছি।’’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বীরভূম জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকের সময় কাজল শেখকে ওই বৈঠক ছেড়ে উঠে যওয়া নিয়ে ভর্ৎসনা করেন। বলেন, “তুমি এতো বড় নেতা যে বৈঠক থেকে চেয়ার ছেড়ে উঠে যাও। এর পরই বীরভূম জেলার দায়িত্ব থেকে মমতা কাজলকে সরিয়ে দেন।”
মমতার পর বীরভূম জেলার বিদায়ী জেলাশাসকের বক্তব্যে তাৎপর্যপূর্ণ ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। এই ঘটনায় বীরভূম জেলায় শুরু হয়েছে রাজনৈতিক কাজিয়া। বিজেপির বীরভূম সাংগঠনিক জেলার সভাপতি ধ্রুব সাহা বলেন, “আমি বলব, ডিএম সাহেব আপনি অনেক জ্বালাই সহ্য করলেন। আর কোনও কিছুই যখন জেলা পরিষদ করছে না, তখন মনের জ্বালা মনে মিটিয়ে আপনি সুস্থভাবে ভাল জায়গায় গিয়ে থাকুন আর এরা কোনও কিছু শিখবে না। সব জায়গায় শুধু খাব খাব রব। বানর গলায় মুক্তোর মালা পেয়েছে আর এই বানর মুক্তোর মালাকে তছনছই করবে।’’ জেলা তৃণমূলের সহ সভাপতি মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, “দু’জনেই খুব উঁচু জায়গায় আছেন। একজন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে আছেন, একজন জেলা পরিষদে আছেন। প্রায় কম বেশি সমান র্যাঙ্ক। দাদাভাইয়ের সম্পর্ক। সেটা কীভাবে কী বলেছেন, তা নিয়ে আমার ব্যক্তিগত কোনও মত নেই। দলীয়ভাবে এই মন্তব্য করা আমার ঠিক হবে না।’’ তৃণমূলের এই দুই নেতার বক্তব্য থেকে স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে কাজল শেখের মাথার উপর থেকে হাত তুলে নিচ্ছে তৃণমূল নেতৃত্ব।