মহানগর ডেস্ক : বাংলায় বিজেপিকে “লাইম লাইট”-এ এনেছেন দিলীপ ঘোষ, এটা অস্বীকার করার কোনও উপায় নেই। দিলীপ ঘোষ যখন বিজেপির রাজ্য সভাপতি তখনই ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে ১৮টি সাংসদ বাংলা থেকে নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহকে উপহার দিয়েছেন। বাংলার রাজনীতিতে মমতা বিরোধী ঝড় তুলেছেন তিনি। তাঁর নেতৃত্বেই বঙ্গ বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন তৃণমূলের ডাকসাইটে নেতা, একাধীক দফতরের মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। সেই দিলীপ ঘোষকে এবার মেদিনীপুরের থেকে সরিয়ে বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থী করা হয়েছে। লোকসভা বদল উপরে উপরে মেনে নিলেও মন থেকে যে দিলীপ ঘোষ মেনে নিতে পারেননি সেটা তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থী হিসাবে পা রেখেই। দিলীপ ঘোষ স্পষ্ট ভাষায়, তাঁর স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে বলেছেন, “গোটা বাংলায় চাষ করেছি, সেই জন্যই ফুল ফুটেছে। অনেকে জিততে পারেন না, অনেকে জেতেন, অনেকে নিজে জিতে অন্যকে জেতান। দল যা বলবে সেটাই শেষ কথা। আমি দলের সৈনিক। এক সময় দলে বিতর্ক চলছিল। আমি তখন বলেছিলাম, আমাকে সরিয়ে দিলে দলের যদি ভালো হয় সেটা দল করুক। এ কথা বলার মতো কম মানুষই আছেন।”
দিলীপ ঘোষের এই মন্তব্যেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে দল তাঁকে মেদিনীপুর থেকে সরিয়ে বর্ধমান-দুর্গাপুরে প্রার্থী করায় তিনি মোটেই সন্তুষ্ট নয়। তবে তিনি দলের এই সময়কার বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্বের উপর ক্ষুব্ধ হলেও তা প্রকাশে মার্জি ভাব রেখেছেন, কেননা তিনি বর্তমান বিজেপি নেতা, বিদায়ী সাংসদ হলেও আসলে তিনি একনজ সংঘসেবক, শৃঙ্খলাবদ্ধ সংঘকর্মী। কেন্দ্রে বিজেপির শক্তিদ্বারা প্রভাবিত হয়ে, অন্যদল ছেড়ে, মুখে বড় বড় বুলি দিয়ে, ছেড়ে আসা দলকে গালাগাল দিয়ে এখনকার বঙ্গ বিজেপির কিছু দলবদলু উঠতি নেতার মতো নেতা তিনি নয়। তিনি আজ দেশে বিজেপির শক্তিবৃদ্ধিতে বাংলার সহায়তা ও শক্তি প্রদানের অন্যতক কারিগরি। তবে রাজনীতিতে পিছন থেকে ছুড়ি মারা, চটকদারি রাজনীতি করে বাজার দখল করার দৌড়ে দিলীপ ঘোষ হয়তো এখনকার বঙ্গ বিজেপি কিছু নেতার চাইতে পিছিয়ে। তবে তিনি এই মুহূর্তে দলে অনেকটাই কোনঠাসা। তাই হয়তো সর্বদা শুভেন্দু অধিকারীর পাশে থাকা অগ্নিমিত্রা পাল, দিলীপ ঘোষের তৈরী করে দেওয়া মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রের মাটিতে প্রার্থী হলেন। আর দিল্লির যে বৈঠকে দিলীপ ঘোষকে মেদিনীপুরে প্রার্থী না করে অগ্নিমিত্রাকে প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হল, সেই গভীর রাত পর্যন্ত চলা দিল্লির বিজেপি নেতাদের বৈঠকে কৌশলে অনুপস্থিত রইলেন শুভেন্দু? এই প্রশ্নও কিন্তু বঙ্গ বিজেপির দিলীপ ঘনিষ্ঠরা তুলছেন! তবে দিলীপ ঘোষ বলেছেন, “দলের মনে হয়েছে বর্ধমান-দুর্গাপুর আসনটি শক্ত, তাই আমায় পাঠিয়েছে। দলের বিশ্বাসকে রক্ষা করার দায়িত্ব আমার”।
গত ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে আড়াই হাজারেরও কম ভোটে জয়ী হন বিজেপির সুরেন্দ্র সিংহ আলুওয়ালিয়া। কিন্তু গত ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে এই লোকসভার অন্তর্গত সাতটি বিধানসভা আসনের মধ্যে ৬টি আসনেই তৃণমূল এগিয়ে ছিল। তাই শেষ বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলের নিরিখে দলের এখনও অবধি সেরা বঙ্গ বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষকে কিন্তু কঠিন কেন্দ্রেই লড়তে পাঠাল তাঁর দল বিজেপি! বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রে এবার দিলীপ ঘোষের সঙ্গে লড়াই হবে এক সময়কার বিজেপি সাংসদ, বর্তমানে তৃণমূল প্রার্থী ও প্রাক্তন ক্রিকেটার কীর্তি আজাদের। এই আসনে সিপিএম প্রার্থী সুকৃতী ঘোষাল। তবে দিলীপ ঘোষ কখনও নির্বাচনী যুদ্ধে প্রার্থী হয়ে পরাজিত হননি, তিনি তাঁর কথায় এবারও বুঝিয়ে দিয়েছেন, জয় ছিনিয়ে নিতে তিনি প্রস্তুত, বাকিটা জানা যাবে ৪ জুন, নির্বাচনের ফল প্রকাশের দিন। দোলের দিন থেকেই তিনি তাঁর কেন্দ্রে প্রচারে নেমেছেন। দামোদরে সন্ধা আরতী করেছেন বড় প্রদীপ হাতে নিয়ে। সকালে বর্ধমানের শক্তিগড়ে শক্তি প্রদর্শন করেছেন, দলের কর্মীদের সংবর্ধনা নিয়েছেন, বিভিন্ন মন্দিরে পুজো দিয়েছেন, জনসংযোগ করেছেন।