মহানগর ডেস্ক : কৃষ্ণনগর থেকে মহুয়া মৈত্রর সমর্থনে রবিবার প্রথম ভোট প্রচার শুরু করে মমতা বললেন, “বাংলা থেকে এবং দেশ থেকে বিজেপিকে হঠাবো। অন্নপূর্ণা পুজোর নবমীর দিন ওরা দাঙ্গা করতে চাইবে। কেউ প্ররোচনায় পা দেবেন না। কংগ্রেস-সিপিএম যদি বলে তারা ইন্ডিয়া জোটের দল, ভোট চায়, মানবেন না। বলবেন, ইন্ডিয়া জোটের নাম দিয়েছি আমি, তৃণমূলের বিরুদ্ধে বাংলায় ওরা লড়ছে।”
<span;>মমতা এদিন বিজেপি,কংগ্রেস,সিপিএমকে একযোগে কৃষ্ণনগরের ধুবুলিয়ার সভা থেকে আক্রমণ করে বলেন, “সিএএ তে আবেদননকরবেন না। সিএএ-র পিছনে এনআরসি আছে। মনে রাখবেন মোদীর গ্যারিন্টি জিরো, তৃণমূলের গ্যারান্টি হিরো।” মমতা এদিন বলেন, “অল ইন্ডিয়ায় ইন্ডিয়া জোটের নাম আমি দিয়েছি। ভোটের পর বুঝে নেব। আমিবএকা লড়ছি। একলা। শুনছি সিপিএম-কংগ্রেস একজোট হয়ে লড়ছে। এখানে তো ইন্ডিয়া জোটের অ্যালায়েন্সই হয়নি। কেন সিপিএম, কংগ্রেসকে ভোট দেবেন? ওরা তো বিজেপির হাত শক্ত করছে, কংগ্রেস, সিপিএম,আইএসএফকে ভোট দেওয়া মানে বিজেপিকে ভোট দেওয়া, এখানে যেটা হয়েছে সেটা ঘোট”, ঠিক এই ভাবেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কৃষ্ণনগরে মহুয়া মৈত্রর কেন্দ্রে প্রথম নির্বাচনী প্রচার শুরু করলেন।”
মমতা এদিন বলেন, “বিজেপি বলছে ৪০০-র বেশি আসন পাবে, তাহলে কেন ইডি? কেন সিবিআই? কেউ কোনওদিন শুনেছেন যার বিয়ে সেই পুরোহিত? মনে রাখবেন বিজেপি বাংলায় গো হারা হারবে। এখানে একটাও সিট পাবে না।” মমতা এদিন বলেন, “২ কোটি ১৩ লক্ষ মহিলা সারা জীবন লক্ষ্মীর ভান্ডার, স্বাস্থ্যসাথী, কন্যাশ্রী, ঐক্যশ্রী, মেধাশ্রী পাবেন, কেউ আটকাতে পারবে না।” সিএএ প্রসঙ্গ উল্লেখ করে মমতা বলেন, “সিএএ হল মাথা আর লেজটা হচ্ছে এনআরসি। দেখবেন সেই কারণে বিজেপির কোনও প্রার্থী সিএএ-তে আবেদন করেনি।” মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন বিজেপিকে দাঙ্গাবাজ দল বলে বিঁধে বিজেপির সাগরেদ হিসেবে কংগ্রেস, সিপিএমকে সমালেচনা করে বলেন, “এদের ভোট দেবেন? ১২ বছর দেখেছেন মিথ্যে ছাড়া কিছু হয়নি। মহুয়াকে হারানো ওদের লক্ষ্য, কারণ মহুয়া সংসদে জোরে কথা বলে, তাই তাঁকে সংসদ থেকে তাড়িয়েছে। যদি লক্ষ্মীর ভান্ডার, কন্যাশ্রী সহ সব পেতে চান তাহলে তৃণমূলকে ভোট দিন। না হলে সব হারাবেন।”
