মহানগর ডেস্ক : কলকাতায় বাড়ি ভেঙে ফের বিপর্যয়। গার্ডেনরিচে বহুতল ভেঙে পড়ার ১৫ দিনের মাথায় আবার বাড়ি ভেঙে পড়ল কলকাতায়। এ বারের ঘটনাস্থল উত্তর কলকাতার বৌবাজার। মঙ্গলবার সকালে বৌবাজারের রামকানাই অধিকারী লেনের একটি পুরনো বাড়ির দেওয়াল সমেত ঘরের একাংশ আচমকা হুরমুড় করে ভেঙে পড়ে। ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির ক্ষুব্ধ বাসিন্দাদের অভিযোগ, নিয়ম না মেনে পাশের বাড়ির প্রোমোটারির জন্যই মূল্য দিতে হল তাঁদের। এমন কি স্থানীয় কাউন্সিলর বিশ্বরূপ দেকেও ডেকে পাওয়া যায় না বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
উত্তর কলকাতার বৌবাজারে বাড়ি ভেঙে পড়ার পর এলাকার মানুষদের অভিযোগ, পুরনো ওই বাড়ির লাগোয়া বাড়িতে প্রোমোটারির কাজ চলছিল। ভাঙা হচ্ছিল সেই বাড়িটি। কাজ চলাকালীনই মিস্ত্রীরা তাঁদের বাড়ির দেওয়ালেও আঘাত করেন। তাতেই দেওয়াল সমেত ঘর হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে।
ওই বাড়ির বাসিন্দা এক মহিলা জানিয়েছেন, ঘটনাটি যখন ঘটে তখন তিনি রান্না করছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘হঠাৎই থরথর করে কেঁপে ওঠে গোটা বাড়ি। দেখি গ্যাসের আগুনও দপ দপ করে নিভে গেল। তার পরেই বিকট শব্দ।’’ ওই মহিলাই জানিয়েছেন, তিনি এই ঘটনার কিছু ক্ষণ আগেই মিস্ত্রীদের সতর্ক করে বলেছিলেন,তাঁদের বাড়ির দেওয়াল বাঁচিয়ে সাবধানে কাজ করতে। তিনি আরও বলেন, ‘‘ওদের বলেছিলাম, পুরনো বাড়ি টানাটানি করবে না। তার পরও শোনেনি। আওয়াজ পেয়ে দৌড়ে গিয়ে দেখি। ঘর ভেঙে পড়েছে।’’
মঙ্গলবার সকালে এই ঘটনার কিছু ক্ষণের মধ্যেই এলাকায় ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছে যায়। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বাড়িটি ভেঙে পড়লেও কেউ আহত হননি। তবে কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সূত্রের খবর, ভেঙে পড়া বাড়িটি বহু পুরনো আমলের। যদিও বাসিন্দাদের দাবি, পুরনো হলেও এই বাড়ি নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। তাই বাড়িটি ভঙ্গুর ছিল না। বাড়ির পাশে নিয়ম না মেনে বাড়ি ভাঙার কাজ চলছে তার ফলেই তাঁদের বাড়ি ভেঙে এই ঘটনা ঘটেছে।
এমনকি, বাসিন্দারা এমনও জানিয়েছেন বিষয়টি তাঁরা বারবার স্থানীয় কাউন্সিলরকে জানিয়েছেন। কিন্তু তার পরও বাড়ি ভাঙার ব্যাপারে কোনও সাবধানতা অবলম্বর করা হয়নি।
এদিকে এই অভিযোগ পেয়ে স্থানীয় কাউন্সিলর বিশ্বরূপ দে অভিযোগকারীর বাড়ি পৌঁছে গিয়ে বলেন, “আমি সপ্তাহে দু’দিন এই এলাকায় আসি। আমায় পাওয়া য়ায় না এটা ঠিক নয়। আপনি যদি আমায় আরও দেখতে চান সেটা ভালো কথা।”
এদিকে ঘটনাস্থলে সদ্য তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়া উত্তর কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী তাপস রায় পৌঁছে যান। তাপসবাবু বলেন, “আমি এই এলাকায় এক সময় কাউন্সিলর ছিলাম। সব প্রোমোটার নয় কিছু কিছু খারাপ কাজ করছে। কেন কলকাতা পুরসভা এসব জানবে না? জানলেও কেন ব্যবস্থা নেবে না? বামফ্রন্টের উপর দোষ চাপিয়ে হবে? ১৯ বছরতো কলকাতা পুরসভা তৃণমূলের হাতে, কি করেছে এতদিন?”
এদিন ঘটনার পর ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান এলাকার তৃণমূল কাউন্সিল বিশ্বরূপ দে। তিনি বলেন, ‘‘বাড়ি বানানোর অনেক নিয়ম আছে। কিন্তু বাড়ি ভাঙার কিছু নিয়ম আছে কি? বৌবাজারের ওই এলাকার বাড়িটি ভেঙে একটি চারতলা বাড়ি তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছিল। আমি সেই বিষয়ে জানেতেনও। কাজ শুরু হওয়ার পর এলাকার মানুষ আমার কাছে অভিযোগ জানায়। আমি আমার দায়িত্বের বাইরে গিয়ে প্রোমোটার এবং বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলি। বৈঠকও করি। কিন্তু বাড়ি ভাঙার ক্ষেত্রে কোন নিয়ম মানা হয়নি, তা জানতে হবে। আপাতত আমি বিষয়টি পুরসভা কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছে। তাঁরা গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন। যাঁদের বাড়ি ভেঙেছে তাঁদের দিকটিও খতিয়ে দেখা হবে।’’
তবে একটা করে ঘটনা ঘটবে আর স্থানীয় কাউন্সিলর, পুরসভা তখন নড়েচড়ে বসবে এটাই বা কেমন কথা? এই বিষয় নিয়ে মুখ খুলে তাপস রায় বলেছেন, “ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করব এরকম ঘটনা যাতে আর না ঘটে। এখানে কোনও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি সেটাই বড় কথা। কিন্তু কেন কলকাতা পুরসভা, স্থানীয় কাউন্সিলর এসব দিকে নজর দেবে না? কেন একটার পর একটা ঘটনা ঘটবে আর তার পর পুরসভা, স্থানীয় কাউন্সিলর বলবেন আমরা এসব জানতাম না! তাহলে জানবে কে?”