মহানগর ডেস্ক : “বিজেপি শাসিত ১৭টি রাজ্যে ১৫০০ টাকা করে লক্ষ্মীর ভান্ডার দিয়ে দেখাক, আমি রাজনীতি ছেড়ে দেব। আমি বলছি লক্ষ্মীর ভান্ডার দিতে হবে না, ওটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিচ্ছেন, আপনারা ৫ বছর বিনা পয়সায় দেশের মানুষকে ৫ বছর গ্যাস দেওয়ার কথা ঘোষণা করুক কেন্দ্র, নোটিফিকেশন জারি করুক, আমি এই সভা থেকে বলছি ৪২টি প্রার্থী তুলে নেব”, কুলপির জনসভা থেকে বিজেপিকে এই দুটো বড় চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন তৃণমূলের সেনাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি এদিন আরও বলেন, ৪টি আসনে এখনও বিজেপি প্রার্থী দেয়নি। তার মধ্যে ডায়মন্ড হারবার আছে। আমি বলছি মেঘের আড়াল থেকে মেঘনাদের মতো যুদ্ধ না করে ইডি, সিবিআই, এনআইএ, ইনকাম ট্যাক্স -এর ডিরেক্টরদের ভোটে প্রার্থী করুক, অনেক তো বিজেপির তলপিবাহকের কাজ করেছে এরা, এবার ভোটে দাঁড়াক, দেখি ক্ষমতা।”
অভিষেক এদিন মথুরাপুরের কুলপির জনসভা থেকে দিদি বনাম মোদীর গ্যারিন্টির প্রসঙ্গ তুলে ধরে বিজেপিকে সমালোচনা করেন। অভিষেক বলেন, “নরেন্দ্র মোদী বসিরহাট, কৃষ্ণনগর, তামিলনাড়ুর এক জন করে প্রার্থীকে ফোন করে বলেছেন, তিনি আইনি পরামর্শ নিচ্ছেন, ইডি যে ৩ হাজার কোটি টাকা বাজেয়াপ্ত করেছে তা ফেরত দেব নতুন সরকার গড়ার পর। তার মানে ১৪০ কোটি মানুষকে নরেন্দ্র মোদী ৩ হাজার কোটি টাকা ফেরত দেবেন, মানে তিনি প।প্রত্যেককে ২১ টাকার কিছু বেশি করে দেবেন। ভাবুন মাত্র ২২ টাকা দিয়ে ৫ বছরের জন্য ভোট চাইছেন নরেন্দ্র মোদী। মানুষকে কি ভাবেন তিনি?”
প্রসঙ্গত, নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন বাংলায় ইডি যে ৩ হাজার কোটি টাকা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে, সেই টাকা ফেরত দেওয়ার কথা, অভিষেক মোদীর বক্তব্য থেকে কৌশলে “বাংলা” শব্দটিকে এড়িয়ে নিজের কথা বলেছেন।
লক্ষ্মীর ভান্ডার কে বেশি কে কম দেবেন সেটা বড় কথা নয়। বড় কথা হচ্ছে মানুষের কর্মসংস্থান হবে কি না। শিক্ষা, বাসস্থানের অধিকার সাধারণ মানুষ পাবেন কিনা? সেই প্রশ্ন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, নরেন্দ্র মোদীর এক সুর। শুভেন্দু অধিকারী বলছেন ৩ হাজার টাকা রাজ্যে ক্ষমতায় এলে লক্ষ্মীর ভান্ডার দেবেন, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সেই বক্তব্যকে চ্যালেঞ্জ করে পাল্টা বক্তব্য রাখছেন। বিজেপি-তৃণমূল নেতাদের এই বক্তব্যে একটা বিষয় পরিস্কার হয়ে যাচ্ছে যে স্থায়ী উন্নয়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, বেকার সমস্যা সমাধান এই সব দিকে কারও নজর নেই। রাজ্য ও কেন্দ্রের শাসক দল তাঁদের এই জাতীয় বক্তব্যে বুঝিয়ে দিচ্ছে ভোটের ময়দানে দেশের নাগরিকরা তাঁদের কাছে নিলামের সামগ্রী ছাড়া কিছু নয়। তা না হলে ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদী তাঁর প্রতিশ্রুতি মতো কালো টাকা উদ্ধার করে কারও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা দেন নি, বছরে ২ কোটি বেকারের চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও পূরণ করেনি। অন্যদিকে রাজ্যে ২০১১ সালে শাসন ক্ষমতায় তৃণমূল আসার পর অনেকগুলো বিববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন হয়েছে, অনেক বিনিযোগ প্রস্তাব এসেছে কিন্তু কত শিল্প ২০১১ সালের পর থেকে বাংলায় হয়েছে সেই হিসাব বিরোধীরা চাইলেও রাজ্যের শাসক দল দেয়নি।
তাই এই ধরনের ভোট প্রচারের বক্তব্য শুনে মনে হচ্ছে বিজেপি এবং তৃণমূল নিজেদের প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ হয়ে পরস্পর পরস্পরকে গালমন্দ করছে। এই রাজনীতি কি বাংলা তথা ভারতকে সমৃদ্ধ করবে? এই প্রশ্নের উত্তরে যাদবপুরের সিপিএম প্রার্থী সৃজন ভট্টাচার্য বলেছেন, “আমরা যেখানে নির্বাচনে রুটি-রুজি-রুচির স্লোগান দিচ্ছি সেখানে মানুষের দৈনদিন সমস্যা থেকে নজর ঘোরাতে বিজেপি এবং তৃণমূল উপঢৌকনের রাজনীতি করছে। এটা কোনও রাজনীতি নয় ছ্যাবলামো।”