বিজেপি ভোটের আগে বাড়ি দেওয়ার টোপ দিচ্ছে বলে সাধারণ মানুষকে, এই টোপে পা দিলে যে তালিকায় নাম আছে সেটাও কেটে যাবে বলে মমতা অভিযোগ করেন। ১০০ দিনের কাজের টাকা ৫৯ লক্ষ জবকার্ড হোল্ডারকে দিয়েছি। সমুদ্রে যারা মাছ ধরতে যায় তাদের আর্থিক সাহায্য দিচ্ছি। ছেলেমেয়েরা শিক্ষিত হচ্ছে। নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন বছরে ২ কোটি লোককে চাকরি দেবে দেয়নি। মিথ্যা কথা ছাড়া কিচ্ছু করেনি। কাউকে কাউকে ফোন করে তা বাজারে ছেড়ে দিচ্ছেন, সেটা পেগাসাসের মতো ভাইরাস হচ্ছে। বৃটিশদের বিরুদ্ধে সিরাজদৌলার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন মোদীবাবু। আর একজন বলছেন রাজমাতা। এখানে কেউ রাজা নেই, সবাই প্রজা। মিথ্যা কথা বলে মানুষের কাছে ক্ষমা পাবেন না।”
তপসিলি সম্প্রদায়ের প্রতি মমতা বলেন, “আপনাদের সম্পর্কে আমি শুনি আপনার ওদের মিথ্যায় বিশ্বাস করেন। বড়মার মন্দির কে সাজিয়ে দিয়েছে? চাকলার লোকনাথ মন্দির, অনুকূল ঠাকুরের মন্দির কে করেছে? আমরা করেছি। ইদ, দুর্গাপুজো,কালীপুজো,করমপুজোতে ছুটি দিই। তারপরেও কেউ যদি সিএএ নিয়ে কথা বলে তাহলে এতোদিন করেনি কেন? সিএএ তে আবেদন করলে আপনার সব অধিকার কেটে যাবে। কেউ আবেদন করবেন না। আগে বিজেপি নেতারা করুক।” ডানকুনি-কল্যাণী, ডানকুনি-বর্ধমান ইন্ডাস্ট্রিয়াল করিডোর তৈরি হচ্ছে বলে মমতা দাবি করপন। তিনি বলেন, “১০০ দিনের কাজ কেন্দ্র বন্ধ করে দিলে আমরা সেটা করাব। ৫০ দিনের কাজ দেব। এই প্রকল্পের নাম কর্মশ্রী। ২৮ লক্ষ শ্রমিক বাইড়ে থাকে। কদিন আগে ওড়িশা থেকে ২০/২২ জনকে নিয়ে এলাম, ওদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছিল।”
মমতা এরপর সভায় সমবেত জনতার প্রতি প্রশ্ন করেন, “ভরসা আছে, বিশ্বাস আছে?” জনতা উত্তর দেয় আছে। মমতা বলেন, “দেশ আজ ভালো নেই। কি করে ভালো থাকবে? আমার ভোট ম্যানেজারদের ভোটের আগে কেন এনআইএ নোটিশ দিয়ে ধরা হচ্ছে? আপনারা নাকি ৪০০ আসন পাবেন? একটা কংগ্রেস, সিপিএম-এর গায়ে তো হাত পড়েনি!অরবিন্দকে গ্রেফতার করে কিছু করতে পেরেছেন? তাঁর কাজ হচ্ছে। জনতার গর্জন, বিজেপির বিসর্জন। খেলা হবে। জয় বাংলা।” মমতা এদিনের সভা থেকে তাঁর নিজস্ব ভঙ্গিতে বিজেপিকে একভাবে, সিপিএম, কংগ্রেসকে অন্যভাবে আক্রমণ করেন, বলেন,”বাংলা সর্বধর্ম সমন্বয়ের জায়গা, কারও গায়ে হাত দিতে দেব না। সবাই মিলে ভালো থাকতে হলে, সব স্কিম পেতে হলে দেশ থেকে এবং বাংলা থেকে বিজেপিকে হঠাতে হবে। বিজেপি যাবে, তৃণমূল থাকবে। এবার বলছে এবার ৪০০ পার, আমি বলি আগে ২০০ পার হ।” মমতা এদিন সভা থেকে বলেন, “অন্নপূর্ণা পুজোর নবমীর দিন দাঙ্গা করার চেষ্টা করবে। কেউ প্ররোচনায় পা দেবেন না। বাংলা থেকে বিজেপি, কংগ্রেস, সিপিএমকে বিসর্জন দেব।”